একাধিক সূত্রে অর্থপ্রাপ্তি ও ঋণশোধে মানসিক ভাব মুক্তি। নিজ বুদ্ধি ও দক্ষতায় কর্মোন্নতি ও সুনাম। ... বিশদ
শহরের কাছেই সবুজে মোড়া টিলাপাহাড় চামুণ্ডা হিলস। লোকবিশ্বাস, এই পাহাড়েই চামুণ্ডাদেবী মহিষাসুর বধ করেছিলেন। টিলার ওপর চামুণ্ডাদেবীর মন্দির। ইনিই রাজপরিবারের কুলদেবতা। নবরাত্রির দিন এই মন্দিরে হয় বিশেষ পুজোপাঠ। সেই পুজোর পবিত্র জল রাজপ্রাসাদে নিয়ে এসে শুরু হয় অস্ত্রপুজো আর রত্নখচিত সোনার রাজসিংহাসন পুজো। এই নবরাত্রির পুজোর রেশ ছড়িয়ে পড়ে শহরের ঘরে ঘরে। দশেরা উৎসব ঘিরে রাজপ্রাসাদ আর শহর সেজে ওঠে আলোকমালায়। দশ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয় মেলা, প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক নানা বর্ণময় অনুষ্ঠান। রাজপ্রাসাদে দিনভর নগরবাসী আর উৎসবে শামিল পর্যটকদের ভিড়।
ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে জানা যায়, ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে অদূরের শ্রীরঙ্গপত্তনমে দশেরা উৎসব শুরু করেন ওয়াদিয়ার রাজা। দশেরার দিন হাতির পিঠে বসে রাজা শোভাযাত্রা সহকারে নগর পরিক্রমা করতেন। সেই প্রাচীন উৎসবের ঐতিহ্য আজও বহমান। সেই বিশেষ দশেরা শোভাযাত্রা ‘জাম্বু সাভারি’ নামে পরিচিত। বর্তমানে এই শোভাযাত্রায় রাজার বদলে হাতির পিঠে সোনার সিংহাসনে চামুণ্ডেশ্বরী দেবীকে বসিয়ে নগর পরিক্রমা করা হয়। রাজপ্রাসাদে দশেরার দিন সকালে কুলদেবী চামুণ্ডেশ্বরীর পুজো শেষে রাজার পরিবর্তে এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উৎসবের জাম্বু সাভারি শোভাযাত্রার সূচনা করেন।
কুশালা থোপু কামানের একুশবার তোপধ্বনি আর জাতীয় সঙ্গীতের সুরের আবেশে শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। রাজার নিজস্ব ব্যান্ডবাদক দল, সুসজ্জিত হাতি, ঘোড়ার পিঠে রাজসেনা, পাইক, পেয়াদা নিয়ে রাজপ্রাসাদের সামনে রাজপথে রওনা দেয় শোভাযাত্রা। সর্বাগ্রে থাকে নন্দী ধ্বজ। দেবী চামুণ্ডেশ্বরীকে বসানো হয় বলরাম হাতির পিঠে। তার দুইপাশে থাকে কোকিলা আর কান্তি হাতিদ্বয়। রাজপ্রাসাদের প্রাঙ্গণে উৎসবের সূচনাপর্ব দর্শন শুধুমাত্র নিমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে প্রাসাদের বাইরে আর রাজপথে শোভাযাত্রা দেখার কোনও বাধা নেই। প্রাসাদের বাইরের চকের পাশে শোভাযাত্রা দেখার জন্য টিকিটের বিনিময়ে গ্যালারির ব্যবস্থাও করা হয়। কর্ণাটকের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকশিল্পীরা পা মেলান এই বিখ্যাত দশেরা শোভাযাত্রায়। শহরের রাজপথ ঢাক, ঢোল, সানাই, শিঙার শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে। লোকশিল্পীরা বিচিত্র পোশাক পরে অংশ নেন শোভাযাত্রায়। যক্ষগণা, পাটা, বীরভদ্র, পূজাকুনিথা প্রভৃতি লোকনৃত্য প্রদর্শিত হয় রাজপথে। নানা ধরনের ট্যাবলো, শিব-দুর্গা, রাম-রাবণ-মহিষাসুর বেশে বহুরূপীসাজে মানুষজন পা মেলায় দশেরা শোভাযাত্রায়।
রাজপ্রাসাদ প্রাঙ্গণ থেকে মাঝদুপুরে জাম্বু সাভারি শোভাযাত্রা রওনা দিয়ে শহর ঘুরে সন্ধের মুখে পৌঁছয় বাণীমণ্ডপ ময়দানে। পুরো পথের দু’ধারে ভিড় জমায় লাখো জনতা। দর্শনার্থীরা দেবী চামুণ্ডাদেবীর নামে জয়ধ্বনি দেন। পুরো শহর মেতে ওঠে উৎসবের আনন্দে। শোভাযাত্রার শেষে বাণীমণ্ডপ ময়দানে শুরু হয় আতশবাজির রোশনাই। দশমীর দিন জাম্বু সাভারি দশেরা শোভাযাত্রা দিয়েই শেষ হয় বর্ণময় মহীশূর দশেরা উৎসব।