বিদ্যায় সাফল্য ও হতাশা দুই-ই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। মামলা-মোকদ্দমার কোনও পরিবেশ তৈরি ... বিশদ
এটা যে বাস্তব নয়, নিছকই এক যাত্রাপালা, এই সহজ কথাটা কিছুতেই দুর্যোধনকে বোঝাতে পারে না পালার মাস্টার। তার কাকুতি মিনতিতে কাজ হয় না। এক পুঁজিপতি, যার কথায় সমাজ চলে, তাকে পরাজিত করবে নিপীড়িত, সর্বহারা মানুষের প্রতিনিধি ওই যদু নাপিত!
সমাজ বিভাজন। নগ্ন, জলন্ত, চিরকালীন এক বাস্তব। কখনও জাতের নামে, কখনও অর্থ, আবার কখনও ধর্মের নামে। সেই কঠোর বাস্তবের দিকেই আবার আঙুল তুলল ‘দোহোমনী বাজার নাট্যসেনা’। তাদের সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘মহাভারতের যুদ্ধ’র মধ্যে দিয়ে।
যদি ভীমের হাতে দুর্যোধনের বিনাশ না হয়, তাহলে মহাকাব্যটাই তো মিথ্যে হয়ে যায়। কিন্তু তা হতে দেন না নাট্যকার ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। দিনের পর দিন অত্যাচারিত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত হতে হতে যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখনই ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া অন্য উপায় থাকে না। ঘুরে দাঁড়াতে হয়, যেভাবে ঘুরে দাঁড়ায় গ্রামের প্রান্তিক মানুষগুলো। দুর্যোধনরা আজও আছে, মুখটাই শুধু বদলে বদলে যায়। শুরু হয় আজকের দুর্যোধনের বিরুদ্ধে সাধারণের যুদ্ধ। সাধারণের সংঘবদ্ধ, দৃঢ় আক্রমণের সামনে হেরে যায় বিত্তের অহংকার, বৈষম্যের জেদ।
বিষয়ের দিক থেকে গরিব-বড়লোকের শ্রেণীবিন্যাস বা সংঘাত নতুন নয়, কিন্তু এই চিরকালীন সমস্যাটিকে অন্য আঙ্গিকে, সরল বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেছেন নাট্যকার।
নাটকটি শুরু হয় হালকা চালে। নির্ভেজাল কিছু হাস্যমুহূর্ত নাটকটির প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। ধীরে ধীরে নাটক যত বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে বদলাতে থাকে ভাব। একাত্ম হয়ে পড়ে দর্শক। অনুভব করে চিরকালীন সেই সত্যের।
সমকালীন একটি বিষয়কে বক্তব্যের সারল্যে এবং আন্তরিকতার মধ্যে দিয়ে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন নির্দেশক গৌতম ভট্টাচার্য। সেই সঙ্গে শিল্পীদের বলিষ্ঠ অভিনয়, নাটকটিকে অন্য উচ্চতা দান করেছে। বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখেন প্রিয়নাথ চট্টোপাধ্যায় (ভীম), অর্জুন (নিলাদ্রী দত্ত), প্রদীপকুমার সাউ (দুর্যোধন), চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় (মাস্টার), অপূর্ব সিংহ (প্রম্পটার), তারকনাথ চট্টোপাধ্যায় (বিবেক) এবং শিবনাথ চক্রবর্তী (যদু)।
সমগ্র প্রযোজনাটি অত্যন্ত যত্ন, সততা এবং গতিময়তার সঙ্গে মঞ্চস্থ হওয়ার ফলে আলো (বিশ্বনাথ সাধুখা ও তন্ময় চট্টোপাধ্যায়), মঞ্চসজ্জা (শিবনাথ চক্রবর্তী), রূপসজ্জা (বিউটি রায়), আবহ (বাদল মণ্ডল) বিভাগের ছোটখাটো ত্রুটিগুলোকে সহজেই ভুলে যাওয়া যায়।
অজয় মুখোপাধ্যায়