বিদ্যায় সাফল্য ও হতাশা দুই-ই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। মামলা-মোকদ্দমার কোনও পরিবেশ তৈরি ... বিশদ
আজ রেলমন্ত্রীর জবাবি ভাষণের শেষে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি ফের রেলের শূন্যপদের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘রেলমন্ত্রক বরাবর যাত্রীসুরক্ষার উপর জোর দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু রেলের গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি বিভাগে প্রায় ২ লক্ষ ৬৪ হাজার শূন্যপদ রয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি রেলের যাত্রী সুরক্ষার উপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ যদিও এর কোনও পাল্টা জবাব পীযূষ গোয়েল দেননি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক লোকসভায় একটি তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছিল, সারা দেশে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে প্রায় সাত লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে। তার মধ্যে রেলেই শূন্যপদের সংখ্যা সর্বাধিক।
এদিন রেলমন্ত্রী বেশি সময়টাই ব্যয় করেছেন মোদি সরকার কেন্দ্রের পূর্বতন ইউপিএ জমানার তুলনায় রেলে কতটা ভালো কাজ করছে, তা বোঝানোর উপর। এই প্রসঙ্গে বিশেষ করে রায়বেরিলির এমসিএফ (মডার্ন কোচ ফ্যাক্টরি) -এর প্রসঙ্গ টেনেছেন তিনি। এমসিএফের বেসরকারিকরণ নিয়ে সম্প্রতি লোকসভায় সরব হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী। আজ রেলমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৭-০৮ সালে এমসিএফ কাজ করার অনুমোদন পায়। কিন্তু তখন থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রায়বেরিলির এই কোচ ফ্যাক্টরিতে একটি কোচেরও উৎপাদন হয়নি। বরং কাপুরথালা এবং অন্যান্য কয়েকটি জায়গা থেকে এমসিএফে কোচ নিয়ে এসে রং এবং আনুষঙ্গিক কিছু কাজ করে বলা হত এমসিএফেই এর উৎপাদন হয়েছে।
২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর আগস্ট মাসে প্রথম এখানে কোচ উৎপাদন হয়। বছরে এক হাজার কোচ উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল। ২০১৭-১৮ সালে তৈরি হয় ৭১১টি কোচ। কিন্তু তাতেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খুশি ছিলেন না। তিনি নিজে রায়বেরিলি গিয়ে কোচ কারখানার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। ২০১৮-১৯ সালে এখানে আমরা ১ হাজার ৪২৫টি কোচ উৎপন্ন করেছি। আগামীদিনে একে ৫ হাজার কোচ উৎপাদনের ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।’ এদিনও রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, রেলের বেসরকারিকরণ হবে না।
তবে শুধুমাত্র রায়বেরিলির মডার্ন কোচ ফ্যাক্টরিই নয়। একের পর এক তথ্য দিয়ে আজ লোকসভায় রেলমন্ত্রী দাবি করেন, রেললাইন নবীকরণ, রেললাইনে বৈদ্যুতিকরণ, নতুন রেললাইন তৈরি প্রভৃতি সবক্ষেত্রেই আগের কংগ্রেস আমলের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে বিজেপি সরকার। এমনকী মোদি জমানায় রেলের মূলধনী খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় আড়াই গুণ। গতকাল রেলবাজেটের উপর আলোচনায় লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি বলেছিলেন, ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর আদতে ইউপিএ জমানার প্রকল্প। এর জবাবে এদিন রেলমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৭ সালে ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের ঘোষণা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু কংগ্রেস সরকার এই খাতে মাত্র ন’হাজার কোটি টাকা খরচ করেছিল। আর ট্র্যাক লিঙ্কিং হয়েছিল মাত্র এক কিলোমিটার। মোদি জমানায় ওই প্রকল্পে পাঁচ বছরে ৩৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ট্র্যাক লিঙ্কিং হয়েছে ১৯০০ কিলোমিটার। ২০২১ সালের মধ্যেই এই প্রকল্প সম্পূর্ণ করে দেওয়া হবে।’ রেলমন্ত্রী এদিন সংসদে ঘোষণা করেছেন, পণ্য পরিবহণের কাজে আরও গতি আনতে আরও বেশি ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এবার থেকে রেলের যেকোনও সেতুর উপর সাইনবোর্ড দিয়ে সেই সেতু সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হবে। তার মধ্যে থাকবে কত সালে সেতুটি তৈরি হয়েছিল, শেষ কবে তাতে নজরদারি চালানো হয়েছে, তাতে কী ফল এসেছে এবং এরকম আরও কিছু তথ্য। দেশের প্রথম সেমি হাইস্পিড ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রস নিয়েও কংগ্রেসকে একহাত নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কংগ্রেসকে তোপ দেগে বলেছেন, ‘২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বই লোকালে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তাতে ২০৯ জনে মৃত্যু হয়েছিল। ৭০০ এর বেশি মানুষ আহত হয়েছিলেন। কিন্তু সেইসময় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। মোদি সরকার হলে এর কড়া জবাব পেয়ে যেত সন্ত্রাসবাদীরা।’ এর তীব্র প্রতিবাদ জানাতে থাকেন লোকসভায় উপস্থিত কংগ্রেস এমপিরা। অধীরবাবু বলেন, ‘রেল একটি চলমান প্রক্রিয়া। কংগ্রেস সরকার জমি তৈরি করে দিয়েছিল বলেই এখন কেন্দ্র এইসব স্বপ্ন দেখাতে পারছে।’