শরীর নিয়ে চিন্তায় থাকতে হবে। মাথা ও কোমরে সমস্যা হতে পারে। উপার্জন ভাগ্য শুভ নয়। ... বিশদ
করোনা সতর্কতায় লকডাউনের জেরে ট্রেন, বাস বন্ধ। প্রশাসনের পরামর্শ মেনেই লকডাউন শুরুর পর থেকেই বন্ধ ঐতিহ্যবাহী তারাপীঠ মন্দির। যেখানে সর্বদা লোকে লোকারণ্য থাকে, এখন সেই মন্দির চত্বর খাঁ খাঁ করছে। পুণ্যার্থীদের আনোগোনার উপর নির্ভর করে রুজি-রোজগার চলা সেবাইত ও ছড়িদাররা চরম বিপাকে পড়েন। দীর্ঘদিন রোজগার না থাকায় সেই সমস্ত পরিবারে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সঙ্কটে পড়েছেন ফুল, পুজোর সামগ্রী বিক্রেতারা।
সেবাইত গুরুস্মরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে উপার্জনের টাকায় সংসার, বাচ্চাদের পড়াশোনা সবই চলত। মন্দির বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছি।
দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে তারাপীঠে মা তারার ফটো বিক্রি করে আসছেন জয়দেব মণ্ডল। তিনি বলেন, দু’মাসের উপর বাড়িতেই রয়েছি। বিকল্প কোনও কাজও নেই। জমানো টাকা ভেঙে কতদিন সংসার চলবে বুঝতে পারছি না। এখানে মা তারাকে পেড়া দিয়ে ভোগ নিবেদন করেন ভক্তরা। মন্দির বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন পেড়া বিক্রেতারাও। মনোরঞ্জন পাল বলেন, নিত্যদিন প্রায় ৪৫ কেজির পেড়া বিক্রি হয়। বিশেষ তিথিগুলিতে সেটাই কুইন্টাল ছাড়িয়ে যেত। বর্তমানে করোনা সব উলটপালট করে দিল। কবে মন্দির খুলে পুণ্যার্থী সমাগম স্বাভাবিক হবে তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।
অন্যদিকে মায়ের চরণে জবা, অপরাজিতা, পদ্ম ফুল দিয়ে পুজো দেওয়ার চল রয়েছে। ফলে, তারাপীঠ সহ আশোপাশের গ্রামে সেই সমস্ত ফুলের চাষ হয় বারো মাস। এখন গাছ থেকে ফুল ঝরে মাটিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফুলচাষিরা বলেন, প্রচুর টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়ে গেল। যদি এখানে ফুল সংরক্ষণের জন্য কোনও হিমঘর থাকত, তাহলে ক্ষতি কিছুটা সামাল দেওয়া যেত। যতদিন যাচ্ছে, ততই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুনীল গিরি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই হোটেল খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, পুণ্যার্থীর দেখা নেই। কবে স্বাভাবিক হবে ভেবে পাচ্ছি না।
মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, মন্দির বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার মানুষ খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন এটা ঠিক। কিন্তু, প্রশাসনিক নির্দেশের বাইরে কেউ নয়। নির্দেশ পেলেই গর্ভগৃহ সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্রমণ রোধে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হবে। টিআরডিএর ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, এলাকার অর্থনীতির মূল ভিত্তিই হল মন্দির। হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মন্দিরকে কেন্দ্র করে পেট চালান। তাঁরা এখনও পর্যন্ত সামলে নিয়েছেন। কিন্তু, বেশিদিন পারবেন বলে মনে হয় না। এই মুহূর্তে দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে অসহায় পরিবারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রেশনও পাচ্ছেন তাঁরা।