বিএনএ, আসানসোল: খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের মৃত্যুকালীন ভাতা এক ধাক্কায় তিনগুণ বৃদ্ধি করল কেন্দ্রীয় সরকার। এতদিন ভাতা ছিল পাঁচ লক্ষ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৫ লক্ষ। কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা করতেই খুশির হাওয়া শ্রমিক মহলে। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের দাবি, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলেই সরকার এই মৃত্যুকালীন ভাতা বৃদ্ধি করেছে। যদিও তা ২০ লক্ষ টাকা হলে ভালো হতো বলে অনেকের দাবি।
ইসিএলের সদর দপ্তর সাঁকতোড়িয়া থেকে জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসিএল সহ কোল ইন্ডিয়ায় কর্মরত যে কোনও কয়লাখনিতে দুর্ঘটনায় কোনও কর্মীর মৃত্যু হলে এবার থেকে ১৫ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে তিন লক্ষের বেশি মানুষ উপকৃত হবেন।
কয়লা খাদানের শ্রমিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ভূগর্ভস্থ কয়লা খনিগুলির নিরাপত্তা বহু গুণ বাড়লেও এখনও বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এমনকী কয়লার ওপেন কাস্ট প্রজেক্টগুলিতেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই গিয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার বহু খাদানে কর্মরত শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনেও নেমেছেন শ্রমিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব। যদিও কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার নিয়ম ছিল। তাই আন্দোলন করেও খুব বেশি কাজ হতো না। তাই এই ক্ষতিপূরণের টাকা বাড়ানো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দাবি ওঠে। সরকার বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার কথা বলে এড়িয়ে গিয়েছে। অবশেষে তারা শ্রমিকদের এই দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নিল।
এদিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তেওয়ারির অনুগামীরা দাবি করেন, পাণ্ডবেশ্বরের এক শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক জিতেন্দ্রবাবু লাগাতার আন্দোলন করার জেরেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার যে কতটা শ্রমিক দরদি, তা তুলে ধরতে শুরু করেছে বিজেপিও। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন এই দাবি থাকলেও কোনও সরকার কর্ণপাত করেনি। অবশেষে মোদি সরকার এটা করে দেখাল।
অন্যদিকে, এনিয়ে রাজনীতি হলেও পরিবারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে খুশি সাধারণ শ্রমিকরা। খনি শ্রমিক ধীরেন যাদব বলেন, খাদানে নামতে হলে জীবনের ঝুঁকি থাকেই। এই ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধিতে কিছুটা হলেও নিশ্চিত হতে পারব যে, যদি আমার কোনও দুর্ঘটনাও ঘটে, তাহলে ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে মরবে না।
আইএনটিটিইউসি সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিং বলেন, আমাদের দাবি ছিল ক্ষতিপূরণের অর্থ ২০ লক্ষ টাকা করা হোক। তবে, এই ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধিতে আমরা খুশি।
এআইটিইউসি সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন কোলিয়ারি মজদুর সভার সাধারণ সম্পাদক রামচন্দ্র সিং বলেন, এতে শ্রমিকদের উপকার হবে। আমরা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাচ্ছি। তবে আমাদের আশা ছিল এই ক্ষতিপূরণ ২০ লক্ষ করা হবে।