হঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ
এ বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য চাষিরা স্বতস্ফূর্তভাবে যাতে ওই যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপণ করে সুবিধা পান। তাই গত বছরের চেয়েও এবছর জেলার আরও বেশি চাষিকে এই যন্ত্রের ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া।
পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জেলার মোট ৬০০ জন চাষিকে এই যন্ত্রের ব্যবহার হাতে-কলমে শেখানো হয়েছে। আর জেলার বেশিরভাগ ব্লকেই ১০ হাজার হেক্টর জমিতে এই প্যাডি ট্রান্সপ্ল্যান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হয়েছে। এবছর সব ব্লকেই আতমা প্রকল্পের মাধ্যমে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, প্যাডি ট্রান্সপ্ল্যান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করতে হলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বীজতলা তৈরি করতে হবে। সেক্ষেত্রে জমিতে বিশেষ ট্রের মাধ্যমে ধানের বীজ ছড়াতে হবে। জমিতে চাষ দিয়ে লাইন বরাবর ওই ট্রেগুলি রাখতে হবে। তার উপরে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধানের বীজ রাখতে হবে। এতে মেশিনের সাহায্যে ধানের চারা জমি থেকে তুলতে সুবিধা হবে। এতে চাষে একদিকে যেমন লোকজন কম লাগবে, চাষের খরচ কমবে। ঠিক তেমনই অন্যদিকে অল্প বীজ ছড়িয়ে বেশি ধান উৎপন্ন হবে।
কাটোয়া ১ ব্লকের কৃষিদপ্তরের এডিএ আজমীর মণ্ডল বলেন, আমরা প্যাডি ট্রান্সপ্ল্যান্টার যন্ত্র আতমা প্রকল্পে ভাড়া করে নিয়ে এসেছি। এবার আগ্রহী চাষিরা ব্লক কৃষিদপ্তরে যোগাযোগ করলেই আমরা সেই চাষির জমিতে গিয়ে ওই মেশিনের ব্যবহার দেখাচ্ছি। ভবিষ্যতে চাষিরা এই মেশিন কিনতে পারেন। তাতে চাষিদের চাষের খরচের হাত থেকে রেহাই পাবেন। গতবছর পূর্ব বর্ধমান জেলায় রায়না, খণ্ডঘোষ, ভাতার প্রভৃতি এলাকার চাষিদের ওই প্যাডি ট্রান্সপ্ল্যান্টার যন্ত্রের ব্যবহার শিখিয়েছিল জেলা কৃষিদপ্তর। এমনকী খন্ডঘোষের বেশ কিছু চাষিকে ভাতারে নিয়ে এসে মেশিনের পদ্ধতি দেখানো হয়েছিল। এবারও এই যন্ত্রের মাধ্যমে জেলার চাষিদের মুখে হাসি ফোটাতে চাইছে কৃষিদপ্তর। কাটোয়া ১ ব্লকের রাজুয়া গ্রামের চাষি আসরাফ মোল্লা, খাঁইয়েরহাট এলাকার চাষি ওসমান শেখ বলেন, আমরা এবছর কৃষিদপ্তরের পরামর্শ মেনে প্যাডি ট্রান্সপ্ল্যান্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপণ করছি। তারজন্য বিশেষ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছি। এতে আমদের লোক কম লেগেছে। শুনেছি এই পদ্ধতিতে ফলনও বাড়বে। অন্যদিকে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার জন্য ‘সুধা’ পদ্ধতিতে ধান চাষের জন্যও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষিদপ্তর। সিস্টেম অব অ্যাসিওর্ড খারিফ রাইস প্রোডাকশান বা সার্প অর্থাৎ সুনিশ্চিত আমন ধানের চাষ বা ‘সুধা’ পদ্ধতিটি চাষিদের জন্য দারুণ কর্যকরী। আমন ধান চাষের সময় কখন বৃষ্টি হবে, তারপর ধান রোয়া শুরু হবে তারজন্য চাষির দীর্ঘ সময় ব্যয় না করে এই পদ্ধতিতে ধান চাষের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি আধিকারিকরা। শুধু তাই নয়, এই সার্প পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে চাষিরা বীজতলাতেই ধানের চারা এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত রেখে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। এরপর বৃষ্টি হলে ওই চারা রোপণ করতে পারবেন। গতবছর ভাতার ব্লকের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের আধিকারিক সব্যসাচী দাসের উদ্যেগে ব্লকের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ৬ একর জমিতে এই পদ্ধতিতে চাষ করেছিলেন। সব্যসাচীবাবু জানান, এই পদ্ধতিতে চাষ করতে হলে জমিতে দূরত্ব বজায় রেখে ফাঁকা করে ধানের চারা বুনতে হবে। তাতে চারাগাছ যেমন কম লাগবে। ঠিক তেমনই ফলনও বাড়বে। ভাতারের ওড়গ্রামের শিলাকোটের চাষি উত্তম ঘোষও এই পদ্ধতিতে চাষ করেছিলেন। উত্তমবাবু বলেন, আমি বরাবরই ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে ধান চাষ করি। সার্প পদ্ধতিতে ধান চাষ করেছিলাম। তাতে ফলন বেড়েছিল।