নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: করোনা ভাইরাসের কারণে মিষ্টির দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, রাজ্যজুড়ে মিষ্টির দোকান খোলা রাখা যাবে। তবে তা রাখতে হবে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত। মুখ্যমন্ত্রীর কথা মেনে মঙ্গলবার মিষ্টির দোকান খোলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময় নিয়ে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। তবে তাঁরা এটাও বলছেন, মিষ্টি বিক্রি থেকেও বড় বিষয় সবাইকে সুস্থ রাখা। সময় কমিয়ে যদি করোনার আক্রমণকে আটকানো যায়, তাহলে তাঁরা এটুকু মেনে নিতেও রাজি। পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবীন্দ্রকুমার পাল বলেন, যেভাবে দুধ নষ্ট হচ্ছিল, তাতে কিছুটা লাগাম দেওয়া যাবে মিষ্টির দোকানগুলি খুললে। আমরা খবর পাচ্ছিলাম, হাজার হাজার লিটার দুধ ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন ঘাটাল মালিকরা। বিপুল টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছিল তাঁদের। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল, একাধিক খাটাল মালিক গোরু ও মোষ বিক্রি করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। আমরা ঠিক করেছি, দোকানের মধ্যে দু’জনের বেশি ক্রেতাকে আসতে দেবো না। তাও তাঁদের দোকানের বাইরে অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, দুপুর বারোটা থেকে চারটে পর্যন্ত মিষ্টি কিনতে অনেকেই আসতে চান না। বিশেষত গ্রামে ওই সময় দোকান বন্ধ রাখা হয়। তবু মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে আমরা হেলাফেলা করতে চাই না। কারণ ব্যবসা পরে। আগে প্রাণ। যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী ভিড় এড়নোর জন্যেই এই সময়টুকু বেছে নিয়েছেন, আমরা তাই তাঁর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করব।
মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থা কে সি দাশের কর্ণধার ধীমান দাশ বলেন, আমরা শোরুমগুলি বন্ধ রাখছি। এর কারণ, আমাদের মিষ্টির কারখানায় প্রায় ১০০ জন কর্মী কাজ করেন। তাঁরা ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। আমাদের দোকানে এসে তাঁরা কোনও রকম শারীরিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়ুন, বা তাঁদের মাধ্যমে ক্রেতাদের কোনও সমস্যা হোক, এটা আমরা চাই না। সেই কারণেই আমরা ব্যবসা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কী বলছেন জেলার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা? হুগলি জেলা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি অমিতাভ দে বলেন, যেহেতু দুপুর বারোটা থেকে চারটে পর্যন্ত মিষ্টির দোকান খোলা থাকছে, তাই সব ধরনের মিষ্টির সম্ভার আমরা রাখতে পারব না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে কড়া পাকের সন্দেশ বা ওই জাতীয় কিছু জিনিস রাখছি। আসলে যে রকম গরম পড়েছে, তাতে দুপুরবেলা ক্রেতারা মিষ্টি কিনতে খুব একটা আগ্রহী হবেন না বলেই মনে হয়। যদি সকাল ন’টা থেকেও বিকেল চারটে পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে হয়তো সব পক্ষেরই ভালো হত। তবু এটাও বলব, সবার স্বাস্থ্য যাতে ভালো থাকে, সেই দিকটিও আমাদের নজর দেওয়া দরকার। -নিজস্ব চিত্র