সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ২৯ মার্চ: লকডাউন ভাঙা মানে নিজেরই প্রাণসংশয় করছেন। মৃত্যুকে ডেকে আনছেন। সুতরাং নিজেকে রক্ষা করতেই যথাসম্ভব ঘরবন্দি থাকুন। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর মাসিক রেডিও বার্তা ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে দেশবাসীকে এই কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মোদি বলেছেন, আমি জানি লকডাউন অনেক সমস্যা নিয়ে এসেছে প্রাত্যহিক জীবনে। বহু মানুষের জীবিকা থমকে গিয়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্পূর্ণ স্তব্ধ। এসবের জন্য আমি আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করছি। কিন্তু এছাড়া উপায় নেই। লকডাউন ভাঙবেন না। অমান্য করলে নিজের ও অন্যের জীবনকেই বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। এটা মেনে নেওয়া যাবে না। মোদি আজ বলেছেন, নিজেদের জীবন রক্ষা করতেই সম্পূর্ণ গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হবে। এরই পাশাপাশি আবার দেশজুড়ে গ্রাম থেকে শহরে যাওয়া হাজার হাজার শ্রমিক যেভাবে মরিয়া হয়ে দলে দলে ঘরে ফিরছে, কয়েকশো মাইল হেঁটে ভিড়ে ঠাসা বাস টার্মিনাসে একটু জায়গা পাওয়ার জন্য সংঘর্ষ করছে, সেই বিপজ্জনক প্রবণতা বন্ধ করার বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে তাঁর সরকার। কেন্দ্র আজ রাজ্যগুলিকে জরুরি নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের এভাবে জাতীয় সড়ক ধরে যত্রতত্র সফর করা বন্ধ করতে হবে। যে শ্রমিক যেখানে আছে, সেখানেই তাদের খাবার ও আশ্রয় দিতে হবে।
বিদেশ অথবা ভিনরাজ্য থেকে ফেরা কিংবা অসুস্থতার উপসর্গসহ যাদের সতর্কতার কারণে বাড়িতে অথবা হাসপাতালে পৃথকীকরণের আওতায় রাখা হচ্ছে, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করার প্রবণতা বৃদ্ধিতেও প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আজ রেডিও বার্তা ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই প্রবণতা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। কিন্তু মানসিক দূরত্ব তৈরি করবেন না। যোগাযোগ বন্ধ করবেন না পরস্পরের সঙ্গে। মানবিকতা বজায় রাখা দরকার এখন বেশি করে। যাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে তারা কিন্তু সংক্রামিত নয়। শুধু সাবধানতা বজায় রাখা হচ্ছে। তাই মোদি বলেছেন, এদের সঙ্গে কেউ যেন খারাপ ব্যবহার না করে। এই সচেতনতা আরও বেশি করে মানুষের মধ্যে সম্প্রসারিত করতে আজ মোদি কয়েকজন এমন মানুষের সঙ্গে রেডিওতেই কথা বলেন, যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাঁদের সংক্রমণের পর কী অভিজ্ঞতা এব কীভাবে তাঁরা করোনা ভাইরাসকে পরাজিত করলেন সেই বিবরণ আজ মোদি নিজেও শোনেন এবং দেশবাসীকেও শোনান। একইভাবে তিনি রেডিওতে সরাসরি কথা বলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতালে ভর্তি করোনা সংক্রমণের রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের সঙ্গে।
আজ মোদি বলেছেন, শুরু থেকেই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করা দরকার। তাহ঩লেই একমাত্র সেই রোগকে পরাজিত করা সম্ভব। মোদি বলেছেন, আজ এই ২১ দিনের মধ্যে আমাদের সর্বাগ্রে দরকার প্রকৃত নায়কদের পাশে থাকা, তাঁদের কুর্নিশ করা, তাঁদের সাধুবাদ দেওয়া। আমরা যখন প্রত্যেকেই নিজেদের সুস্থ রাখার জন্য ঘরবন্দী, তখন বিদ্যুৎ, সাফাই, জল, রান্নার গ্যাস, মুদিখানা, সব্জি, গাড়িচালক, ব্যাঙ্ক পরিষেবায় যাঁরা নিরন্তর যুক্ত আছেন, তাঁরা কিন্তু নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। মোদি বলেছেন, আজ আমাদের দেশের চিকিৎসকরা ধন আর যশকে ভুলে শুধু দেশবাসীর নিঃস্বার্থ সেবাই করে যাচ্ছেন। আজ জাতির উদ্দেশে তাঁর মন কি বাত রেডিও অনুষ্ঠানে মনে করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হয়তো নতুন কোনও ঘোষণা করবেন। তবে আজ সেরকম কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানাননি প্রধানমন্ত্রী। লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়বে কি না সেরকম কোনও আভাসও দেননি। ২১ দিনের লকডাউনের ইতিবাচক দিক কী? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নিজেকে চেনা ও জানার এটা একটা সুযোগ এনে দিয়েছে। নিজের সঙ্গে সময় কাটান। নিজেকে জানুন!