নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পাথরপ্রতিমা থেকে ফেরার পথে অন্ধকারে শামুকে পা কেটেছে তাঁর। টিটেনাস নিতে নিতে ফোনে মৃত্যুভয় উড়িয়ে দিয়ে বললেন, মানুষ মরে একবার। কাপুরুষ মরে বারবার। এই অবস্থাতেও রবিবার মৌসুনি দ্বীপে পৌঁছে যান। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। উম-পুনের আগে থেকেই রায়দিঘির বাড়িতে ঘাঁটি গেড়েছিলেন তিনি। গত তিন-চারদিনে রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি, জয়নগর, কঙ্কনদিঘি সহ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ত্রাণ বিতরণ থেকে বাঁধ মেরামতি সবেতেই হাত লাগিয়েছেন তিনি। সুন্দরবনকে হাতের তালুর মতো চেনেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন কান্তিবাবু। কীভাবে লবণাক্ত জমি পুনরুদ্ধারের কাজ করা সম্ভব, সেই বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও প্রত্যুত্তর পাননি। আক্ষেপের সুরেই বললেন, ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। সরকারি আধিকারিকদের দেখা নেই। এঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করতে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করছেন। সুন্দরবনের জমি থেকে নোনা জল বের করে আগামীদিনে আমন চাষ করা সম্ভব। আইলার পর সেই পদ্ধতি মেনেই ৯০ শতাংশ জমিতে সেই সময় চাষ হয়েছিল। রায়দিঘির মথুরাপুরে ১৯টি জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। যার মধ্যে ১৪টি বাঁধ গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়েই মেরামতের ব্যবস্থা করেছেন কান্তিবাবু। শনিবার ঘরে ফেরার পথে এক মৃতের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন অর্থ সাহায্য। সম্বল বলতে ভাড়া করা একটা নৌকা, আর প্রবল মনের জোর। সঙ্গে ‘মানুষের অফুরান ভালবাসা’।
২০০৯ সালে আয়লার সময়েও গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্ধার, ত্রাণের কাজ করেছিলেন কান্তি। সেই কথা এখনও এলাকাবাসীর মুখে মুখে ঘোরে। বাদ যায়নি বুলবুলের সময়ও। বাড়ি-বাড়ি ঘুরে মানুষকে সাহায্যের বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালের পর অল্প মার্জিনে হলেও ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল প্রার্থী দেবশ্রী রায়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন এই বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা। তবে হারলেও সুন্দরবনের মানুষের পাশ থেকে নিজেকে কখনও সরিয়ে নেননি ডাকাবুকো এই নেতা। বাম জমানার আয়লা হোক বা তৃণমূল জমানার বুলবুল, এই বয়সেও দৌড়ঝাঁপ করা তাঁর কাছে কোনও সমস্যা নয়। সুন্দরবন তল্লাটে তাঁকে নিয়ে একটা প্রবাদ আছে, ‘ঝড়ের আগে কান্তি আসে।’
বাঁধ মেরামতের কাজে তদারকি করছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র