নয়াদিল্লি, ২৬ ফেব্রুয়ারি (পিটিআই): আজ ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ল। প্রকাশিত হল নির্ঘণ্ট। দিল্লির বিজ্ঞান ভবন থেকে বিকেল সাড়ে ৪টের সময় সাংবাদিক বৈঠক শুরু করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। জানান, এবার করোনা পরিস্থিতিতে ভোট হচ্ছে। কাজেই ভোটারদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখা হচ্ছে। ভোটের সময় কোভিড বিধি মেনেই কাজ হবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু, অসম ও পুদুচেরির ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষিত করা হচ্ছে। ৫ রাজ্যে মোট ৮২৪ আসনে নির্বাচন। বাংলা সহ পাঁচ রাজ্যের মোট ভোটার এবারে ১৮.৬৮ কোটি। এবার বাংলায় বুথের সংখ্যা ১,০১,৯১৬। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যা ছিল ৭৭,৪১৩। অর্থাৎ এই বছর প্রায় ৩১ শতাংশ বুথ বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেকে কেন্দ্রে বুথ রাখতে হবে একতলায়। এবার ভোটদানের জন্য এক ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষের পর সমস্ত ভোট কর্মীকে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। নির্ঘণ্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই আজ থেকেই জারি হয়ে গেল আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধি। ইতিমধ্যেই রাজ্যের সব জেলাশাসক ও এসপিকে নির্দেশ পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এইসময় থেকে রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি মনিটারিং করা হবে। এদিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা জানান, অনলাইনের মাধ্যমেও মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। তবে মনোনয়ন জমা দিতে এলে প্রার্থীর সঙ্গে মাত্র দুজন আসতে পারবেন। সর্বোচ্চ পাঁচ জন বাড়ি বাড়ি প্রচারে যেতে পারেন। রোড শোয়ের ক্ষেত্রে পাঁচটি গাড়ির বেশি হলে অনুমতি মিলবে না। প্রচারের জন্য কোন মাঠ ফাঁকা রাখা হবে তার তালিকাও তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার। বোর্ড পরীক্ষার কথাও মাথায় রাখা হয়েছে। নির্বাতচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বোর্ড পরীক্ষার দিন কোথাও নির্বাচন হবে না। বাংলার নির্বাচনের দায়িত্বে থাকছেন দুজন পুলিস অবজার্ভার। তারা হলেন মৃণালকান্তি দাস এবং অশোক দুবে। পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকবেন অজয় নায়েক। অন্যদিকে, বিশেষ আয়-ব্যয় পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে বি মুরলীকুমারকে। মুখ্যনির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে ৮ দফায় ভোট হবে। আসুন জেনে নি রাজ্যে কবে কোথায় ভোট-
২৭ মার্চ প্রথম দফায় রাজ্যে ৩০টি আসনে নির্বাচন হবে। সেদিন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া-১, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর-১, এবং পূর্ব মেদিনীপুর-১ এ নির্বাচন হবে।
১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ৩০টি আসনে ভোট হবে। সেদিন বাঁকুড়া-২, পশ্চিম মেদিনীপুর-২, পূর্ব মেদিনীপুর-২, দক্ষিণ ২৪ পরগনা– ১ এ নির্বাচন হবে।
৬ এপ্রিল তৃতীয় দফার ভোট হবে ৩১টি আসনে হবে। সেদিন হাওড়া- ১, হুগলি- ১, দক্ষিণ ২৪ পরগনা- ২ এ নির্বাচন হবে।
১০ এপ্রিল চতুর্থ দফায় ৪৪টি আসনে ভোট হবে। সেদিন হাওড়া-২, হুগলি-২, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-৩, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে নির্বাচন হবে।
১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফার ৪৫টি আসনে হবে। সেদিন উত্তর ২৪ পরগনা- ১, নদীয়া- ১, পূর্ব বর্ধমান-১ , দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়িতে ভোট হবে।
২২ এপ্রিল ষষ্ঠ দফায় ৪৩টি আসনে হবে। সেদিন উত্তর ২৪ পরগনা-২, নদীয়া-২, পূর্ব বর্ধমান-২ , উত্তর দিনাজপুরে ভোট হবে।
২৬ এপ্রিল সপ্তম দফায় ৩৬টি আসনে ভোট হবে। সেদিন নির্বাচন হবে মালদহ-১, মুর্শিদাবাদ-১, পশ্চিম বর্ধমান, দক্ষিণ কলকাতা, দক্ষিণ দিনাজপুরে।
২৯ এপ্রিল অষ্টম দফায় ৩৫টি আসনে ভোট হবে। সেদিন নির্বাচন হবে মালদহ-২, মুর্শিদাবাদ-২, কলকাতা উত্তর, বীরভূমে।
অন্যদিকে, কেরলে ১৪০ আসনে, পুদুচেরিতে ৩০ আসনে, অসমে ১২৬ আসনে এবং তামিলনাড়ুতে ২৩৪ আসনে ভোট হবে। অসমে তিনদফায় নির্বাচন হবে। ২৭ মার্চ, ১ এপ্রিল, ৬ এপ্রিল হবে ভোট। কেরলে এক দফায় হবে নির্বাচন। ভোটগ্রহণের দিন ৬ এপ্রিল। তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরিতেও ভোট হবে ৬ এপ্রিল। সমস্ত রাজ্যে ভোট গণনার ফল প্রকাশ হবে ২ মে। অন্যদিকে, বাংলায় আট দফার ভোট হবে এই ঘোষণার পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, বাংলাকে অসম্মানের উত্তর দেবে মানুষ। তাঁর অভিযোগ, এজেন্সির অপব্যবহার করছে বিজেপি। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কাকে সুবিধা দিতে আট দফায় ভোট করা হচ্ছে? বলেন, জেলাগুলিতে ভাগ করে পার্ট ওয়ান-টু করা হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূলের জোর বেশি। তাই সেখানে তিন দফায় ভোট করা হচ্ছে! এগুলি কী নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের নির্দেশে হয়েছে? কিন্তু এরপরেও বলছি, খেলা হবে। হারিয়ে ভূত করে দেব। দেশ ভাঙা হচ্ছে। মনে রাখবেন আমি কিন্তু বাংলাকে ভালো জানি। আপনাদের এই চক্রান্ত আমি ভেঙে দেব।