সৃজনশীল কর্মে উন্নতি ও প্রশংসালাভ। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় যোগ। আধ্যাত্মিক ভাবের বৃদ্ধি ও আত্মিক তৃপ্তি। ... বিশদ
একটা সময় ঘন জঙ্গলে মাটির ঢিবির উপর ব্যাঘ্রচণ্ডী মায়ের পুজো হতো। কথিত আছে, প্রায় সাতশো বছর আগে মুলুটির রাজা বাজবসন্ত রায়ের নাতি বাম রায় মন্দির নির্মাণ করে শীলামূর্তিতে এই পুজো শুরু করেন। সাধক বামাখ্যাপা তারাপীঠ থেকে মুলুটি গ্রামে তারা মায়ের বোন মা মৌলীক্ষা কালী মন্দিরে যাওয়ার আগে বনহাটে অবস্থিত ব্যাঘ্রচণ্ডী মায়ের পুজো করে তবেই সেখানে যেতেন। কিন্তু বহু বছর ধরে মন্দিরটির ভগ্নপ্রায় অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে এলাকাবাসীর দানে সেখানে মায়ের পাকা মন্দির, ভোগ ঘর ও একটি গেস্ট হাউস নির্মাণ হয়েছে। গতবছর জানুয়ারি মাসে দেবীর মার্বেলের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
মুসলিম অধ্যুষিত বনহাট গ্রাম। খুব অল্প সংখ্যক হিন্দু ও আদিবাসী পরিবারের বসবাস। মন্দির ও গেস্ট হাউস নির্মাণে বেশি অবদান রয়েছে মুসলিমদেরই, এমনটাই দাবি মন্দির কমিটির। প্রতি বছরই ঘটা করে এখানে অম্বুবাচী উৎসব পালিত হয়। তবে যত দিন যাচ্ছে আড়ম্বর বেড়েই চলেছে। এদিন সকাল ১০টা থেকে মায়ের বিশেষ পুজো শুরু হয়। প্রতিবছরের মতো এবছরও পুজো দেখতে আসেন বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুরের দিকে পাঁচ রকম ফল, কাজু, কিসমিস দিয়ে তৈরি পায়েস, খিচুড়ি, পাঁচ তরকারি ও চাটনি দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। আর সেই ভোগ রান্না করেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে। এবছর ভোগ রান্না করেছেন, কাপাস শেখ, বাসাই শেখ, হৃদয় চট্টোপাধ্যায়, কার্তিক মাল, সাবা হেমব্রম, মাতাল হেমব্রম, চণ্ডীচরণ চট্টোপাধ্যায়, পার্থ মণ্ডলরা। কাপাস বলেন, ব্যাঘ্রচণ্ডী মাতার অম্বুবাচী উৎসব সব সম্প্রদায়ের মিলনের উৎসব। এখানে জাত ধর্ম বলে কিছু নেই।
মন্দির কমিটির সভাপতি স্বপন মণ্ডল বলেন, আদিবাসী, হিন্দু, মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মানুষ পুজোতে অংশগ্রহণ করে আসছেন। এদিন বনহাট অঞ্চলের ৩৬টি গ্রামের প্রায় হাজার দশেক মানুষকে মায়ের ভোগ খাওয়ানো হয়েছে। কামাখ্যা মায়ের অম্বুবাচী উৎসব যখন হয়, তখন এখানেও সেই উৎসব পালিত হয়।
মন্দির কমিটির অন্যতম সদস্য এলাকার তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন প্রধান জহরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর অম্বুবাচী তিথি মেনে নিষ্ঠা সহকারে এখানে পুজো হয়ে আসছে। তবে অন্যান্য তিথিতে এখানে বলি দেওয়ার প্রথা থাকলেও এই দিনটিতে কোনও বলিদান হয় না।
এলাকাবাসীর মতে, অম্বুবাচী একটি ধর্মীয় আচার হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের প্রাচীন কৃষি পদ্ধতিও। আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী যখন বর্ষার জলে সিক্ত হয়ে ওঠে তখন তাকে ঋতুমতী বলে মনে করা হয়। বসুমতীকেও সেই রূপেই কল্পনা করা হয়। এলাকার চাষিদের মতে, এই তিন দিন বর্ষার জলে সিক্ত হয়ে ধরিত্রী চাষের উপযোগী হয়ে ওঠে।