নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: তাঁর আর্জিতে সাড়া দিয়ে ঘরের লাইট বন্ধ হল। অন্ধকারে জ্বলে উঠল প্রদীপ কিংবা মোমের শিখা। এত পর্যন্ত ঠিকই ছিল। অনেকে এই অনুরোধে সাড়াও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাজি আর ফানুসের আধিক্য সেই ‘মহৎ’ উদ্দেশ্যের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। মোমবাতি জ্বালানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুরোধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও আতসবাজি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদী নেটিজেনরা।করোনা যুদ্ধে রবিবার রাতে ন’টা থেকে ন’টা ন’মিনিট পর্যন্ত ঘরের সব আলো নিভিয়ে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানোর অনুরোধ দেশবাসীর কাছে রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে অবশ্য বিতর্ক কম হচ্ছিল না। একদল বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য হল করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশবাসীর মনে জোর বাড়ানো। পাশাপাশি, এই যুদ্ধে অবিরত লড়াই করে চলা চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে জরুরি পরিষেবার কাজ যাঁরা করে চলেছেন, তাঁদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানানোর এক প্রতীকী মাধ্যম। কিন্তু এর পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় যা ঘটল, সেই দেদার আতসবাজি ফাটানো বা ফানুস ওড়ানো নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। টালিগঞ্জের বাসিন্দা ২৭ বছরের এক তরুণ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, মহামারির ‘উৎসব’ পালন করল দেশ। বাগুইআটির এক গৃহবধূ তির্যক কটাক্ষ, অকাল দীপাবলিতে কেউ বলে উঠল, আসছে বছর আবার হবে! দমদমের বাসিন্দা এক যুবক আবার গরিব এক বাবা-ছেলের কার্টুন পোস্ট করেছেন। ছবিতে ছেলে বাবাকে জিজ্ঞাসা করছে, বাবা মোমবাতি জ্বলছে, বাজি ফাটছে। আমরা জ্বালাবো না? বাবার উত্তর, আমাদের তো পেট জ্বলছে! তবে, সব থেকে ভাইরাল হয়েছে একজন ‘লাইটম্যান’-এর ভিডিও। যিনি ছোট-ছোট ব্লাব জ্বালানো জামা পড়ে রাস্তায় বেরিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোথাও আবার মোমবাতি জ্বালিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আগুনের খেলা দেখাতে গিয়ে মুখ পোড়ানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এভাবেই এই ‘উৎসব’ নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া।
কৃতজ্ঞতা জানানো নিয়ে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর ‘অভিনব’ উদ্দেশ্যের গুণগান গাইছেন অনেকেই। মানিকতলার পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি লিখেছেন, আলোকমালায় স্তদ্ধ হোক করোনার অশ্বমেধের ঘোড়া। সঙ্গে জোড়হাতের প্রতীকী কৃতজ্ঞতা। কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে সমালোচনাও ধরা পড়েছে। সরাসরি তীর্যক রাজনৈতিক মন্তব্যে সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর এই পরামর্শের। বারাসাতের এক তরুণী লিখেছেন, কেন এই আলোর উৎসব? এটা কি মৃত্যু-উদযাপন! একদিনের কার্ফুতে যেভাবে ঘণ্টা বাজানোর অনুরোধে দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করে রাস্তায় বেরিয়ে সবাই হৈ-হুল্লোড় করেছিল, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের অনুরোধ থেকে পিছু হটলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে নেট দুনিয়ায়।- নিজস্ব চিত্র