কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
মালদহের মানুষ বিশ্বাস করেন ১২৭৫ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ইংরেজি ১৮৬৮ সালে বিধিবদ্ধভাবে এই পুজো আরম্ভ হলেও এর উৎস খুঁজতে গেলে ফিরে তাকাতে হবে বেশ কয়েক শতাব্দী পিছনে। ১৭৭১ সাল নাগাদ ইংলিশবাজার শহরের কুতুবপুর এলাকায় এসে বসতি স্থাপন করে আদি কংসবণিক সম্প্রদায়। তখন তাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে ব্রতী হন তারও আগে থেকে হয়ে আসা যোগদ্যাদেবীর পুজোয়। এরই কিছুদিনের মধ্যে স্বপ্নাদেশে মহানন্দা নদীর নিমতল্লি ঘাট থেকে প্রাপ্ত একটি পাথরচক্রকে দেবী চণ্ডী জ্ঞানে উপাসনা শুরু করেন তাঁরা। স্থানীয় জমিদার গিরিজাবাবু পরবর্তীতে দায়িত্ব নেন এই পাথরচক্ররূপী দেবী চণ্ডীর উপাসনার। শেষ বয়সে আদি কংসবণিক সম্প্রদায়ের হাতে তিনি তুলে দেন এই নিয়মিত পুজোর দায়ভার।
১২৩৫ বঙ্গাব্দে, বর্তমান মন্দির নির্মাণের প্রায় ৪০ বছর আগে থেকে মন্দির খিলানের বাম দিকে শুরু হয় দেবী চণ্ডীর আনুষ্ঠানিক পুজো ও আরাধনা। পরবর্তীতে ১২৭৫ বঙ্গাব্দের ৯ বৈশাখ কংসবণিক সম্প্রদায়ভুক্ত কমললোচন দত্ত, জগমোহন দত্ত, লক্ষ্মীকান্ত দত্ত ও মাধবচন্দ্র দত্ত’র দান করা জমিতে নির্মিত হয় আজকের দুর্গাবাড়ি। তবে নির্মাণের ২০ বছরের মধ্যেই এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১৮৯৭ সালে বড়সড় ক্ষতি হয় গৌড়ীয় ইঁটে নির্মিত মন্দিরের। তবে দমে না গিয়ে সকলে মিলে আবার শ্রম ও অর্থ দিয়ে পুরানো মন্দিরের কাঠামোর উপরেই গড়ে তোলেন বর্তমান মন্দির। তারপর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে দুর্গাবাড়িতে হয়ে আসছে মায়ের আরাধনা।
এই পুজোয় এখন আর বলির রীতি নেই বলে জানালেন মন্দিরের একনিষ্ঠ কর্মী দেবদীপ দত্ত। তবে এই মন্দিরে রাখা রয়েছে তিনটি প্রমাণ মাপের খাঁড়া। এগুলির আকৃতি দেখলে চমকে উঠবেন যে কেউ। তবে এই তিনটি খাঁড়ার উৎস নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন আগে এখানে মহিষ বলি হতো। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। আবার কারও মতে অন্য কোনও মন্দির থেকে এই খাঁড়াগুলি এনে রাখা হয়েছে দুর্গাবাড়িতে।
মহাষষ্ঠীতে বোধনের আগে অন্যান্য দুর্গাপুজোয় যখন নদী থেকে জল ভরা হয় তখন অন্য রীতি দুর্গাবাড়িতে। এখানে দেবীপক্ষের শুরুতেই জল নিয়ে আসা হয় নদী থেকে। তারপর মহাষষ্ঠী পর্যন্ত চলে নিত্য আরাধনা। তবে মায়ের মুখ দেখা যায় না বোধনের আগে। বিসর্জনের রীতিও ভিন্ন এখানে। বিজয়া দশমীতে মা দুর্গাকে সপরিবারে নিয়ে যাওয়া হয় নিমতল্লি ঘাটে। তারপরে নৌকা করে সপরিবারে মা যান মকদমপুরের সাহাপাড়ার মাতৃমূর্তির সঙ্গে দেখা করতে। দুই মাতৃমূর্তির কুশল বিনিময়ের শেষে দুর্গাবাড়ি’র মা সদরঘাটে ফিরে আসেন নিরঞ্জনের জন্য।
শুধু দুর্গাপুজোই নয়, বর্তমান সভাপতি জয়ন্ত দাস ও সম্পাদক শুভঙ্কর দাস জানালেন, একই রীতিতে হয় বাসন্তীপুজোও। সব মিলিয়ে ইংলিশবাজারের এই দুর্গাবাড়ি’র পুজোয় জৌলুস নয়, আকর্ষণ হৃদয়ের, আর নিখুঁত শাস্ত্রীয় উপাচারে। তাই হরেক থিম আর রংবেরঙের মণ্ডপ ও আলোর রোশনাইয়ের আকর্ষণ ঠেলে আজও ইংলিশবাজারের দুর্গাবাড়ি জেলার সেরা দুর্গা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম।