গ্যালিলিও থেকে হকিং
ছোট বয়সেই আকাশের দিকে চোখ মেলে মানুষ ভাবতে শুরু করে, ওখানে কী আছে! ঠাকুমার দিদিমার মুখে চাঁদের চরকা কাটা বুড়ির গল্প শোনে, শোনে মানুষ মরে গেলে আকাশের তারা হয়ে যায়! ওই আকাশেই কোথাও আছে স্বর্গ, যেখানে দেবতাদের বাস! এসব শুনতে শুনতে একটা বয়সের পর মানুষ বুঝতে পারে এসব নেহাতই গল্পকথা। কিন্তু মাথার ওপর খোলা নীল চাঁদোয়ার রহস্যভেদ হয় কি? মানবসভ্যতার শুরু থেকেই মহাকাশ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। শুরুতে মানুষের কল্পনাপ্রবণ মন মহাকাশের কাল্পনিক কিছু ব্যাখ্যা শুনিয়েছিল। অতঃপর শুরু হয় যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যা, গাণিতিক বিশ্লেষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি। অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে সদ্য প্রয়াত স্টিফেন হকিং পর্যন্ত মহাকাশ গবেষণায় নানা কিছু অবদান রেখেছেন। সেগুলো পড়লে মহাকাশ সম্পর্কে কৌতূহলজনক অনেক তথ্য জানা যায়। কিন্তু বিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব আর আঁকজোক তো সবার ভালো লাগে না, অথচ মহাকাশ নিয়ে জানার আগ্রহ প্রবল। তাঁদের জন্য সুখবর। অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় মহাকাশ বিজ্ঞানের এযাবৎ হওয়া সমস্ত গবেষণার সারকথা দুই মলাটে বন্দি করেছেন চন্দনসুরভি দাস। চন্দনও পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র নন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মহাকাশ নিয়ে তাঁর আগ্রহ তাঁকে দিয়ে এ কাজ করিয়ে নিয়েছে। অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে স্টিফেন হকিং পর্যন্ত সবার কাজ সরল গদ্যে, আকর্ষণীয় শৈলীতে লিখেছেন তিনি। সঙ্গে বিজ্ঞানীদের জীবনী এবং তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সেই সব বিজ্ঞানীদের যে কঠিন লড়াই লড়তে হয়েছে চার্চের বিরুদ্ধে তার বর্ণনা রয়েছে বইটিতে। ‘গ্যালিলিও থেকে হকিং সৃষ্টির আদি থেকে অন্তে...’ বইটি প্রকাশ করেছে কলকাতা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা। দাম ১৫০ টাকা। বইটি কলেজ স্ট্রিটের দ্য সেন্ট্রাল বুক এজেন্সিতে পাওয়া যাবে।

রবীন্দ্রনাথ ও প্রিয়ম্বদা
পত্নীবিয়োগের পর ‘তাঁর’ সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ফের বিবাহের প্রস্তাব এসেছিল। রবীন্দ্রনাথের বাবারও আপত্তি ছিল না। কিন্তু বাদ সেধেছিলেন কবি স্বয়ং। ‘তিনি’ কবি প্রিয়ম্বদা দেবী। বিবাহের প্রস্তাবে সম্মতি না দিলেও আজীবন প্রিয়ম্বদার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি মধুর ও গভীর সম্পর্ক ছিল। প্রিয়ম্বদা দেবীর স্বামী ও ছেলের মৃত্যুর পর শোকসাগর থেকে ফের তিনি উঠে এসেছিলেন সাহিত্য ও কাব্যের হাত ধরে। রবীন্দ্রনাথ এ সময়ে তাঁর পাশে না থাকলে প্রিয়ম্বদার সাহিত্যচর্চা পূর্ণতা পেত কি? রবীন্দ্রনাথ ও প্রিয়ম্বদা দেবীর সম্পর্ক এযাবৎ রবিপ্রেমীদের কাছে অনালোকিতই ছিল। পুস্তকাকারে তা প্রকাশিত হল এবারে। লিখেছেন পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রকাশ করেছে দে’জ পাবলিশিং। দাম ১২০ টাকা।

পিপাসা যখন
প্রধান নারীচরিত্র ‘অভিজ্ঞতা’কে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানান জটিল মানসিক ও সামাজিক আবর্তের ঘূর্ণীপাক। একটি সুন্দরী ও বিদূষী মেয়ে যদি ডিভোর্সি হয়, তাহলে তাকে বরাবরই সমাজের নানান পঙ্কিল স্রোতের টানাপোড়েন সইতে হয়। বনানী শিকদারের ‘পিপাসা যখন’ উপন্যাসটি দর্পণ হয়ে উঠেছে আমাদের সমাজের। একা এক নারীকে তার জীবনযুদ্ধ যুঝতে গিয়ে বারবার দু’হাতে কাটতে হয় পাহাড়প্রমাণ প্রতিকূলতার বাধা। বাইরে পড়াশোনার জন্য ষোলো বছরের সন্তান শ্রাবণের সান্নিধ্য সে পায়না। শুভদীপ, একজন নামী লেখক, যে বহিরঙ্গে উপকারী মানুষ। মনের গভীরে অভিজ্ঞতাকে পাওয়ার কামনায় স্ত্রী সন্তানকে ভুলে উপকারীর মুখোশ পরে থাকে। বিদগ্ধ ইন্টেলেকচুয়ালের ছদ্মবেশে সে এগতে চেষ্টা করলে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে অভিজ্ঞতার। আসে ডিভোর্সি সুজয়। আসে লম্পট দেশপান্ডে। বিধ্বস্ত, ক্লান্ত, অধৈর্য অভিজ্ঞতা চেষ্টা করে দু’হাতে এইসব পাঁক সরিয়ে বেরিয়ে আসতে। সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা আরও বড় এক আইনি জটিলতা। আইনজ্ঞ দিবাকর বাগচী এগিয়ে আসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। অভিজ্ঞতা বোঝে, ভালোবাসার ফুল শুধু দিদাকরের মনেই ফোটেনি, ফুটেছে তার মনেও। কিন্তু তার ছেলে শ্রবণ? আকর্ষণীয় উপন্যাসটি পাঠককে সেই উত্তরের দিকেই নিয়ে যাবে। বইটির প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জা সুন্দর। প্রকাশক প্রিয়া বুক হাউস। দাম ২৫০ টাকা।

স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী