কর্মপ্রার্থীদের কোনও সুখবর আসতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদন্নোতির সূচনা। গুপ্ত শত্রু থেকে সাবধান। নতুন কোনও প্রকল্পের ... বিশদ
২৫টা কাউন্টারের মধ্যে খোলা মাত্র তিনটি। সবেতেই লাইনের ওমাথা দেখা যাচ্ছে না। বুধবার এমনই ছিল জিপিওর অবস্থা। সকলেই ভেবেছিলেন, লকডাউনের মধ্যেই ছন্দে ফেরার শুরুতে এদিন সব কাজকর্মই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু উম-পুনের তাণ্ডবে যে ডাক পরিষেবাও বিপর্যস্ত হয়ে যাবে, তা হয়তো ভাবতে পারেননি কেউই। রেলে কাজ করেন সুরেশ। অথচ পার্সেল পাঠাতে তাঁকেও আসতে হয়েছে মুখ্য ডাকঘরে। কারণ? ঝড়ের পর রেলের পোস্টাল সার্ভিসের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। অথচ মায়ের জন্য গোরক্ষপুরে ওষুধ পাঠাতেই হবে। তাই ব্যান্ডেল থেকে বিবাদিবাগ এসেছেন কোনওমতে। বলছিলেন, ‘সকাল ১১টায় কাউন্টার খোলার কথা। তার আগেই এসে লাইনে দঁাড়িয়েছি। কিন্তু ১২টা পেরিয়ে গেলেও কাউন্টার আর খোলে না। বুঝতে পারছি না ২টোর সময় আবার হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল ফেরার ট্রেন পাব কি না।’
স্পিড পোস্ট করতে এসে বিরক্তি শুধু সুরেশের নয়, ভোগান্তির জ্বালায় এদিন অসন্তোষ দানা বেঁধেছে প্রায় সবার মধ্যে। এক একজনকে দঁাড়াতে হয়েছে প্রায় দু’ঘণ্টা। তাতেও স্বস্তি নেই। কাউন্টারে বসে থাকা ডাককর্মী সটান জানিয়ে দিলেন, ‘অনেক লোক লাইনে... পঁাচটার বেশি পার্সেল বা স্পিড পোস্ট নেওয়া যাবে না।’ তাতে ক্ষোভের পারদ পরতে পরতে চড়তে থাকে। আমহার্স্ট স্ট্রিটের বিজয় রায় তো বলেই ফেললেন, ‘আবার একদিন আসতে হবে? জানেন, অফিসের দরকারি কাগজ দিল্লিতে পাঠাব বলে এত কষ্ট করে এলাম। এখন বলে কি না পাঁচটার বেশি নেব না!’ যাদবপুর থেকে আসা সুজয় দাসের তো শিরে সংক্রান্তি। সাড়ে আটটায় এসে লাইনে দঁাড়িয়েছেন। তারপর পার্সেল হাতে যখন সাড়ে তিন ঘণ্টা পর কাউন্টারে পৌঁছলেন, শুনতে হল মুম্বইতে কোনও প্যাকেট যাবে না।
লকডাউনের মধ্যে যেখানে ট্রেন বন্ধ, আধঘণ্টা অন্তর মাত্র ২০ জন যাত্রী নিয়ে সরকারি বাস চলছে, সেখানে এই দুর্ভোগ বারবার পোহাতে রাজি নন কেউই। ডালহৌসি, ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস... সব মিলিয়ে ৪০ শতাংশের বেশি দোকান কিন্তু বুধবারও খোলেনি। তবে রাস্তায় গাড়ি বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। সিগন্যালের লাল বাতিতে দাঁড়াতে হচ্ছে বেশ কয়েকটি গাড়ির পিছনে। অফিস পাড়ার তিন বেসরকারি কর্মী এসেছেন গাড়ি ভাড়া করে। কারণ তিনজনের বেশি গাড়ি নেবে না! সবার পক্ষে তো আর তেমনটা সম্ভব নয়। তাই প্রত্যেক বড় স্টপে দাঁড়িয়ে থাকছেন বহু মানুষ। সরকারি বাস চললেও অনেকেই ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন না। জিপিওরই এক কর্মী এসেছেন টালিগঞ্জ থেকে। বলছিলেন, ‘সাড়ে আটটায় স্টপে দঁাড়িয়েছি। তিনটে বাস ছেড়ে একটায় উঠতে পারলাম। যখন পৌঁছলাম, দেখলাম ১১টা বেজে গিয়েছে।’
কিন্তু ডাকঘরে এই দুর্ভোগের কারণটা কী? অন্য পোস্ট অফিসও তো খোলা আছে! ভারপ্রাপ্ত চিফ পোস্ট মাস্টার জেনারেল নীরজ কুমার বলেন, ‘কলকাতা ও শহরতলির প্রায় ৪৫০ ডাকঘর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জিপিও সহ ৬০টির পরিষেবা এদিন পর্যন্ত চালু করা গিয়েছে। সবকটি ঠিক হতে আরও তিন-চারদিন সময় লাগবে। তার উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মতো ৩০ শতাংশ কর্মী দিয়ে আমাদের কাজ চালাতে হচ্ছে। কেউ কেউ পড়ে যাচ্ছেন কন্টেইনমেন্ট জোনে। তার প্রভাব পড়ছে কাজের সময়। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যে সবই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
শুধু ডাক পরিষেবা নয়, স্বাভাবিকতায় ফেরার আশায় পথ চেয়ে রয়েছে সমগ্র কলকাতাই।