কর্মোন্নতি ও কর্মের প্রসার। সামাজিক সুনাম বৃদ্ধি। শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা। ধনাগম মন্দ নয়। দাম্পত্যে চাপ, ... বিশদ
কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা সুনীতিদেবীর বিয়ে হয়েছিল। এরপর থেকেই তিনি কোচবিহারে তাঁর নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিবিধ গঠনমূলক কাজের সাক্ষ্য রেখে গিয়েছেন। কিন্তু, তাঁর জন্মদিনের আগেও তাঁর মূর্তিটি চরম অবহেলায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
প্রাবন্ধিক দেবব্রত চাকি বলেন, কোচবিহারের নারীশিক্ষার প্রসারে সুনীতিদেবীর অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অবদান রয়েছে। কোচবিহারে এই ধরনের মূর্তিগুলির যথাযথ সংস্কার ও সংরক্ষণ প্রয়োজন। জন্মদিবস ও প্রয়াণদিবস এলে ওঁদের কথা মনে আসে। কিন্তু, সারাবছর অযত্নে মূর্তিগুলি পড়ে থাকে। এই ধারণার পরিবর্তন দরকার। নিয়মিত যাতে এগুলির দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয় সেইদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর রাখা উচিত।
কোচবিহার পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য দিলীপ সাহা বলেন, সুনীতিদেবীর জন্মদিবস পালন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
১৮৬৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কলকাতায় সুনীতিদেবীর জন্ম। ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন ও জগন্মোহিনী দেবীর সন্তান তিনি। কলকাতাতেই তিনি শিক্ষালাভ করেছিলেন। ১৮৭৮ সালের ৫ মার্চ মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। মনে করা হয় এই বিবাহের ফলেই কোচবিহারের ধর্মীয় জীবনে ব্রাহ্মধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটে। উচ্চ শিক্ষিতা, সংস্কৃতি মনস্কা সুনীতিদেবী কোচবিহারে আসার পরে কোচবিহারে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটে। কোচবিহারে ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সুনীতি কলেজ। বর্তমানে যা সুনীতি অ্যাকাডেমি। নারী শিক্ষার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাতেও তিনি প্রতিভার সাক্ষর রেখেছিলেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর বেশ কয়েকটি বই রয়েছে। জানা যায়, সুনীতিদেবী ছিলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি ইংরেজী ভাষায় আত্মজীবনী লিখেছিলেন। তাঁর আত্মজীবনীর নাম ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি অব অ্যান ইন্ডিয়ান প্রিন্সেস’। ১৯৩২ সালের ১০ নভেম্বর এই বিদূষী মহারানি প্রয়াত হন।
আজ আর রাজআমল নেই। কিন্তু, কোচবিহারের আবেগের সঙ্গে মহারাজারা আজও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সেই সময় তাঁদের তৈরি করা ভবন, মন্দির সহ প্রায় সবকিছুকে হেরিটেজের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। কোচবিহারকেও হেরিটেজ শহর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ চলছে। অথচ কোচবিহারের কাছারি মোড় সংলগ্ন সব থেকে ব্যস্ততম রাস্তা সুনীতি রোডের ধারেই অবহেলায় পড়ে রয়েছে সুনীতিদেবীর মূর্তি। আর এই মূর্তির ঠিক পেছনেই আছে ব্রাহ্ম মন্দির। সেটিও বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায়। রাজ ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য শহরকে যখন সাজিয়ে তোলার নানা উদ্যোগ চলছে, তখন সুনীতিদেবীর মূর্তির এই অবহেলিত চেহারা বড়ই বেমানান বলে শহরবাসী মনে করেন।