হঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ
বৃদ্ধ টম ব্যারির আজও মনে আছে, ফুটবল-সম্রাট পেলেকে আনতে কী কাণ্ড-কারখানাই না করতে হয়েছিল নিউ ইয়র্ক কসমসকে! এই গল্পের মুখবন্ধ শুরুই ‘না’ দিয়ে। পেলে তখন স্যান্টোসে চুটিয়ে খেলছেন, গোল করছেন। কসমসের প্রস্তাব কানে যাওয়া মাত্র তা পত্রপাঠ উড়িয়ে দেন। পরামর্শদাতা প্রফেসর জুলিও মাজ্জেইকে বলে দেন, ‘প্রফেসর, ওদের বলে দাও ওরা পাগল হয়ে গিয়েছে।’ কিন্তু কসমস টিমের ম্যানেজার ক্লাইভ টয় দমে না গিয়ে আরও বদ্ধপরিকর হয়ে পড়েন তাঁকে আমেরিকায় আনার ব্যাপারে। লক্ষ্য ছিল একটাই— আমেরিকায় ফুটবল উন্মাদনা আমদানি। আমেরিকার ঘরোয়া লিগ তখন প্রায় শেষ। দু’টো জিনিস দরকার ছিল। এক, বিশ্বকাপ আয়োজন। দুই, পেলে।
কিন্তু পেলেকে আনার কাজ মোটেও সহজ ছিল না। কখনও জামাইকার জাতীয় টিমের বিরুদ্ধে পেলের স্যান্টোস নামার আগে তাঁর সঙ্গে বৈঠক। কখনও আবার স্যান্টোসেরই ম্যাচে কিক অফের আগে মাঠের মাইক্রোফোনে টয়ের ঘোষণা, ‘কসমসের দশ নম্বর জার্সিটা তোমার জন্য তোলা থাকল পেলে। তুমি না এলে এই ক্লাবের আর কেউ এটা পরবে না।’ এমনকী ক্লাবের জার্সির রংও হলুদ করে দেওয়া হয়। ব্রাজিলের মতো। আর টয় ফুটবল-সম্রাটকে ক্রমাগত বুঝিয়ে চলেছেন, কেন তাঁকে কসমসের দরকার।
স্যান্টোস, সাও পাওলো, গুয়ারুজা—ব্রাজিলের প্রায় প্রতিটা শহরেই বৈঠকের পর বৈঠক। শেষ পর্যন্ত বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের মোটেলে একটা সাদা নোট পেপারে সই করেন পেলে। সরকারি নয়, বেসরকারিভাবে। এমন নানারকম নাটকের পর ১৯৭৫-এর ৩ জুন কসমসে সই করেছিলেন ফুটবল-সম্রাট। এবং ডালাস টর্নেডোর বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচেই কেরিয়ারের ১,২১৯ নম্বর গোলটা করেন তিনি।
সেই পেলেই কসমসের জার্সি পড়ে কলকাতার মাটিতে নেমেছিলেন। বিপক্ষে মোহন বাগান। মনে থাকবে না টম ব্যারির? নিউ ইয়র্ক কসমসের আদ্যন্ত ভক্ত যে তিনিও। বলেছিলেন ১৯৭৭ সালে শরতের বিকেলের গল্প। পেলে ছিলেন সেদিন মাঠে। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারও। ফুটবলের দুই মহাতারকাকে দেখতে মাঠে এসেছিল প্রায় ৭৮ হাজার দর্শক। নিউ ইয়র্ক কসমস সেদিন খেলছিল ফোর্ট লাওডারডেল স্ট্রাইকার্সের সঙ্গে। কোনও মার্কিন ফুটবল ক্লাবের ম্যাচে এর আগে-পরে কখনও এত দর্শক হয়েছে বলে জানা নেই কারও। যে ক্লাবে খেলতে এসে একসময় বেকেনবাওয়ার বলেছিলেন, ‘এখানে ড্রেসিংরুমে বসলে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বুঝি হলিউডে বসে আছি!’ এতটাই ঝলমল করত তখনকার কসমস। সেই ক্লাব ১৯৮৪ সালের পর আর প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলই খেলেনি! কারণটা অবশ্য আর্থিক। পেলে চলে গেলেন ১৯৭৭ সালেই। বেকেনবাওয়ার দ্বিতীয় দফায় ছিলেন ১৯৮৩ পর্যন্ত। সঙ্গে জোহান ক্রুয়েফও। কিন্তু তত দিনে দর্শক হারিয়ে কসমসের মাঠ যেন মরুভূমি। ফাঁকা পড়ে থাকে স্টেডিয়াম। আর দর্শক না এলে যা হয়—লোকসানে ডুবে গেল ক্লাব। বাধ্য হয়েই ১৯৮৪ সালে উত্তর আমেরিকার সকার লিগকে বিদায় জানাল নিউ ইয়র্ক কসমস। পেলে-বেকেনবাওয়ারের স্মৃতি নিয়েই স্বেচ্ছানির্বাসন!
৩০ বছর পর সেই নির্বাসন থেকে কসমসকে আবারও উত্তর আমেরিকার সকার লিগে ফেরানোর পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যে মানুষটির, তাঁর নাম সিমাস ও’ব্রায়েন। কয়েক বছর আগে যখন কসমসকে কিনে আবার প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ফেরানোর কথা যখন প্রথম বলেছিলেন, তখন বন্ধুরা তাঁকে স্রেফ মারতে বাকি রেখেছিলেন। কিন্তু খেলাধুলার বিপণন ও প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত ও’ব্রায়েন জানতেন কাজটা অসম্ভব কিছু না। হারানো গ্ল্যামার ফিরিয়ে আনতে শুরুতেই সম্মানসূচক সভাপতি করে আনা হল পেলেকে। তাঁর তত্ত্বাবধানেই আবারও দল গোছানোর কাজ চলতে থাকল। ও’ব্রায়েন চেষ্টা করেছিলেন কসমসকে সরাসরি মেজর লিগ সকারেই নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু ততদিনে নিউ ইয়র্ক থেকে নিউ ইয়র্ক রেড বুলস খেলছে, নতুন সুযোগ পেয়েছে ম্যানচেস্টার সিটির মালিকানাধীন নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কিস। মেজর লিগে দলের সংখ্যা না বাড়ালে আপাতত আর সুযোগ নেই কসমসের। তার আগে খেলতে হবে নর্থ আমেরিকান সকার লিগেই। কিন্তু ৩০ বছর পর নতুন করে শুরু করার জন্য সেটাই বা কম কী! এভাবেই বা ফিরতে পারে ক’টি ক্লাব?