নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের ১২১ তম জন্মদিবসে তাঁর জন্মভূমি চুরুলিয়াকে ‘দ্বিতীয় শান্তিনিকেতনের’ আদলে গড়ে তোলার দাবি উঠল। কবির পরিবারও চায় দীর্ঘদিন অবহেলিত চুরুলিয়াকে নিয়ে ভাবুক রাজ্য সরকার। যদিও ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। কবির জন্মদিবসের আগের দিন রবিবার সেখানে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে সচেষ্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গ্রিভান্স সেলের চেয়ারম্যান কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী ও মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি। তাঁদের কাছে ৩০মে উন্নয়ন কমর্সূচির রূপরেখা প্রস্তুত করে খসড়া প্রস্তাব পাঠাচ্ছে নজরুল অ্যাকাডেমি। অন্যদিকে সোমবার লকডাউনেও কবির স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে স্থানীয় মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। তবে এবার মেলা বসেনি। এছাড়া আসানসোল পুরসভা ও জেলা তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগেও দিনটি সাড়ম্বরে পালিত হয়। আসানসোল বিবি কলেজের উদ্যোগে অনলাইনেই কবিকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
বাংলার সংস্কৃতির অধিকাংশ ক্ষেত্রজুড়েই রয়েছে দুই জগৎ বিখ্যাত কবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলাম। সঙ্গীত থেকে উপন্যাস একে অপরকে যেন বারে বারে ছপিয়ে গিয়েছেন এই দুই ব঩রেণ্য। কিন্তু কবিগুরু যে সম্মান পেয়েছেন, অনেকক্ষেত্রেই বিদ্রোহী কবির ক্ষেত্রে তা জোটেনি বলে নজরুল প্রেমীদের খেদ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মভূমি শান্তিনিকেতন এখন জগৎখ্যাত। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রবীন্দ্র ভবনে কবির স্মৃতিগুলিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে রক্ষা করা হচ্ছে। কবির একাধিক বাড়ি হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃত। হাজার হাজার পড়ুয়া এখান থেকে রবীন্দ্র ভাবনায় উদ্ভাসিত। একইভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজি নজরুল ইসলামকেও সম্মান জানাতে তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার ঘোষণা করেন। কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে কবির জন্মভিটে চুরুলিয়া থেকে অনেকটা দূরে আসানসোলে। তাই এবার কবির জন্মভিটেকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার দাবি জোরালো হচ্ছে। এখানে নজরুল অ্যাকাডেমি আজও বহু কষ্টে কবির নানা ব্যবহৃত সামগ্রী, পাণ্ডুলিপি প্রদর্শণী কক্ষে সংগ্রহ করে রেখেছে। কবির কক্ষ ভগ্নপ্রায় হয়ে রয়েছে। এখানে কবির স্ত্রী প্রমীলাদেবীর কবরস্থান ও তাঁর পাশে কবির কবরস্থানের মাটি এনে কবির স্মৃতিসৌধ রয়েছে। সকলেরই দাবি, শান্তিনিকেতনের আদলে চুরুলিয়াতেও গড়ে উঠুক এক বিশেষ পর্যটনক্ষেত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাসও এখানে করার দাবি অনেকের।
কবির জন্মজয়ন্তীর একদিন আগে এখানে কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী ও আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি গেলে তাঁদের কাছেও একই দাবি ওঠে। তাঁরা প্রস্তাব আকারে তা জমার দেওয়ার কথা বলেছেন। সেই মতো নজরুল অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক তথা কবির ভাইপো কাজি রেজাউল করিম বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে চাইছি কবির বাস্তুভিটের সংস্কার হোক। একটি অডিটরিয়াম, প্রদর্শণী কক্ষটির রক্ষণাবেক্ষণ ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির উপর কয়েকটি তোরণ করা হোক। যাতে মানুষ রাস্তা ভুল না করেন। আমরা সবগুলি প্রস্তাব আকারে জমা দেব।
এদিন বহু মানুষ কবিকে সম্মান জানান। কবির ভাইপো ছাড়াও নাতনি সোনালি কাজি, ব্লক সভাপতি সাধন রায় কবির স্মৃতিসৌধে মাল্যদান করেন। বিবি কলেজের অধ্যাপক অমিতাভ বসু বলেন, আমাদের কলেজে অনলাইনের মাধ্যমে কবিপ্রণাম অনুষ্ঠান হয়েছে। কবির জন্মভিটেকে নিয়ে অবশ্যই উন্নয়নমূলক কর্মসূচি করা প্রয়োজন। আসানসোল বাংলা অ্যাকাডেমির সভাপতি রামদুলাল বসু বলেন, চুরুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাস গড়া হোক।