সংবাদদাতা, করিমপুর: অনাবৃষ্টি আর তীব্র দাবদাহে চরম সঙ্কটে করিমপুরের কলা চাষ। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার শিকার হয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি চাষিরা। শুধু চাষিরাই নন, ব্যবসায়ী সহ বহু মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই কলাচাষের উপর নির্ভরশীল। গত কয়েক বছরে করিমপুরের প্রধান অর্থকরী ফসল পান এবং পাট চাষের জায়গা দখল করেছে কলা চাষ। এই কলাচাষে প্রচুর মানুষের কর্ম সংস্থান তৈরি করেছে। হোগলবেড়িয়ার এক কলাচাষি নীহার দত্ত বলেন, এই এলাকায় মূলত চাপাকলা ও সিঙ্গাপুরী এই দুই রকম কলার চাষ হয়। এক বিঘা জমিতে চাপাকলা চাষে ১৩/১৪ হাজার ও সিঙ্গাপুরী কলার জন্য ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। শীতের সময় কলার বাজারদর কম থাকে, কিন্তু চৈত্র মাস থেকে আষাঢ় মাস অবধি কলার চাহিদা বেশি থাকায় ওই সময়ে ভালো দাম পাওয়া যায়। ঝড়ের কারণে অনেক সময় কলা গাছ ভেঙে যায় এবং ক্ষতি হয়। তবে এবছর ঝড় না হলে শুকনো আবহাওয়ার কারণে গাছের কলা পুষ্ট হওয়ার আগেই পেকে যাচ্ছে। বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। স্থানীয় চাষিরা জানাচ্ছেন, বছর পনেরো আগে এলাকায় প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল পান ও পাট। মাটি ও আবহাওয়ার তারতম্যে পান ও পাট চাষ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার বদলে ধীরে ধীরে বেড়েছে কলার চাষ। করিমপুর এলাকার প্রায় নব্বই শতাংশ চাষি এখন কলা চাষে যুক্ত। কলা চাষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় কলা বিক্রয়ের জন্য একাধিক হাটও তৈরি হয়েছে। যেখানে খুব সহজেই চাষিরা তাদের ফসল বিক্রি করতে পারছেন। শুধুমাত্র হোগলবেড়িয়ার রাজাপুরেই পাঁচটি কলার হাট রয়েছে। সেখান থেকে চাষিদের বিক্রি করা কলা ট্রাক বোঝাই হয়ে বাইরে চলে যায়। করিমপুরের চাষি তপন বিশ্বাস বলেন, এই মরশুমের দিকে চাষিরা বছরভর তাকিয়ে থাকেন।
এই সময় কলার চাহিদা এবং দাম বেশি হয়। এবছর ঝড়ে ক্ষতি না হলেও প্রচণ্ড গরমে অন্য ফসলের মতো কলা চাষের খুব ক্ষতি হয়ে গেল। যে কলা অন্তত সাড়ে তিনশো টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা এখন কলার মান খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেই দাম দুশো টাকার নীচে। করিমপুরের এক পাইকারি কলা ব্যবসায়ী সুধীরঞ্জন সমাদ্দার জানান, এলাকার প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কলা চাষের সাথে যুক্ত। এলাকার টোটো, লছিমন থেকে শুরু করে ছোট বড় ট্রাক এই কলা পরিবহণের সঙ্গে জড়িত। অনেক বেকার যুবক চাষিদের থেকে কলা কিনে হাটে বিক্রি করে রোজগার করছেন। অনেক যুবক কলার গাড়ি বোঝাই করার জন্য কিংবা ব্যবসায় হিসাব রাখার কাজ করেন। বর্ধমান, মালদা, সিউড়ি শিলিগুড়ির পাশাপাশি ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড বা বিহার রাজ্যেও এই কলা রপ্তানি করা হয়। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে সকলেই সমস্যায় পড়েছেন।