ছোট ও মাঝারি ব্যবসায় উন্নতি। বেচাকেনা আর উপার্জন বাড়বে। যে কোনও কাজে ব্যস্ততা বৃদ্ধির যোগ। ... বিশদ
তিনি বলেন, সামনে ঈদ, তাই কিছু বেশি রোজগারের উদ্দেশ্যে এবার কেরালার উদ্দেশে বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। শুক্রবার বিকেলে শালিমার স্টেশন থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেস রওনা দিই। আমার সিট ছিল ৩ এসিতে বি-১ কোচের ৭২ সাইড আপারে। সন্ধ্যার দিকে বালেশ্বর স্টেশন ছাড়ার আগে আমি নীচের সিটে বসে সহযাত্রীদের সঙ্গে গল্প করে উপরে উঠে শুয়ে মোবাইল দেখছিলাম। ট্রেন খুব ভালো চলছিল। তারপর হঠাৎ করে প্রবল ঝাঁকুনি অনুভব করি ও একটা বিকট শব্দ শুনতে পাই। ফের একটা ঝাঁকুনি অনুভব করি ও উপর থেকে নীচে পড়ে যাই। কী হয়েছে কেউ বুঝতে পারিনি। আমি নীচে পড়ার কিছুক্ষণ পর সংজ্ঞা হারাই। চোখ খুলে দেখি বগিতে কয়েকজন যাত্রী আছেন, বাকিরা নেমে গেছেন। আমিও নেমে দেখি বাইরে প্রচণ্ড চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে। চারিদিক থেকে মানুষের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। আশপাশে ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। টর্চের আলো নিয়ে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসছেন উদ্ধারের জন্য। তখন বুঝতে পারলাম ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
মতিন সাহেব আরও বলেন, ট্রেনের ইঞ্জিনের পরে কয়েকটি জেনারেল কামরার পর ছিল স্লিপার ক্লাস। তারপর এসি-২ ও এসি-৩ ছিল। তারমধ্যে এসি-৩ এর বি-১, ২ ও ৩ কোচ হেলে ছিল, পাল্টি খেয়ে পড়েনি। তাই আমাদের চোট লাগলেও প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু সামনের দিকের কোচের যাত্রীরা অধিকাংশ গুরুতর জখম ও মারা গিয়েছেন। চোখের সামনে দেখলাম মানুষ যন্ত্রণায় ছটফট করছে, অনেকে মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। একটি মেয়ে যন্ত্রণায় জল চাইছেন আর চিৎকার করছে। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ। এইসব দৃশ্য দেখে বসে বসে কাঁদছিলাম। মানুষ যে কত অসহায় তা প্রত্যক্ষ করলাম।
তাঁর সংযোজন, এক ঘণ্টার মধ্যে পুলিস প্রশাসন অ্যাম্বুলেন্স চিকিৎসক নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্য শুরু করে। স্থানীয়রা খুব ভালো পরিষেবা
দিয়েছে। আমাদের জল বিস্কুট দিয়েছে, সেইসঙ্গে উদ্ধারকার্যও চালায়। আমি ঘটনাস্থলে রাত ১টা পর্যন্ত ছিলাম। তারপর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে
পশ্চিমবঙ্গের যাত্রীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়। সেই বাসে শনিবার দুপুর নাগাদ কলকাতা পৌঁছই। বিকেলে হাওড়া
থেকে ট্রেন ধরে রাতে মালদহ টাউন স্টেশনে নামি। সেখান থেকে আবার উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ধরে সামসি স্টেশনে নেমে বাড়ি ফিরে আসি। বর্তমানে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে। বাড়ি ফিরেও সেই স্মৃতিই চোখে ভাসছে।