শেয়ার ও বিমা সূত্রে অর্থাগম হতে পারে। কাজের প্রসার ও নতুন কর্মলাভের সম্ভাবনা। বিদ্যা হবে। ... বিশদ
শিরোনামে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা। নেপথ্যে র্যাগিংয়ের অভিযোগ। আজীবনের জন্য ডিপ্রেশন সঙ্গী ছাত্রীর। যার কারণ খুঁজতে গিয়ে মনোবিদ সন্ধান পেলেন কলেজ জীবনের র্যাগিংয়ের ঘটনা। এহেন নানা ঘটনা প্রতি মুহূর্তে ঘটছে চারপাশে। কখনও তা নিয়ে খবর হয়। কখনও বা তা চাপা পড়ে থাকে অন্ধকারে। আসলে র্যাগিং একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দোষ প্রমাণিত হলে হাজতবাস, জরিমানার মতো নানাবিধ শাস্তির বিধান রয়েছে আইনে। কিন্তু তা জানেন ক’জন? সঠিক সময়ে অভিযোগ দায়ের করা প্রয়োজন। অভিযোগপত্রেই বিভিন্ন ধারা যোগ করে দেওয়া যায়। তাও জানেন না অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে কী করণীয়, তার পরামর্শই দিলেন আইনজীবী পিয়ালী বসাক।
পিয়ালী জানালেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাধারণভাবে অভিযোগ প্রমাণ হলে দু’বছরের জেল এবং দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। প্রথমেই গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিতে হবে। কোথায় করবেন অভিযোগ? তার জন্য রয়েছে অ্যান্টি র্যাগিং সেল। রয়েছে একটা টোল ফ্রি নম্বরও। ১৮০০১৮০৫৫২২। এটা সাতদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। অভিযোগ জানাতে পারেন হেল্পলাইন ইমেল অ্যাড্রেসেও। তা হল helpline@antiragging.in। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর প্রাথমিক পদক্ষেপ পুলিস গ্রহণ করবে। এই অভিযোগপত্র তৈরির সময়ই আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পিয়ালীর কথায়, ‘অধিকাংশ মানুষের সমস্যা যেখানে হয় তা হল, প্রাথমিক এফআইআর করার সময় ঘটনাটা সঠিকভাবে বর্ণনা করলেও আইনের সঠিক ধারাগুলো যোগ করতে পারেন না। তা যোগ করতে হবে অভিযোগপত্রেই। এফআইআর করার সময় সঠিক সেকশনগুলো উল্লেখ করা উচিত। একজন আইনজীবীর তৈরি করা চিঠি আর সাধারণ মানুষের তৈরি করা চিঠির মধ্যে পার্থক্য থাকবেই। পুলিস দেখলেই সেটা বুঝতেও পারে। আইনজীবী ঘটনা শুনে ভারতীয় দণ্ডবিধির যে ধারাগুলো যোগ করা প্রয়োজন, সেগুলো লিখবেন। সাধারণ মানুষের তৈরি করা অভিযোগপত্রে শুধু ঘটনা থাকবে।’
কোন কোন আচরণ র্যাগিংয়ের আওতায় পড়ে? পিয়ালী জানালেন, ধরা যাক কাউকে উদ্দেশ্য করে কেউ একটা খারাপ গান গাইল বা কটূ মন্তব্য করল। সাধারণভাবে হয়তো সেটা নিয়ে কেউ বিচলিত হন না। কিন্তু এটা ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৪ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ‘পাবলিক প্লেসে কটূ গান গাওয়া কটূ আচরণের জন্য এই ধারা অনুযায়ী অভিযুক্তের শাস্তি হতে পারে। দোষ প্রমাণিত হলে তিন মাসের জন্য হাজতবাস। সঙ্গে জরিমানাও যোগ হতে পারে’, বললেন পিয়ালী।
জোর জবরদস্তি করে কাউকে ঘরে আটকে রাখাও র্যাগিংয়ের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পিয়ালী বললেন, ‘এটা অফেন্স অব রংফুল কনসাইনমেন্ট। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৩৯ এবং ৩৪০ ধারা অনুযায়ী শাস্তি হতে পারে। জোর করে ঘরে আটকে রাখা মানেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দোষ প্রমাণিত হলে একমাসের হাজতবাস হতে পারে। সঙ্গে জরিমানা।’
কিছু অপরাধ জামিন অযোগ্য ধারার অন্তর্ভুক্ত। পিয়ালী জানালেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩২৪ ধারা অনুযায়ী শারীরিকভাবে আঘাত করলে এবং সাংঘাতিক অস্ত্র ব্যবহার করলে তা জামিন অযোগ্য ধারার আওতায় পড়বে। ‘ধরুন পাবলিক প্লেসে হেনস্থা করা হল বা এমনভাবে মারল যাতে আজীবনের জন্য শরীরের কোনও একটা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হল সেক্ষেত্রে এই ধারার আওতায় পড়বে। এছাড়া ৩৫৪ ধারার অন্তর্ভুক্ত হল ‘আউটরেজিং দ্য মডেস্টি অব আ উইমেন।’ সেটা হেনস্থা হতে পারে, মৌখিক আক্রমণ হতে পারে, জোর খাটানো হতে পারে। সেটাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধ প্রমাণ হলে এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হাজতবাস। সঙ্গে জরিমানাও হতে পারে।’
ধরা যাক, একজন র্যাগিং করছেন। বাকি তিন-চার জন তাঁর সেই কাজকে সমর্থন করছেন, সেক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪ নম্বর ধারা প্রযোজ্য হয়। ফলে ঘটনার লিখিত অভিযোগপত্রেই এগুলো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা দরকার। পিয়ালীর কথায়, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় এফআইআরের সময় সঠিক নাম লেখা হয়নি। সেটাই গোড়ায় গলদ। এফআইআর করার সময় কারা র্যাগিংয়ে যুক্ত, সেই চিহ্নিতকরণটা করে দেওয়া দরকার।’
প্রতিটি ঘটনা একে অপরের থেকে আলাদা। ফলে ঘটনার উপর রায়ও আলাদা হবে। কোন মামলায় কী রায় দেওয়া হবে, সেটা মাননীয় আদালতের সিদ্ধান্ত। কিন্তু প্রাথমিকভাবে র্যাগিংয়ের ঘটনা এড়াতে অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিলেন পিয়ালী। র্যাগিংয়ের শিকার হলে ভয় না পেয়ে প্রাথমিক অভিযোগপত্র তৈরির সময় থেকেই আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলে জানালেন তিনি।