নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মহানগরী যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে, তখন বেসরকারি বাস-মিনিবাস নিয়ে অচলাবস্থা কাটল না। মঙ্গলবারও অফিস বেরিয়ে রাস্তায় বাসের জন্য নাকাল হয়েছেন যাত্রীরা। পথে সরকারি বাস কিছুটা বাড়লেও তাতে সুরাহা তেমন একটা হয়নি। তবে এবার থেকে অটো এবং ট্যাক্সিতেও যতগুলি আসন, ততজন যাত্রী নেওয়া যাবে বলে রাজ্য সরকার নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এতে খুশি অটো ও ট্যাক্সির চালক, মালিক থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীদেরও একটা বড় অংশ।
অটো এবং ট্যাক্সি সংগঠনগুলি জানিয়েছে, আজ, বুধবার থেকেই তারা যতগুলি সিট, ততজন যাত্রীকে তুলবে। যাত্রীদেরও বক্তব্য, বিভিন্ন অফিস-কাছারি খুলে যাওয়ায় রাস্তায় বেরিয়ে গাড়ির অভাবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে এতদিন বেশ কিছুটা দেরি হয়ে যাচ্ছিল। অটো এবং ট্যাক্সিতে আগের মতো চারজন করে যাত্রী নেওয়া হলে সেই সমস্যার অনেকটাই লাঘব হবে।
যাত্রীদের আরও বক্তব্য, এতদিন অটো এবং ট্যাক্সিতে যেহেতু কম লোক নিয়ে চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তাই চালকদের একাংশ সুযোগ বুঝে বেশি ভাড়া নিচ্ছিল। নয়া সিদ্ধান্তে চালকদের বেশি ভাড়া দাবি করার কোনও সুযোগ থাকবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্তে সঠিক ভাড়াতেই যাতায়াত করা যাবে। তবে কোনও কোনও মহলের মতে, ট্যাক্সি ও অটোয় নির্ধারিত আসন অনুযায়ী যাত্রী বহন করলে সামাজিক দূরত্ব বিধি মানা সম্ভব হবে না।
নয়া সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে পরিবহণ দপ্তরের এক কর্তা বলেন, আসলে বাসের ক্ষেত্রে যতগুলি সিট, ততজন যাত্রীকে একসঙ্গে সফরের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল আগেই। নীতিগত সামঞ্জস্য রাখতেই অন্যান্য গণপরিবহণের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ট্যাক্সির মতো কম আসন সংখ্যাবিশিষ্ট গাড়িতে অনেক সময় পরিবারের লোকজন একসঙ্গে যাতায়াত করেন। তাই অন্য কোনও সমস্যা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার কিছুটা হলেও রাস্তায় বাড়ল সরকারি ও বেসরকারি বাসের সংখ্যা। যদিও বিভিন্ন স্ট্যান্ডে বাসের জন্য যাত্রীদের ভিড় এদিনও দেখা গিয়েছে। আজ, বুধবার থেকে সরকারি এবং বেসরকারি বাসের সংখ্যা আরও বাড়তে চলেছে বলে খবর।
পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, কলকাতা এবং শহরতলিতে সরকারি বাসের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ানো হচ্ছে। গত সোমবার প্রথম শিফটে ২৪০ এবং দ্বিতীয় শিফটে ৩৪০টি বাস চলেছে। মঙ্গলবার সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ৬০০টি বাস পরিষেবা দিয়েছে। আজ, বুধবার থেকে বাসের সংখ্যা আরও বাড়ছে। ‘ই’ এবং এসি শ্রেণীর আরও ১৮০টি বাস রুটে নামবে। মঙ্গলবার বহু রুটে বেসরকারি বাসও চলেছে বলে জানিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী।
বাস মালিকদের যে সংগঠনগুলি ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে অনড় ছিল, এদিন তারা স্মারকলিপির আকারে তাদের বক্তব্য কসবার পরিবহণ ভবনে জমা দেয়। কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করে সংগঠনগুলির নেতৃত্ব। জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট জানিয়েছে, ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি নিয়ন্ত্রক কমিটি গঠনের আর্জি জানানো হয়েছিল। দপ্তর থেকে সেই কমিটি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কমিটিতে মালিক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিত্বও থাকবে। পরিষেবা সূচনা সংক্রান্ত ব্যাপারে আজ ফের নিজেদের মধ্যে বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে তারা। ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, আজ থেকে কিছু রুটে বাস চলাচল শুরু হবে। সরকার যে কমিটি করছে, সেই কমিটি ভাড়া সংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্ত নিলে আগামী দিনে বাসের সংখ্যা আরও বাড়বে।
উল্লেখ্য, এদিন থেকে এয়ারপোর্ট-বাবুঘাট, বাগবাজার-গড়িয়া, মধ্যমগ্রাম-শ্যামবাজার, বাঙ্গুর-এসডিএফ, বারাসত-বি গার্ডেন সহ কয়েকটি রুটে নতুন করে বেসরকারি বাস চলাচল শুরু হয়েছে।