সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়, কাকদ্বীপ: অনেক বড় বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। সরকারকে একটু সময় দিন। সরকার আপনাদের পাশে আছে। অধৈর্য হবেন না, সাধারণ মানুষের কাছে এই আবেদন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার আকাশপথে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে কাকদ্বীপে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকের পরই মুখ্যমন্ত্রী গত কয়েকদিনের বিদ্যুৎ সঙ্কট নিয়ে বলেন, গত বছর ওড়িশায় ফণী আছড়ে পড়েছিল। দেড় মাস ওখানে বিদ্যুৎ সঙ্কট ছিল। এখন করোনার জন্য বহু জায়গায় মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কর্মী কাজ করছেন। লকডাউনের জন্য অনেকে কাজে আসতে পারছেন না। কাকদ্বীপ থেকে ফিরে নবান্নেও তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে বলেন, এটা জাতীয় বিপর্যয়। এর ফলে বহু জেলাতেই বিদ্যুতের পোল উল্টে গিয়েছে, তার ছিঁড়ে গিয়েছে, কিন্তু কর্মীর অভাবে দ্রুত সংযোগ ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। এটা নিয়ে রাজনীতি করবেন না। যাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের সমস্যাটা অনুভব করতে পারছি। মানুষ তো তাঁর সমস্যার কথা বলবেই। এটাকে আপনারা বিক্ষোভ বলছেন কেন? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কলকাতায় বিদ্যুতের দায়িত্বে রয়েছে সিইএসসি। মনে রাখতে হবে, এটি একটি বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে সরকারের উপর। তবে বিদ্যুৎ সমস্যার দ্রুত সমাধানে মুখ্যমন্ত্রী ১৫০ জেনারেটর লাগানোর প্রস্তাব দেন। সরকারের পক্ষ থেকেও প্রায় ৯০টি জেনারেটরের ব্যবস্থা ইতিমধ্যে করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এদিন রাতে সিইএসসি দপ্তরেও পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন, উম-পুন ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে বলেন, ১০ লক্ষ বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ৫৬ টা গুরুত্বপূর্ণ নদীবাঁধ ভেঙেছে। হাজার হাজার বিদ্যুতের পোল উল্টে গিয়েছে। অনেক পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব দপ্তরকে সমীক্ষা করতে হবে। কেন্দ্রীয় টিম আসছে, তাদের ভালো করে গোটা পরিস্থিতি জানাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ঝড়ে ৬ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। গোটা রাজ্যে মোট ৮৬ জন মারা গিয়েছেন। আজ পাঁচ মৃতের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা করে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই দুর্যোগের পর ভুটান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছিলেন। আমি তাদের বলেছি, এত বড় বিপর্যয় জীবনে দেখিনি।
মমতা জানান, এই মুহূর্তে আমাদের রাজ্য একসঙ্গে চারটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। করোনা, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিক এবং বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। রাজ্যের অবস্থা ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই গত দু’মাসে ৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে শুধু কোভিড মোকাবিলায়। সবটা সামলাতে একটু তো সময় দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এই রাজ্যে প্রায় দেড় কোটি মানুষ সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে নানারকম আর্থিক সুবিধা পান। মানুষ সেই টাকা পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগ যেন না আসে বলে অফিসারদের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সেইসঙ্গে বেসরকারি বাস মালিকদের কাছে আবার অনুরোধ করেন, এখন মানুষ বিপদে আছে, তাই বাস চালাতেই হবে। বাসের ভাড়া বাড়ানো এখনই সম্ভব নয়।

 কাকদ্বীপে মমতা। ছবি: ভাস্কর মুখোপাধ্যায়