কর্মপ্রার্থীদের নতুন কর্ম সংস্থানের সুযোগ আছে। সরকারি বা আধাসরকারি ক্ষেত্রে কর্ম পাওয়ার সুযোগ আছে। ব্যর্থ ... বিশদ
রাজ্যপাল হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত জগদীপ ধনকার দু’টি শিল্পসভায় হাজির হয়েছেন। সেই অনুষ্ঠান দু’টির আয়োজন করেছিল যারা, তাদেরই একটিকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল। শিল্পপতিদের ওই সংগঠনের কর্তার উদ্দেশে তিনি চিঠিতে লিখেছেন, আমি আপনাদের কোর কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই। সেখানে কোনও প্রয়োজনে আমি নিজের এক্তিয়ারের মধ্যে থেকেই একজন অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে চাই। রাজ্যপাল হিসেবে শিল্পপতিদের সঙ্গে নিজে থেকে এভাবে সাক্ষাৎ করতে চাওয়া ও রাজ্যের শিল্পকে সাহায্য করতে চাওয়াকে নজিরবিহীন বলেই মনে করছে শিল্পমহল।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলা নববর্ষে রাজ্যের শিল্পপতিদের কাছে গ্রিটিংস কার্ড পাঠিয়ে নজির গড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই শুভেচ্ছা-সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হয়েছিল বণিককুল। এবার শিল্পমহলকে চিঠি দিয়ে ফের নজির গড়লেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার, বলছে শিল্পপতিদের একাংশ। কিন্তু তাঁর এই আগ্রহ রাজনৈতিকভাবে কী সঙ্কট ডেকে আনতে পারে, এমন আশঙ্কাও এড়িয়ে যাচ্ছেন না তাঁরা। শিল্প সংক্রান্ত যে দু’টি অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল গিয়েছেন, সেখানে হয়তো তিনি সরাসরি রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানাননি। কিন্তু এরাজ্যের শিল্প সংক্রান্ত কলঙ্কিত ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়েছেন ঠারেঠোরে। একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, এখানে যেভাবে রাস্তা অবরোধ হতো, তাতে হোটেল থেকে বেরিয়ে আদালত পর্যন্ত যাওয়াই দুঃসাধ্য ছিল। ট্যাক্সি পাওয়া তো দূরের কথা, হেঁটেও সময়ে পৌঁছবেন কি না, তা নিয়েও দুশ্চিন্তার অন্ত থাকত না। বাম আমলের উল্লেখ না করলেও, তাদের সময়ে গোল্লায় যাওয়া কর্মসংস্কৃতির ছবি স্পষ্ট হয়েছিল তাঁর ওই ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে রাজ্যের উন্নয়ন করেছেন, বিশেষত রাস্তাঘাট তৈরি করেছেন, তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন রাজ্যপাল। শিল্পের জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ দরকার, তা যে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন, সেই ইঙ্গিতও ছিল রাজ্যপালের ভাষণে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানের পর এই অল্প সময়েই পরিস্থিতি অনেকটাই ঘোরালো হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের দিকে নানা অভিযোগে রাজ্যপাল যেভাবে আঙুল তুলেছেন, তাতে আর চুপ করে বসে থাকতে রাজি নন প্রশাসনের কর্তারা। একাধিক মন্ত্রী ইতিমধ্যেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুলেছেন। রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কাণ্ডে যে দ্বৈরথের সূত্রপাত হয়েছিল, সম্প্রতি রাজ্যপালের তরফে ডাকা প্রশাসনিক বৈঠককে কেন্দ্র করে তা চরমে ওঠে। মাঝে দুর্গাপুজোর শোভাযাত্রা বা কার্নিভাল নিয়েও যেভাবে সরাসরি ব্যক্তিগত অপমানের অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যপাল, তাতে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল। এরই মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে কালীপুজোর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে হাজির হয়েছেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল। তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত জগদীপ ধনকার। কিন্তু তাতেও শাসক ও সাংবিধানিক প্রধানের মধ্যে গুমোটভাব কাটেনি বলেই মনে করা হচ্ছে। এরই মাঝে শিল্প নিয়ে যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়াতে চেয়েছেন রাজ্যপাল, তাতে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা। রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়েই যেখানে প্রশ্ন উঠছে, সেখানে ‘অনুঘটক’ হিসেবে জগদীপ ধনকারের কাজ করতে চাওয়া নতুন করে কোনও সমস্যা তৈরি করে কি না, সেটাই এখন দেখার।