কৌশিক ঘোষ, কলকাতা: মহাজনী ঋণের ফাঁসে আর জড়াতে চাইছেন না রাজ্যের কৃষকরা। ফলে এই প্রথম লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (কেসিসি) পাওয়ার আবেদন জমা পড়ল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চাইছেন, রাজ্যের যতটা সম্ভব বেশি কৃষককে কেসিসি’র সুবিধা পাইয়ে দিতে। সরকারে লক্ষ্য একটাই—যেভাবেই হোক মহাজনী ঋণের চক্রব্যূহ থেকে কৃষকদের বের করে আনা। সেই মতো তৎপর হয়েছে কৃষিদপ্তর। চলতি আর্থিক বছরে কেসিসি করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ লক্ষ ১৮ হাজার। কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত মোট আবেদন জমা পড়েছে ২২ লক্ষ ১২ হাজার। ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কগুলি প্রায় ১২ লক্ষ ৮৮ হাজার নতুন কেসিসি ইস্যু করেছে। বাকি কেসিসিগুলি যাতে দ্রুত ইস্যু করা হয়, তার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেসিসি থাকলে ব্যাঙ্ক থেকে অনেক কম সুদে ঋণ পান কৃষকরা। গত আর্থিক বছরে রাজ্যের প্রায় ৩৫ লক্ষ কৃষকের কেসিসি ছিল। এই সংখ্যা বাড়াতে বিশেষ অভিযান শুরু করে রাজ্য। জুন থেকে সেপ্টেম্বর। চারমাসে ১২ লক্ষেরও বেশি কৃষক কেসিসি করিয়েছেন। ফলে সংখ্যাটা এই মুহূর্তে ৪৭ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এবার সেটা ৫৫ লক্ষ অতিক্রম করবে বলে আশাবাদী সরকার। রাজ্যে নথিভুক্ত চাষির সংখ্যা প্রায় ৭২ লক্ষ। চাষিদের মধ্যে একটা অংশ ঋণ না নিয়ে চাষ করেন। তাঁরা এতদিন কেসিসি করতে আগ্ৰহী ছিলেন না। বরং ব্যাঙ্কের হ্যাপা এড়াতে হাত পাততেন মহাজনের কাছে। খুব সহজে ঋণ পেলেও তার সুদ ছিল অত্যন্ত চড়া। এবার কোভিড মহামারীর জেরে পরিস্থিতি ভিন্ন। তাঁরা এখন কেসিসি করিয়ে ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে ঝুঁকছেন।
নতুন কেসিসি করার ক্ষেত্রে অনলাইনে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা চালু করেছে সরকার। অর্থদপ্তর কিষাণ ক্রেডিট কার্ড ইস্যুয়েন্স মনিটরিং সিস্টেমে জেলাশাসক থেকে বিডিও পর্যন্ত প্রশাসনিক আধিকারিকদের যুক্ত করেছে। ব্যাঙ্ককর্তারাও এই ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট প্রতিদিন জমা পড়ছে। গত মাসের গোড়ার দিকে স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির বৈঠকে কেসিসি-র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তখন দেখা যায় কেসিসি-র জন্য প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ আবেদন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলি বিবেচনা করছে। নথিপত্র ঠিকঠাক না থাকার কারণে প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার আবেদন বাতিল হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত, সমবায় ও গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলি কেসিসি ইস্যু করে। কেসিসি থেকে প্রাপ্ত ঋণ ঠিক সময়ে পরিশোধ করলে সুদের উপর ৩ শতাংশ বিশেষ ছাড় মেলে। তাতে কৃষি ঋণের উপর মোট সুদের হার হয় মাত্র ৪ শতাংশ। জমি আছে এমন কৃষক ছাড়াও ভাগ চাষিরা কেসিসি করাতে পারেন। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি কেসিসি করার ক্ষেত্রে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ। এই কারণে সমবায় ও গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলির উপর বেশি ভরসা করে সরকার।