বিদ্যার্থীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অতিরিক্ত চিন্তার জন্য উচ্চ ... বিশদ
গ্রিক শব্দ 'টেলি' এবং ল্যাটিন শব্দ 'ভিশন' -এর যুগলবন্দীতে নামকরণ হয় টেলিভিশনের। ১৮৬২ সালে প্রথমবার তারের মাধ্যমে ছবি পাঠানো সম্ভব হয়। ১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী মে ও স্মিথ ইলেকট্রনিক সিগনালের মাধ্যমে ছবি পাঠানোর ভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এরপর বৈজ্ঞানিকমহলে টিভির আধুনিকীকরণের চেষ্টা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছিল। ১৯২৬ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড যুগান্তকারী আবিষ্কার করে ফেলেন। তার আবিষ্কৃত টেলিভিশনের মাধ্যমে সাদা-কালো ছবি দূরে বৈদ্যুতিক সম্প্রচারের মাধ্যমে পাঠানো সম্ভবপর হয়। বিশ্বে বাণিজ্যিক ভাবে টেলিভিশনের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৪০ সাল থেকে। অতঃপর ১৯৪৫ সালে যন্ত্রটি পূর্ণতা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় টিভির গুরুত্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। গত বেশ কয়েক দশকে টেলিভিশন, গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
সিআরটি টিভি
কিছুদিন আগে পর্যন্ত বাড়িতে সিআরটি টিভির চল ছিল বেশি। এই টিভিগুলি ওজনে ছিল বেশ ভারী। যে কোনও অ্যাঙ্গেল থেকে এই টিভির দেখার সুবিধা থাকলেও সমস্যাও ছিল বিস্তর। আকারে-ওজনে ভারীর পাশাপাশি বিদ্যুৎ খরচে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠে যেত। এই টিভির স্ক্রিনে দেখানে ছবি এখনকার মত ন্যাচারাল ছিল না। মূলত পিকচার টিউবের মাধ্যমে এই টিভি কাজ করত। ব্যবহার করা হত ভ্যাকুম টিউব, যার সাথে ছিল ইলেকট্রিক গান। একাধিক গান থেকে ইলেকট্রন বিম পর্দায় পড়ত। ফলে ফসফার কণাগুলি উজ্বল হয়ে পর্দায় ছবি ফুটে উঠত। এই কণাগুলির গঠিত হত লাল, নীল এবং সবুজ রংয়ের মাধ্যমে। ১৯৩০ থেকে প্রায় ২০০০ সাল পর্যন্ত চুটিয়ে ব্যবসা করেছিল সিআরটি টিভি। এরপর বাজার এলসিডির দখলে চলে যায়।
এলসিডি টিভি
সিআরটির আকার ছিল বেশ বড়। সেই টিভির তুলনায় এলসিডি বা লিক্যুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে ছিল অনেক বেশি আকর্ষণীয়। দেওয়ালে মাউন্ট করার সুবিধার পাশাপাশি ছিল দুর্দান্ত লুক এবং বিদ্যুতের কম খরচ। প্রদর্শিত ছবির মান উন্নত এবং ন্যাচারাল হওয়ায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এই টিভি। সমস্যার মধ্যে ছিল, যে কোনও অ্যাঙ্গেল থেকে এই টিভির ছবি ক্লিয়ার দেখা যেত না। এলসিডি টিভিতে ছিল না কোনও পিকচার টিউব। ওয়াইড স্ক্রিন হওয়ায় রেজ্যুলেশন ছিল ১৪৪০*৯০০-এর কাছাকাছি। এর প্যানেলে ব্যবহার করা হত সিসিএফএল ল্যাম্প। রেসপন্স টাইম কম নেওয়ায় ডিসপ্লেতে পিক্সেলগুলি সিআরটির তুলনায় দ্রুতগতিতে রং পরিবর্তন করতে পারত। ফলে সামনে বলে থাকা ব্যক্তি ক্লিয়ার ছবি দেখতে পেতেন। ২০০০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাজারে এলসিডির দাপট বজায় ছিল।
থ্রিডি টিভি
২০০৯ সালে থ্রিডি মুভি অ্যাভেটার রিলিজ করার পর থেকেই থ্রিডি সিনেমার রমরমা। তাই টিভিতেও ভোলবদলের প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি বাড়িতেও থ্রিডি সিনেমা দেখতে হবে। ব্যাস কোমর বেঁধে নেমে পড়ে একাধিক টিভি প্রস্তুতকারী সংস্থা। বাজারে চলে আসে থ্রিডি টিভি। চোখে বিশেষ চশমা পরলেই দেখতে পাওয়া যাবে টিভির পর্দা চিরে বের হয়ে আসছে জুরাসিক পার্কের ডাইনোসোরাস। এই প্রযুক্তি টেলিভিশন জগতে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়। থ্রিডি টিভিতে মাতোয়ারা হয়েছিল গেমিং দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাংশরাও। অ্যাকশন গেমে বন্দুক বা তরোয়াল হাতে সামনাসামনি শত্রুপক্ষের সঙ্গে মোকাবিলা সত্যিই এক অন্য অনুভূতি। এছাড়া থ্রিডি চশমা চোখে খেলা দেখার সময় মনে হবে আপনি যেন মাঠেই বসে আছেন। কিন্তু এহেন টেকনোলজির টিভি পিছিয়ে পড়ল শুধুমাত্র ব্যয়সাপেক্ষ বলে। এছাড়া সারা বছরে থ্রিডি মুভি বা গেম কম রিলিজ করাও এই টিভির জনপ্রিয়তা হারানোর অন্যতম কারণ।
এলইডি টিভি
এলসিডি এবং এলইডি টিভির ডিসপ্লে নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেকের ধারণা প্রযুক্তগত দিক থেকে এলইডি টিভি এলসিডির তুলনায় অনেকখানি এগিয়ে। তা কিন্তু একেবারেই নয়। বরং এলইডি টিভিকে এলসিডি টিভির আপগ্রেড ভার্সন বলা চলে। স্ক্রিনে আলোর উৎসের জন্য এটিতে সিসিএফএল লাইটের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে এলইডি লাইট প্যানেল। যার ফলে সামনে বসে থাকা ব্যক্তি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ছবি উপভোগ করতে পারেন। প্যানেলে এলইডি ব্যবহারের ফলে দুর্দান্ত ছবির দেখার পাশাপাশি বিদ্যুৎ খরচ প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যায়। ফলে মাসের শেষে বিদ্যুতের বিল মেটানোর সময় পকেট হালকা হয় না। নতুন এই টিভিতে কিছু অতিরিক্ত ফিচারও যোগ করা হয়েছে। অধিকাংশ এলসিডি টিভিতে পেন ড্রাইভের মাধ্যমে গান এবং ছবি দেখার সুবিধা ছিল। এলইডি টিভিতে এই দুই সুবিধার পাশাপাশি ব্লু-রে কোয়ালিটির মুভি দেখার ফিচারও যোগ করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই টিভি।
স্মার্ট টিভি
সবাই চায় স্মার্ট হতে। তাই টিভিই বা পিছিয়ে থাকে কেন। লেগে পড়েছে নিজেকে আপগ্রেড করতে। ২০১৭ সালের পর অধিকাংশ ব্যক্তিদের বাড়িতেই স্মার্ট টিভির রমরমা। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ক্রমেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে সকলে। সারাক্ষণ মোবাইলে ইউটিউব, গুগল খুলে খুটখাট। তাই টিভিতেও নেট সংযোগের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে একাধিক টেলিভিশন প্রস্তুতকারী সংস্থা। এলইডি টিভির তুলনায় ফিচারে খুব বেশি আপগ্রেড না হলেও গ্রহণযোগ্যতায় বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছে স্মার্ট টিভি। এলইডিতে যে সকল ফিচার রয়েছে তার পাশাপাশি ওয়াইফাইয়ের ফিচার যোগ করা হয়েছে স্মার্ট টিভিতে। ফলে টিভি খুলে ইউটিউবে সিনেমা দেখার পাশপাশি মোবাইলের একাধিক কাজ করাও সম্ভবপর হয়েছে। জেনারেশন ওয়াইয়ের কাছে অতিমাত্রায় সমাদৃত হয়েছে এই টিভি।
ওএলইডি
বিশ্বে টিভি তৈরির প্রযুক্তিকে বেশ খানিকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে ওএলইডি। অরগানিক লাইট এমিটিং ডায়োড ডিসপ্লে বা ওএলইডিতে রয়েছে অত্যাধুনিক ফিচার। এলসিডি বা এলইডির মত এই টিভিতে প্যানেলের পিছনে কোনও ব্যাকলাইট নেই। বরং স্ক্রিনের পিছনে থাকা প্রতিটি পিক্সেল থেকে স্বংয়ক্রিয় ভাবে আলো নির্গত হয়। এর ফলে ছবির প্রতিটি কালার হয় নিঁখুত এবং দুর্দান্ত। পাশাপাশি অত্যন্ত স্লিম হওয়ার ফলেই লুকেও বাজিমাত করেছে এই টিভি। বিদ্যুতের খরচ এলইডির তুলনা বেশ খানিকটা কম। বাজারে রয়েছে কার্ভ শেপেও ওএলইডি টিভিও। ফলে ঘরের যে কোনও স্থান থেকেই ক্লিয়ার ছবি দেখা সম্ভব। তবে দাম বেশ চড়া হওয়ায় আপাতত মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরেই রয়েছে এই টিভি।
ফোরকে টিভি
প্রযুক্তি কখনও থেমে থাকে না সময়েই সঙ্গে সঙ্গে তা আপগ্রেড হতে থাকে। এখন চর্চায় রয়েছে ফোরকে টিভি। যদিও ফোরকে টেকনোলজির ক্যামেরা বাজারে বেশ কিছুদিন আগেই এসেছে। ইউটিউবও বেশ কয়েক বছর আগেই ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে ফোরকে টেকনোলজির ব্যবহার শুরু করেছিল। এবার ফোরকে টেকনোলজিতে নাম লেখাল টিভিও। এই টিভির প্যানেলে আড়াআড়ি ভাবে রয়েছে ৩৮২০টি পিক্সেল এবং উপরনীচে রয়েছে ২১৬০ পিক্সেল। প্রায় চার হাজার পিক্সেল থাকার জন্যই এই টিভির নাম ফোরকে। রেজ্যুলেশন ক্ষেত্রে ফুল এইচডি এলটিভির তুলনায় প্রায় চারগুন এগিয়ে রয়েছে এই টিভি। কিন্তু বাজারে ফোরকে চ্যানেল নেই, রয়েছে এইচডি চ্যানেল। যা ফোরকে টিভির জন্য অনুপযুক্ত। সেজন্য এই টিভিতে রয়েছে ইউএইচডি আপস্কেলিং ফিচার। এর সাহায্যে এইচডি চ্যানেলের পিক্সেলকে ডবল করে ফেলা যায়। ফলে টিভির সামনে বসে থাকা ব্যক্তি ফোরকে টেকনোলজিতেই দুর্দান্ত পিকচার দেখতে পাবেন। বর্তমানে এই টিভির দাম প্রায় ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার বেশি।