উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
মুকুলবীথি। শুধু আর শব্দ নয়। শিশুদের ভবিষ্যৎ গঠনের উজ্জ্বল ঠিকানা। স্নেহ, ভালোবাসা, নিয়মানুবর্তিতা, ব্যক্তিত্ব বিকাশের অভিনব প্রতিষ্ঠান। সুন্দর পরিবেশে সহানুভূতির সঙ্গে বেড়ে ওঠা শিশুদের নিজের বাড়ি। এই ধরনের একটা স্কুল তৈরির স্বপ্ন ছিল রেণুকা সেনের। সেই ইচ্ছেটা বেশিমাত্রায় তীব্র হল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময়। ওখানে তিনি দেখতেন, ছোটদের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাই মনে মনে কষ্ট পেতেন। তাঁর এই উপলব্ধির কথা জানতেন স্বামী অমিয় সেন। তাঁরা বুঝেছিলেন, শিশুদের জন্য স্কুল গড়তে দরকার জ্ঞানার্জন। সে জন্যই পাড়ি দিলেন রাশিয়া, চীন ও ইংল্যান্ডে। দু’জনেই বিশেষ ডিগ্রি লাভ করে ফিরলেন দেশে। শুরু হল স্কুলের পথ চলা। ৩৩/৩ বিডন স্ট্রিটে। রেণুকা সেনের পিত্রালয়ে। ১৯৫৬ সালের ৯ মে। কবিগুরুর জন্মদিনে। মাত্র একজন ছাত্রী নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের ভাবধারা ও মারিয়া মন্তেশ্বরীর শিক্ষাপদ্ধতির সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। ক্রমশই বাড়তে থাকল ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা। খোলা হল স্কুলের দ্বিতীয় শাখা। কাঁকুড়গাছির ১৮৮/১ সিআইটি রোডে। এখানে আড়াই থেকে শুরু করে ছয় বছরের শিশুরাই পড়ে। বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে প্রাতঃ ও দিবা বিভাগে। একই নিয়ম চলে আসছে দু’টো শাখাতে। শিক্ষিকাদের মাসিমা বলেই ওরা ডাকে। শিশুদের মতো শিক্ষিকারা একইরকম ইউনিফর্ম পরে আসেন। যাতে শিক্ষিকাদের অপরিচিত মনে না হয়। সুন্দর সাংস্কৃতিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বড় হবার সুযোগ পায়। মাসিমাদের সাহায্যে ওরা নিজের কাজ নিজেরাই করে। স্কুলের তৈরি একই রকম টিফিন শিক্ষাকর্মী ও শিক্ষিকারা খায়। নিজেদের টিফিন নিজেরাই পরিবেশন করে। নিজেরা হাত দিয়ে খেতে শেখে। নিজেদের ব্যাগ, জল, জুতো নিজেরাই গুছিয়ে রাখে।
ওদের প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রতি শুক্রবার বসে ‘মুকুলসভা’। গান, নাচ, আবৃত্তি ইত্যাদি অনুষ্ঠান পরিচালনা করে শিশুরাই। এখানে বিভিন্ন মনীষীদের জন্মদিন পালন করা হয়। রয়েছে লাইব্রেরি। অজস্র বইয়ে ভরা লাইব্রেরিটি ব্যবহার মা ও শিশুরাই করে থাকে। শিশুদের যে কোনও সমস্যা নিয়ে মায়েদের সাহায্য করেন মাসিমারা। সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য রয়েছে ‘মুকুলবীথি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়’। ওখানে নাচ, গান, আঁকা শেখে তিনশোর বেশি ছাত্র-ছাত্রী। বছরে একবার ওদের লেখা ও ছবি নিয়ে প্রকাশিত হয় মুকুল পত্রিকা। ৬৩ বছর ধরে একই ঐতিহ্য ও পরম্পরা নিয়ে এগিয়ে চলেছে মুকুলবীথি। শ্রীমতী রেণুকা সেনের স্বপ্নের চারাগাছগুলি আজ মহীরুহ। সেই ছায়াতেই ‘মুকুলবীথি’ আজ পরিপূর্ণ।