গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
দোলের সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই পাড়ায় পাড়ায় রঙের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। দোকানের সামনেই সাজানো থাকে হরেক রঙের আবির। এবার আবার হারবাল আবিরের চাহিদাও রয়েছে তুঙ্গে। তবে নির্বাচনের আবহে আবিরের রঙ বাছার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকতে চাইছেন অধিকাংশ ক্রেতা। হাওড়া ব্রিজের কিছুটা আগে রাস্তার ধরে অস্থায়ী দোকান দিয়েছেন মণীশ দাস। তিনি জানিয়েছেন, আমি ভেবেছিলাম রাজনীতির আবহে সবুজ, লাল, গেরুয়া এই সমস্ত রঙের আবির বেশি বিক্রি হবে। সেই অনুযায়ী আবির মজুত করেছি। কিন্তু দোকানদারি করতে এসে দেখছি একেবারে উল্টপুড়ান। মানুষ এসে বেশি পছন্দ করছে হলুদ এবং গোলাপী আবির। এবার গোলাপীর থেকেও হলুদের চাহিদা বেশি।
চাঁদনীর কাছে রঙ ফিচকিরি মুখোশ বিক্রেতা রমেশ বাবুরও একই অভিজ্ঞতা। আগের স্টক বিক্রি হয়ে যাওয়ায়, শনিবার সকালে তিনি ফের বড়বাজার থেকে হলুদ এবং গোলাপি আবির কিনে নিয়ে এসেছেন। লাল, নিল, সবুজ, গেরুয়া আবিরও যথেষ্ট স্টক করেছেন তিনি। তাহলে এই সব আবির কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বাবু জানিয়েছেন, ভোট গণনার আগের দিন অর্থাৎ ৩ জুন সব বিক্রি হয়ে যাবে। তাই আর্থিক ক্ষতি হওয়া নিয়ে চিন্তা করছি না।
মানুষ কেন রাজনৈতিক দলের রঙের আবির কেনা এড়িয়ে যাচ্ছেন? এই প্রশ্ন করা হয়েছিল সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক দেবদ্যুতি কর্মকারকে। তাঁর ব্যাখ্যা, বর্তমানে আমরা সব সময়ই সোশ্যাল মিডিয়া সহ অন্যান্য গণমাধ্যম ঘিরে রেখেছে। সেখানেই আমরা দেখছি যে গেরুয়া মনে অমুক দল, লাল মানে অমুক দল এবং সবুজ মনে অমুক। তার প্রভাব পড়ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। এই সব দেখে এবং শুনে আমরা যখন পাড়ায় আড্ডা দিতে যাচ্ছি, তখন যদি কাউকে লাল গেরুয়া বা সবুজ জামা পড়তে দেখি তাহলে তাকেই জিজ্ঞেস করবই - কিরে কী ব্যাপার? অমুক দলে যোগ দিলি নাকি? আসলে কোনও রঙের উপরে কোনও দলের পেটেন্ট নেওয়া নেই সেটা আমাদের বুঝতে হবে। আর এই সমস্ত কারণেই এখনকার জেনারেশন রঙ বাছার ক্ষেত্রে ভীষণ সচেতন। তিনি আরও জানান, এখন তো ছবি তুলেই ফেসবুক ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে। যা চোখের নিমেষের মধ্যেই ছড়িয়ে যায়। নিজেদের সামাজিক পরিচিতি নিরপেক্ষ দেখতেও হলুদ গোপালী আবিরের দিকে বেশি ঝোঁক, এমনও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এবিষয় রাজনৈতিক দলের নেতারাও এক মত। তাঁদের মতেও দোলের রঙ নিয়ে বৈষম্য সৃষ্টির চেষ্টা করা উচিত নয়। রাজনীতি থাকে রাজনীতির জায়গায়। দোল বা হোলি থেকে হোলির জায়গায়। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আমার কাছে রঙের কোনও ভেদাভেদ হয় না। আমাকে যে যা রঙ্গের আবির দিয়েছে আমি গ্রহণ করেছি। এই আনন্দ উৎসবে রঙের ভিত্তিতে বিভেদ থাকা উচিত নয়।
বিজেপি মুখ্যম্পত্র এবং রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের পছন্দও হলুদ রঙের আবির। তিনি জানিয়েছেন, বাংলায় দোলে হলুদ গোলাপী রঙের আবিরই অধিকত্ব বজায় রাখে। এটা যদি কেউ বদলাতে চায় সেটা ঠিক হবে না।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গোলাপী রঙের আবির তাঁর ভীষণ পছন্দের। তবে আবিরের রঙ দিয়ে মানুষের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হওয়া সামাজিক ভাবে ভীষণ চিন্তার কারণ।