পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
বটে, তবে তিনি নৌশাদ নন, স্বল্পপরিচিত মজনু লস্কর। নৌশাদদের সঙ্গে জোট ছিন্ন (পড়ুন হানিমুন শেষ) হওয়ার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় অনেক কেঁদেকঁকিয়ে অভিষেকের বিরুদ্ধে সিপিএম দাঁড় করিয়েছে ছাত্র ও যুব নেতা প্রতীক উর রহমানকে। কিন্তু এত আকাশ কাঁপানো হুঙ্কারের পরও বিজেপি যেমন এখনও ডায়মন্ডহারবারে যোগ্য প্রার্থীর তালাশ চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনই অজ্ঞাত কারণে গতবারের জেতা আসানসোল আসনটিও ফাঁকাই থেকে গিয়েছে। কেন? দলবদলু কম পড়িয়াছে! নাকি কারও আসার অপেক্ষায় দিন গুনছে গেরুয়া শিবির।
বাংলার রাজনীতি এই মুহূর্তে দু’টি মোক্ষম প্রশ্ন ঘিরে আবর্তিত। এক, বাংলায় কে কত আসন পাবে, মায় তৃণমল ক’টা আর বিজেপির প্রাপ্তিই-বা কত হতে চলেছে? এক একটি সমীক্ষক দল এক-একরকম দেখাচ্ছে। ওসবে না ভুলে ফল বেরনো পর্যন্ত অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। মোদিজি ক্ষমতায় আসবেন কি না, ক্ষমতায় ফিরলে কত আসনে জিতে আসবেন, তার চেয়েও এই বঙ্গে বড় প্রশ্ন রাজ্যের ৪২ আসনের ফল কী হবে? সিপিএমের শূন্যের কলঙ্ক মুছবে কি না? দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রমাগত আস্তিন গোটানোর পরেও অভিষেকের গড়ে বিরোধীদের প্রার্থী খুঁজে পেতে এত টালবাহানা কীসের? সত্যি তাঁরা তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের বিরুদ্ধে লড়ার মতো কোনও আগমার্কা সঙ্ঘী কিংবা দলবদলু নেতা পাচ্ছেন না? নাকি অভিষেকের গড়ে দাঁড়িয়ে কোনও লাভ নেই বলে এলেবেলেদের এগিয়ে দিতে গিয়েও কার্যক্ষেত্রে ঢোঁক গিলছেন। এমনও শোনা যাচ্ছে, অনেককে প্রস্তাব দিলেও এখনও বিজেপির কেউই ‘বলির বকরা’ হতে রাজি হচ্ছেন না। ডায়মন্ডহারবারে ভোট একদম শেষ পর্যায়ে ১ জুন। বিজ্ঞপ্তি জারি হতে ঢের দেরি। শেষ পর্যন্ত বিজেপি কাউকে খুঁজে পেলেও তুল্যমূল্য লড়াই কি আদৌ হবে!
অথচ ইডি কেন শুধু বেছে বেছে চুনোপুঁটিদের দুয়ারে, তা নিয়ে বাম ডান সব দলই গত দু’বছর ধরে অহরহ চিৎকার করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়েছে। তাঁদের একটাই দাবি, যে কোনও মূল্যে এজেন্সিকে আরও সক্রিয় হয়ে মাথার দিকে পৌঁছতে হবে। কে মাথা, কোথায় প্রমাণ, তার কোনও দিশা নেই। সবটাই হাওয়ায়। তবু কেউ কেউ এক পা এগিয়ে কালীঘাট, কেউ ডায়মন্ডহারবারের দুর্গে আঘাত হানার কথা বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশে যা দস্তুর। তাঁদের একটাই দাবি ছিল, দুর্নীতির গোড়ায় আঘাত হানতে হবে। ভাবটা এমন, সুযোগ পেলে এক ছুটে মাথাকে টেনে নামাবেন তাঁরা, শুধু ভোটটা আসতে দিন। কিন্তু গত একমাসের নির্বাচনী লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত যদি খতিয়ে দেখি তাহলে বুঝতে অসুবিধা হয় না এত কিছুর পরও শুধু ইডি, সিবিআই নয়, এরাজ্যের বিরোধীদেরও মাথা পর্যন্ত পৌঁছনোর সাহস নেই। তাহলে প্রথম তালিকাতেই ডায়মন্ডহারবারে হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়ে মোদির বিজেপি ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করত। ডায়মন্ডহারবারের জমি একতরফা শাসক দলকে ছেড়ে রাখতেন না। রাজ্যের বিরোধীদের আজব আশা, হাতের মোয়া পেড়ে দেবে কেন্দ্রের এজেন্সি। তাঁরা শুধু ঘোমটা খুলে ফল ভোগ করবেন আর তারিয়ে তারিয়ে মধু চাখবেন। কিন্তু ইচ্ছে আছে, সাধ্য নেই, হাওয়াই জাহাজ আছে, বন্ডের হাজার হাজার কোটি টাকা আছে, কিন্তু প্রার্থী বাড়ন্ত। সংগঠন অন্ধকারে। সেই কারণেই হাল খারাপ বুঝে রায়গঞ্জ থেকে এনে গতবারের জেতা এমপিকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে অচেনা দক্ষিণ কলকাতায়। আর ডায়মন্ডহারবারের জমি খালিই রাখা হয়েছে।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, বিজেপি তিন দফাতেও ৪২টি কেন্দ্রে প্রার্থীই দিতে পারেনি। অথচ কখনও ২৫, কখনও ৩৫ আসন জেতার খোয়াব দেখছে। প্রধানমন্ত্রী তো পুরো ৪২ আসনই চান। কিন্তু এ কী হাল! আসানসোল গেরুয়া দলের গতবারের জেতা আসন। শুরুতেই ভোজপুরী নেতা না অভিনেতা পালিয়েছেন। তৃণমূল ভেঙে কেউ যোগ দেননি বলে সেখানেও আপাতত প্রার্থী নেই বিজেপির। উল্টে পাঁচ বছর আগে আসানসোলে যিনি জিতেছিলেন তিনিও রং বদলে আজ তৃণমূলে।
এখনও সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি কংগ্রেস কিংবা সিপিএমও। অধিকাংশ আসনেই দুই দলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়ার লড়াই। শূন্যের কলঙ্ক মুছে দেওয়ার সংগ্রাম। ভোট শতাংশ কত দাঁড়াবে? ৬ থেকে ১৪ শতাংশ। দেওয়াল লিখন স্পষ্ট জেনেও গত একমাস ধরে জোটের জট ক্রমশ জটিল আকার নিয়েছে। পুরুলিয়ায় কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লক সম্মুখসমরে। একই অবস্থা একদা বামেদের গড় কোচবিহারেও। আমরা সবাই জানি গত কয়েক বছর ধরে এরাজ্যে আইএসএফ নামক সংগঠনটি বেড়েছে। এই বাড়বাড়ন্তে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় ও মদত দিয়েছেন সিপিএমের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। গত বিধানসভা ভোটের আগে তাঁদের নেতাকে মঞ্চে তুলে বিমান-সেলিমদের অদ্ভুত আহ্লাদও চোখ এড়ায়নি কারও। অধীরের ভাষণ থামিয়ে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয় ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা নৌশাদের দাদা আব্বাস সিদ্দিকিকে। ভাবটা এমন ছিল, জোড়াফুলের মুসলিম ভোটের কারিকুরি ভ্যানিশ হয়ে যাবে অচিরেই। এখন সেই আইএসএফ ‘গুরুদক্ষিণা’ দিতে শুধু সেলিমের মুর্শিদাবাদ আসনেই প্রার্থীই দেয়নি, শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থীকে তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলিমুদ্দিনকে বেজায় অস্বস্তিতে ফেলেছে। যাদবপুর ও ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে সিপিএম ও কংগ্রেসকেই বড় ধাক্কা দিয়েছে। আবার বসিরহাটে সিপিএম নিরাপদ সর্দারকে দাঁড় করিয়ে সিপিআইয়ের পুরনো ঘাঁটি কেড়ে নিয়েছে।
ওই যে বললাম, এরাজ্যে বাম কংগ্রেসের লড়াই এবার দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হওয়ার। কিন্তু যে বিজেপি বাংলা দখলের স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রচারে টেনে আনছে তাদেরও এত প্রার্থী সঙ্কট কেন? একাধিক জেতা আসনে পর্যন্ত প্রার্থী দিতে বিজেপি হিমশিম খেয়েছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে সেই জোড়াফুল শিবির ভেঙে আসা দলবদলুদের উপরেই ভরসা রাখতে হয়েছে। বারাকপুরের অর্জুন, উত্তর কলকাতার তাপস তো তৃণমূল ভেঙে আসা। সাময়িক আবেগে ভর করতে বসিরহাট ও কৃষ্ণনগরে একেবারে রাজনীতিতে আনকোরা অনভিজ্ঞ লোকেদের নামানো হয়েছে। সন্দেশখালির রেখা পাত্র কিংবা কৃষ্ণনগরের রাজমাতা হেরে গেলে পদ্ম পতাকা হাতে আগামী ২৬ সাল পর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দানে থাকবেন কি না তা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আবার বারাকপুরে এখনও বহু দেওয়ালে অর্জুন সিংয়ের পাশে তৃণমূলের প্রতীকই জ্বলজ্বল করছে। জয় বা পরাজয় যাই হোক, বারাকপুরে রাজ্যের পয়লা নম্বর বাহুবলীর দলবদলের এই রঙ্গ যে পুনরায় মঞ্চস্থ হবে না, তার গ্যারান্টি দেবে কে! বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের মানুষ আর কতবার বোকা বনবেন।
লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছে গত ১৬ মার্চ। তার আগে ১০ মার্চ রাজ্যের ৪২ কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো সেনাপতি অভিষেককে পাশে নিয়ে ভরা ব্রিগেডের জনগর্জন সভায়। তৃণমূলের আগেই প্রথমে
২০ আসনের নামের তালিকা দিলেও বেশকিছুটা থমকে ১৯ এবং শেষে দু’টি কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করেছে গেরুয়া শিবির। তৃতীয় দফায় যে দু’টি কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি তারমধ্যে আছে গতবারের জেতা ঝাড়গ্রাম ও অনুব্রতহীন বীরভূম আসনটি। এবার তো কেষ্টদা মায় বীরভূমের বাঘ সকন্যা তিহারে। চড়াম চড়াম ঢাক বাজানোরও কেউ নেই। তবু বীরভূমে প্রার্থী পেতে নাকাল হতে হল কেন? শেষে লড়াই যখন প্রায় একপেশে চেহারা নিয়েছে তখন সদ্য সরকারি চাকরি ছেড়ে আসা বিতর্কিত পুলিসকর্তাকে দাঁড় করিয়ে লজ্জা বাঁচাল বিজেপি। প্রমাণ হল, মুখে যতই বাংলা দখলের কথা বলে সর্বভারতীয় নেতৃত্ব উত্তেজিত করার চেষ্টা করুক না কেন এখনও প্রস্তুত নয় বঙ্গ বিজেপি। না আছে প্রার্থী, না আছে বুথওয়াড়ি সংগঠন।
রাজ্যে ৮০ হাজার ৫৩০টি বুথ রয়েছে। শুধু দিল্লি থেকে হাওয়াই জাহাজে উড়ে এসে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করলেই তো আর বুথ সংগঠন হয় না। সেই কারণেই মাত্র ৪০ হাজারের মতো বুথে কমিটি তৈরি করতে পেরেছে বঙ্গ নেতৃত্ব। তাও ওদের দাবি। উত্তরবঙ্গে বুথ কমিটির অবস্থা তুলনায় ভালো হলেও দক্ষিণবঙ্গের হাল শোচনীয়। দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া,
হুগলি, বীরভূম, মালদহ, মুর্শিদাবাদে সংগঠনের হাল অত্যন্ত খারাপ। বারাসত, দমদম, বরানগর, দক্ষিণ কলকাতা, পুরো দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, উলুবেড়িয়া ও হুগলির বড় অংশে কিছু নেতা থাকলেও মাঠে নেমে কাজ করার কর্মী নেই। এর উপর তীব্র আদি-নব্য দ্বন্দ্ব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। বহু কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ তো প্রকাশ্যে চলে আসছে। নিচুতলায় সংগঠন না থাকলে শুধু মোদির ছবি দেখিয়ে, আর গ্যারান্টি ফেরি করে যে ভোট বৈতরণী পার করা যাবে না, মানছেন গেরুয়া শিবিরের বড় অংশই।
শেষকথা বলবে বাংলার মানুষ এবং সোয়া দু’কোটি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপভোক্তা মহিলার পরিবার। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথীতে যাঁরা লাভবান হয়েছেন তাঁরা। অপেক্ষা ৪ জুনের ফলের। একুশ সালের ২ মে’র ফল ঘোষণার দুপুরের ‘রিপিট টেলিকাস্ট’ই যে হবে না তা কে বলতে পারে! এবারও কিন্তু বাঙালি অস্মিতারই লড়াই।