আজ অর্থাগম ক্ষেত্রটি মধুর। কাজ করেও সাফল্যের অভাব। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় উন্নতি। ... বিশদ
সোহা-স্নেহা যমজ বোন। এক মিনিটের ব্যবধানে জন্ম নিয়েছিল ওঁরা। তারপর জীবনের শুরু থেকেই একসঙ্গে বড় হওয়া। একে অপরের সুখ-বিষাদকে জড়িয়ে থাকা। এবার একসঙ্গে মেধাতালিকায় ঠাঁইও করে নেওয়া। বুধবার বাংলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চন্দননগরের মেধাবী দুই যমজের কীর্তি। তারপর আলোর শহরে অতিরিক্ত রোশনাই হয়ে ফুটে উঠল দুই যমজ বোনের কীর্তি।
চন্দননগরের কুণ্ডুঘাটে দোতলা বাড়ি তাঁদের। চৌকাঠে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে তাঁদের মা অপর্ণা ঘোষ। মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখছিলেন দুই যমজকে। দু’জনের পরীক্ষার ফল চোখে জল এনে দিয়েছে তাঁর। বলেন, ‘নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। ওঁরা দু’জনেই পড়াশোনায় ভালো। কিন্তু তা বলে জোড়া সাফল্য আমার ঘরে আসবে, সহজে হজম করতে পারিনি। দু’জনের ভালোবাসা দেখে আরও তৃপ্ত আমি।’ বাড়িতে ততক্ষণে ভিড় জমাট বাধতে শুরু করেছে।
সোহা আর স্নেহার মুখের আদলে সামান্য তফাত। বাকি সবকিছুই এক। এদিন দু’জনের পরণেও একই ধরনের সালোয়ার-কামিজ। নক্সা এক। শুধু রং আলাদা। দু’জনে চুলও বেঁধেছিলেন একই স্টাইলে। সে প্রসঙ্গ তুলতেই হেসে গড়িয়ে পড়লেন দু’জনেই। স্নেহা বলেন, ‘আমরা তো এভাবেই বড় হয়েছি। দু’জনে একই স্কুলে পড়েছি। একই গৃহশিক্ষকের কাছে গিয়েছি। এখানেই আমাদের সাফল্যের সূত্র। ও আমাকে বিচার করেছে আর আমি ওকে।’ সোহা বলেন, ‘আমরা দু’জনেই ঠিক করে রেখেছিলাম কলেজ স্তরের পড়াশোনা অর্থনীতি নিয়ে করব। আমরা দু’জনেই গবেষণা করতে চাই। সেটাও দু’জনে মিলেই ঠিক করেছি।’ এ কথা যখন হচ্ছে তখনও দু’জনের হাত দু’জনের আঙুল ধরে। গুজরাতে কর্মসূত্রে রয়েছেন তাঁদের বাবা সঞ্জীব ঘোষ। বেসরকারি সংস্থার কর্মী সঞ্জীববাবু বলেন, ‘ওরা ওইরকমই। সবেতেই হরিহর আত্মা।’
যমজ এই দুই কৃতী চন্দননগরের কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষামন্দিরের ছাত্রী। স্কুলের পরীক্ষাতেও তাঁদের নম্বরের তফাত হতো সামান্য। কখনও এগিয়ে যেতেন দিদি। কখনও বোন। কিন্তু তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে কোনও প্রতিযোগিতা ছিল না। তবে সোহা চাইতেন, এগিয়ে থাকুক বোন। আর স্নেহার দাবি ছিল ঠিক উল্টো। দিদি এগিয়ে থাকুক চাইতেন তিনি।
অবশেষে এগিয়ে গেলেন দু’জনেই। আলোর শহরে আর একটু আলো ছড়িয়ে নির্ভার হাসছেন দু’জনে। একইসঙ্গেই হাসছেন।