পারিবারিক ক্ষেত্রে কলহের আশঙ্কা। ঠান্ডা মাথায় চলুন। বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, সাহিত্যিকদের শুভ সময়। ... বিশদ
বছর দু’য়েক আগের ঘটনা। দমদমের জপুর রোড এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব স্বপনকুমার হাজরা বিভিন্ন প্রকাশকের হয়ে বই বিক্রির কাজ করতেন। সেই সূত্রেই ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর পরিবারের সঙ্গে তাঁর শেষবারের মতো কথা হয়। তারপর থেকে স্বপনবাবুর মোবাইল সুইচড অফ হয়ে যায়।
মামলার বয়ান সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর খন্যান স্টেশনে একটি যাত্রী বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে স্বপনবাবু সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। ধৃতদের বিরুদ্ধে ব্যান্ডেল জিআরপি থানায় বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু হয়। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর স্বপনবাবুকে চুঁচুড়া আদালতে পেশ করা হলে তাঁকে ১ হাজার টাকার বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও গ্রেপ্তারির পর আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর আত্মীয় পরিজনদের গ্রেপ্তারির কথা জানায়নি পুলিস। বন্ড না দিতে পারায় জামিন মিললেও ছাড়া পাননি স্বপনবাবু। ঠাঁই হয় বর্ধমান সংশোধনগারে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর ফের জামিন পান তিনি। কিন্তু স্রেফ পুলিসের গাফিলতির কারণে পরিবারের লোকজন কিছু না জানায় তিনি জামিন পাননি। এরমধ্যেই নাগেরবাজার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন স্বপনবাবুর পরিবার। কিন্তু নাগেরবাজার থানাও কোনও খোঁজ দিতে পারেনি। আরও জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে স্বপনবাবুকে বর্ধমান সংশোধনাগার থেকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০২৩ সালের ১৭ জুন প্রেসিডেন্সি জেল থেকে এসএসকেএম নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় স্বপনবাবুর। আশ্চর্যজনকভাবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ধরা পড়ার পর ৯ মাস ধরে যাবতীয় ঘটনা ঘটলেও তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি পুলিস। এরপর ২০২৩ সালের ১৮ জুন নাগেরবাজার থানা মারফত স্বপনবাবুর মৃত্যুর খবর জানানো হয় পরিবারকে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তির এই খবরে রাস্তায় এসে ওঠেন স্বপনবাবুর স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে।
শেষপর্যন্ত মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের সহায়তায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবার। সম্প্রতি বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে মামলার শুনানিতে গোটা বৃত্তান্ত তুলে ধরেন আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা থাকলেও কেন গ্রেপ্তারির পর পরিবারকে কিছু জানানো হল না, কোন কোন পুলিস আধিকারিক এর সঙ্গে যুক্ত, তা জানতে চেয়ে সরাসরি রাজ্য পুলিসের ডিজির কাছে রিপোর্ট তলব করেছে হাইকোর্ট। শীঘ্রই মামলার পরবর্তী শুনানি।