নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: স্বঘোষিত ‘এলিট’দের কেউ একে বলেন ভিক্ষা। কেউ নাম দিয়েছেন খয়রাতি। অথচ এই সব প্রকল্পই আজ ‘নতুন ভারতে’র রাজনীতির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। যে দল যে আদর্শেই বিশ্বাসী হোক না কেন, এই একটি নীতি আঁকড়ে ধরেছে সকলেই—মানুষের হাতে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়া। কখনও তার নাম হয় ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, কখনও ‘কন্যাশ্রী’, কখনও ‘মাহাতারি বন্ধন’, কোথাও ‘লাডলি লক্ষ্মী’, কোনও রাজ্যে আবার ‘মাঈয়া সম্মান যোজনা’। গরিব রাজ্য ঝাড়খণ্ড। বড়লোক রাজ্য মহারাষ্ট্র। সকলেই শরিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথের। অবশেষে নিন্দা-সমালোচনা পেরিয়ে এবার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির সিলমোহর পেল এইসব জনস্বার্থবাহী সরকারি প্রকল্প। হাউজহোল্ড কনজামশন এক্সপেন্ডিচার সার্ভে রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে গ্রামীণ ভারতের পণ্য ক্রয় বাড়তে শুরু করেছে। অবদান? এই সরকারি অনুদান প্রকল্পগুলির। কারণ সরকারের থেকে মাসে অথবা বছরে নানাবিধ প্রকল্পে অর্থসাহায্য পাওয়া গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সংসার খরচের বাইরেও কিছু কিছু পণ্য কেনার মতো সাশ্রয় করে উঠতে পেরেছে। আর তাই ভোগ্যপণ্য সেক্টরের বিক্রি গ্রামীণ ভারতে বেড়েছে, মৃদু হারে হলেও। সব মিলিয়ে গ্রামীণ ভারতে বিগত বছরের তুলনায় সাড়ে ৩ শতাংশ বেড়েছে এই অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় প্রবণতা। সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ হল, সমীক্ষায় মানতে হয়েছে যে, পথ দেখাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, সবথেকে বেশি জনস্বার্থবাহী সরকারি অর্থসাহায্যপ্রাপ্ত রাজ্যগুলিতেই বৃদ্ধি পেয়েছে গ্রামাঞ্চলের পণ্য ক্রয়। এই তালিকায় সবার উপরে পশ্চিমবঙ্গ ও ছত্তিশগড়। বস্তুত এক বছর আগে বাংলাই ছিল সরকারি সাহায্য প্রদানে শীর্ষে। দ্বিতীয় ছিল ছত্তিশগড়। আর সদ্য সমাপ্ত বছরে ছত্তিশগড় এক নম্বরে। বাংলা দ্বিতীয় হলেও খুবই কাছে। অর্থাৎ টক্কর চলছে এই দুই রাজ্যের মধ্যেই। আর তার সুফলও মিলছে অর্থনীতিতে। কারণ, গ্রামীণ মানুষের কাছে অতিরিক্ত অর্থ আসায় তারা অতিরিক্ত খরচ করতে সক্ষম হয়েছে। তাতে বাজারে টাকার জোগান বাড়ছে। এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে পণ্যের চাহিদা। স্বাভাবিক নিয়মেই চাহিদা বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন বাড়বে। অর্থাৎ সোজা কথায়, উৎপাদন ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করায় পরোক্ষ ভূমিকা নিচ্ছে সরকারি অনুদান প্রদান কর্মসূচি।
পার ক্যাপিটা কনজামশন ভ্যালু নামক সমীক্ষায় সাফ দেখা যাচ্ছে, এক বছরে মাথাপিছু গড় ক্রয়ক্ষমতা ৩ হাজার ৮৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৪৭ টাকা। অর্থাৎ সরকারি সহায়তা পাওয়ায় সাধারণ মানুষ গড়ে ৩৫০ টাকার বেশি খরচ করতে পেরেছে। এই ভ্যালু শহর এলাকায় বেড়েছে ১.১৭ শতাংশ। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে সাড়ে ৩ শতাংশ। ছত্তিশগড়ে বিগত বছরে এই প্রবণতা বেড়েছে সর্বোচ্চ—৬.৮৬ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে বেড়েছে ৫.৩৯ শতাংশ। ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল কমিশন মনে করছে, এই প্রবণতার প্রধান কারণ ওয়েলফেয়ার স্কিম। অর্থাৎ সরাসরি সরকারের আর্থিক অনুদান। সেটা ভর্তুকি রূপেও হতে পারে। কিংবা হাতে নগদের জোগান বাড়ানো। কর্ণাটক তৃতীয়। এই রাজ্যটি কীভাবে জায়গা করে নিল তালিকায়? কারণ, কংগ্রেস ক্ষমতাসীন হয়ে বাসে মহিলাদের সফর ফ্রি করে দিয়েছে। শহরের মধ্যেই হোক অথবা দূরপাল্লা। কর্ণাটকের সর্বত্র সরকারি বাসে মহিলা যাত্রীর ভাড়া লাগে না। এটা অবশ্য দিল্লি মডেল। আর ওই খরচ বাঁচিয়ে মহিলারা সংসারের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন। তাহলে ইয়ারএন্ড রিভিউয়ে ভারতের রাজনীতি এবং ভোটের ইস্যুতে স্কিম অব দ্য ইয়ার কী? লক্ষ্মীর ভাণ্ডার!