দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি, ৯ জুলাই: বাংলায় বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এবার নতুন সংযোজন হতে চলেছেন ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যরা। যেসব দলীয় নেতা, কর্মীকে তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা খুন করেছে বলে বিজেপির অভিযোগ। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওইসব ‘শহিদ’ পরিবারের প্রায় প্রত্যেক সদস্যকে গেরুয়া শিবিরের ছাতার তলায় আনবে বলে ঠিক করেছে বিজেপি। আজই নয়াদিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা রাসবিহারী বেরা। বিজেপির অভিযোগ, তাঁর বাবা রামপ্রসাদ বেরাকে খুন করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের গুণ্ডাবাহিনী। বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজ্যের যত দলীয় কর্মী তৃণমূলী গুণ্ডাদের হাতে খুন হয়েছেন, সদস্য সংগ্রহ অভিযানে সেই কর্মীদের পরিবারের ভোটাধিকার রয়েছে, এমন সব সদস্যকে গেরুয়া শিবিরের ছাতার তলায় নিয়ে আসা হবে। যাতে এই নতুন সদস্যরা আগামীদিনে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ‘তৃণমূলী সন্ত্রাস’ নিয়ে আরও বেশি করে সোচ্চার হতে পারেন।
এমনিতেই সপ্তদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনের একেবারেই গোড়া থেকেই সংসদে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে বঙ্গ বিজেপি। লোকসভার জিরো আওয়ার, মেনশন, রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বারবার বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়টি তুলে ধরে তৃণমূল কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতে একেবারে মরিয়া হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি এমপিরা। গোটা বিষয়টি নিয়ে সংসদে আরও বেশি সোচ্চার হওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে নির্দেশ এসেছে বঙ্গ বিজেপির কাছে। শুধু তাই নয়। গত ৩০ মে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের জন্য নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মোট ৫৪টি ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি নিজে। তৃণমূল অভিযোগও করেছিল, গোটা বিষয়টির রাজনীতিকরণ করছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এবার সেইসব ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যদের যুক্ত করিয়ে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে আরও বেশি বেকায়দায় ফেলার পরিকল্পনা করেছে গেরুয়া শিবির।
গত ৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশেই শুরু হয়েছে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান। বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় এবার এক কোটি সদস্য চাই। সেই তালিকাতেই যুক্ত হচ্ছে উল্লিখিত ‘শহিদ’ পরিবারগুলোর সদস্যের নাম। যদিও এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজেপির যুব সংগঠন ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার উপর। যুব মোর্চার অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক সৌরভ শিকদার বলেছেন, ‘রাজ্যের একটি শহিদ পরিবারের একজন সদস্যকে আজ দিল্লিতে বিজেপির সদস্যপদ দেওয়া হল। বাকি যোগদান পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে করানো হবে।’ বিজেপির এমপি তথা দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযানে স্থানীয়স্তরে প্রত্যেকের বাড়িতে যাওয়া হবে। সামাজিক ক্ষেত্রে সমস্ত বিশিষ্টজনের বাড়িতেও যাবে দল।’ এদিন দিল্লিতে কেরলের দুই শহিদ পরিবারের সদস্যও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। যাঁদের একজনকে সিপিএম আশ্রিত গুণ্ডাবাহিনী এবং অন্যজনকে এসডিপিআই আশ্রিত দুষ্কৃতীরা খুন করেছে বলে বিজেপির অভিযোগ। এছাড়াও সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত জম্মু-কাশ্মীরের তিনটি শহিদ পরিবারের সদস্যরাও গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন।