মেলবোর্ন, ১৭ জানুয়ারি: টি-২০ সিরিজ ড্র। টেস্ট সিরিজে ঐতিহাসিক সাফল্য। এবার একদিনের সিরিজ পকেটে পুরে নেওয়ার সুযোগ বিরাট কোহলিদের সামনে। অতীতে কখনও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দ্বিপাক্ষিক ওয়ান ডে সিরিজ জিততে পারেনি ‘মেন ইন ব্লুজ’। সেই আক্ষেপ এবার মেটানোর সুযোগ ‘টিম ইন্ডিয়া’র সামনে। তিন ম্যাচের সিরিজের ফল এখন ১-১। শুক্রবার যারা জিতবে, তারাই সিরিজ পকেটে পুরে ফেলবে। তবে পিছিয়ে পড়েও গত ম্যাচে কোহলি বাহিনী যেভাবে কামব্যাক করেছে, তাতে ভারতের সিরিজ জেতার সম্ভাবনা বেশি। সেটা হলে ভারতীয় দলের এই অস্ট্রেলিয়া সফর ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে। কারণ, তিন ফরম্যাটে অপরাজিত থেকে বিরাট কোহলিরা দেশে ফিরবেন। এই সাফল্য নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দেবে।
তিন বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিপাক্ষিক ওয়ান ডে সিরিজে ভারত ১-৪ ব্যবধানে হেরেছিল। তবে এবারের ভারতীয় দলের তুলনায় অস্ট্রেলিয়া অনেকটাই পিছিয়ে। তার উপর দারুণ ছন্দে আছেন ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ওপেনিং জুটিতে শিখর ধাওয়ান ও রহিত শর্মা শুরুটা ভালো করে দিলে বিরাট কোহলি ইনিংসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাঁকে দারুণ সাহায্য করছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। গত ম্যাচে বিরাট-ধোনির যুগলবন্দি ভারতকে ৬ উইকেটে জিততে সাহায্য করেছিল। কোহলি সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে শেষ ওভারে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেওয়ার পর মাহি ম্যাজিকে মজেছে ক্রিকেট দুনিয়া। অনেকেই বলছেন, ধোনির এই ফর্ম বিশ্বকাপ পর্যন্ত অটুট থাকলে ভারত ফের কাপ জিততে পারে।
তৃতীয় একদিনের ম্যাচে বিরাট কোহলি কিছুটা রণকৌশল বদল করতে চাইছেন। সাধারণত তিনি উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চান না। কিন্তু অম্বাতি রায়াডু বড় রান করতে ব্যর্থ গত দু’টি ম্যাচে। তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আইসিসি। সেই কারণে রায়াডুকে এই ম্যাচে হয়তো খেলানো হবে না। সেক্ষেত্রে ব্যাটিং অর্ডারে কিছু বদল হবে। ধোনি তখন চার নম্বরে ব্যাট করতে পারেন। গত ম্যাচে দারুণ ব্যাট করেছিলেন দীনেশ কার্তিক। তাঁর অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করতে চাইছে টিম ম্যানেজমেন্ট। দীনেশ পাঁচ নম্বরে নামতে পারেন। ব্যাটিং অর্ডার মজবুত করলে ছয়ে ব্যাট করতে পারেন কেদার যাদব। সেক্ষেত্রে অফ স্পিনারের অপশন বেড়ে যাবে ভারতের হাতে। আর কোহলি যদি পিচ দেখে মনে করেন একজন অতিরিক্ত পেসার খেলাতে হবে তাহলে বিজয় শঙ্করের প্রথম একাদশে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
মাথায় রাখতে হবে মেলবোর্নের মাঠ বড়। চার-ছক্কা হাঁকাতে ব্যাটসম্যানদের সমস্যা হবে। উইকেট থেকে পেসাররা সুবিধা পেতে পারেন। অতিরিক্ত বাউন্স প্রারম্ভিক ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলবে। সেকথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার অনুশীলনে টেনিস বলে প্র্যাকটিস করেন ধাওয়ান। ভারতীয় দলের এক সাপোর্ট স্টাফ র‌্যাকেট দিয়ে বল বাউন্স করাচ্ছিলেন। সেই বলের মোকাবিলা করতে দেখা গিয়েছে ধাওয়ানকে।
তিন পেসার ও দুই স্পেশালিস্ট নিয়ে মাঠে নামতে পারেন বিরাট কোহলি। সেক্ষেত্রে ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ সামির সঙ্গে খলিল আহমেদ খেলতে পারেন। দুই স্পেশালিস্ট স্পিনার হয়তো রবীন্দ্র জাদেজা এবং কুলদীপ যাদব।
একদিনের সিরিজ জিততে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া। সেই কারণে দলে দু’টি পরিবর্তন করেছেন কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। নাথাল লিয়ঁকে বসিয়ে অবশেষে লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পাকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পিঠে ব্যথা জ্যাসন বেহরেনডর্ফের। তিনি খেলতে পারবেন না। তাঁর জায়গায় বিলি স্ট্যানলেক দলে আছেন।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের বড় ভরসা শন মার্শ। গত ম্যাচেও তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন। মিডল অর্ডারে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সুনাম রয়েছে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের। তবে ওপেনিং জুটি জমাট বাঁধছে না। ক্যাপ্টেন অ্যারন ফিনচ দুই ম্যাচেই ব্যর্থ। তবে পিটার হ্যান্ডসকম্ব ও উসমান খাওয়াজার মতো ব্যাটসম্যান ভারতীয় বোলারদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারেন।
শক্তির বিচারে ভারতের পাল্লা হয়তো ভারি। তবে পরিসংখ্যান কিন্তু অন্য কথা বলছে। মেলবোর্নে ভারতের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া ১৪টি ওয়ান ডে খেলে জিতেছে ৯টিতে। কিন্তু ২০১৭ সালের পর কোনও ওয়ান ডে সিরিজ জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ফিনচদের সেই আক্ষেপ মেটে কিনা, সেটাই দেখার!
 ম্যাচ শুরু ভারতীয় সময় সকাল ৭-৫০ মিনিটে।