উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
গত সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ সিবিআইয়ের কলকাতা শাখার অ্যান্টি করাপশন ব্রাঞ্চ গোরু পাচারের মামলায় এফআইআর (আরসি০১২০২০/এ০০১৯) দায়ের করে। তাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট সতীশ কুমার, তাঁর ছেলে ভুবন ভাস্কর এবং এনামুল হক ও তার দুই শাগরেদ আনারুল শেখ, মহম্মদ গোলাম মুস্তাফার নাম ছিল। অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ ও মালদহ সীমান্তে ধরা পড়া বড় গোরু বাজেয়াপ্ত না দেখিয়ে সেগুলি ফের এনামুলের কাছে পাঠানো হতো। এই কাজে তাকে সাহায্য করেছেন ওই বিএসএফ আধিকারিক। কাস্টমসের কয়েকজন অফিসারও জড়িত ছিল এই চক্রে। সিবিআই জানিয়েছে, বাজেয়াপ্ত হওয়ার পর বিএসএফ এবং কাস্টমস কর্তাদের ‘মুঠো গরম’ করে ওই সমস্ত গোরুই ফের বাংলাদেশে পাচার করত এনামুলের সিন্ডিকেট। গোরু পাচার করে বিপুল পরিমাণ টাকা বানিয়েছিল মুর্শিদাবাদের এই ব্যবসায়ী। সেই টাকাই আবার নানা বেনামি ও ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়েছে হাওলা কারবারে।
সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে, গোরু পাচারের টাকায় যে সমস্ত ভুয়ো কোম্পানি খোলা হয়েছিল, তা খুলতে সাহায্য করেছিল এনামুলের ঘনিষ্ঠ দুই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। বৃহস্পতিবার এহেন দুই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু কাগজ উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে দেখা যায়, এই সব শেল কোম্পানির মালিক বকলমে এনামুল হক। তার আত্মীয়, চাকর-বাকর ও অফিস পিওনদের কোম্পানির ডিরেক্টর বানিয়ে রাখা হয়েছে। ‘শেল’ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই টেক্সটাইলের। এছাড়াও রয়েছে রিয়েল এস্টেট এবং প্যাকেটজাত চাল-ডাল রপ্তানির সংস্থা। ভুয়ো কোম্পানিগুলির সঙ্গে এনামুলের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই তাকে ধরা হয়।
এফআইআরের দেড় মাস পরে কেন এই গ্রেপ্তার? সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, এফআইআর হওয়ার পর কলকাতা তথা রাজ্য ছেড়ে পালায় এনামুল। বিভিন্ন সূত্র মারফত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানাতে পারে, দুবাইয়ের ডেরায় পালানোর ছক কষেছে এনামুল। সেই কারণে দেশের সমস্ত বিমানবন্দরে তার নামে লুক আউট নোটিস জারি করা হয়। যাতে কোনওভাবে সে দেশ ছাড়তে না পারে। এর মাঝে সিবিআইয়ের কাছে খবর আসে, চোরাপথে প্রথমে বাংলাদেশ পরে সেখান থেকে বিমানে দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে গোরু পাচার চক্রের কিংপিন। এনামুলকে জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, নির্বিঘ্নে গোরু পাচারের কারবার চালাতে একদিকে যেমন বিএসএফ-কাস্টমস আধিকারিকদের কেটা অংশ তাকে সাহায্য করেছে, তেমনই কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ‘আশীর্বাদ’ও পেয়েছে সে। বিনিময়ে মোটা টাকা মাসোহারা নিয়মিত যেত তাদের কাছে।
কীভাবে টাকা পৌঁছত প্রভাবশালীদের কাছে? জেরায় এনামুল জানিয়েছে, ভুয়ো কোম্পানিগুলিতে কেবলমাত্র কাগজে কলমে টাকা লেনদেন দেখানো হতো। বাস্তবে সেই টাকা হাওলা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছেছে। এমনকী কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি বা তাদের কোনও আত্মীয়ের নামে খোলা ‘কাগুজে’ কোম্পানির অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলা হয়েছে কোনও কেনাকাটা দেখিয়ে। সিবিআই বলছে, বাস্তবে কিছু কেনাই হয়নি। জাল নথি তৈরি করে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া হয়েছে এই সব কোম্পানির নামে।