সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা, আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু হয়েছিল কৃষ্ণনগরে। বিভিন্ন পাড়ার বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলির মধ্যে প্রতি বছরই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াই চলে। এলাকার ক্ষমতা প্রদর্শনের একটা তাগিদও থাকে। প্রায় প্রতি বছর বিসর্জনের শোভাযাত্রা চলাকালীন একাধিক বারোয়ারি কমিটি মুখোমুখি হলেই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিসর্জন ঘিরে হিংসা, হানাহানি, রক্তপাত, মৃত্যু সবই হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে একেবারে নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে বিসর্জন।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল অবধি বিসর্জন দেখতে হাজার হাজার মানুষ আসেন। কৃষ্ণনগরের পুলিস সহ বাইরের জেলার প্রায় ৩০০ পুলিস কর্মী মোতায়েন ছিল। অতিরিক্ত পুলিস সুপার (সদর) আমনদীপ, অতিরিক্ত পুলিস সুপার (গ্রামীণ) কৃশানু রায়, ডিএসপি (ডিএনটি) মাসুদ আখতার, ডিএসপি (হেডকোয়াটার) কৌশিক বসাক কখনও রাস্তায় পুজো কমিটিগুলিকে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য তদারকি করেছেন, কখনও মোটর বাইকের পিছনে বসে গোটা পরিস্থিতির নজরে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত টানা মাঠে ছিলেন তাঁরা।
পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এবার অনেক আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে ভাসানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলির মিটিংয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পুজো মিটে যাওয়ার পরেও যারা গণ্ডগোল করবে, তাদের ভিডিও ক্যামেরার ছবি দেখে শনাক্ত করা হবে। এমনকী ড্রোনও ওড়ানো হয় রাজপথে। তবে, নিয়ম ভাঙায় একটি পুজো কমিটির বেশ কিছু সদস্যকে থানায় সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। অন্যদিকে, সাঙ ভেঙে একটি পুজো কমিটির বিসর্জন প্রক্রিয়ায় কিছুটা গতি কমায় প্রভাব পড়ে অন্য পুজোগুলিতেও।
উল্লেখ্য, কৃষ্ণনগরে বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতে বহু দূর-দূরান্তের মানুষ আসেন। বিশাল প্রতিমা সাঙে করে বয়ে নিয়ে যান বেয়ারারা। এই সময় কোনওভাবে দুটি পুজো কমিটির সদস্যরা মুখোমুখি হলেই গণ্ডগোলের আশঙ্কা থাকে। কোনওরকম গণ্ডগোল ছাড়া নির্বিঘ্নে পুজো শেষ করাই পুলিসের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। গত কয়েক বছর ধরে গণ্ডগোল রুখতে থানার সামনে থেকে পাঁচটি করে পুজো কমিটির প্রতিমা রাজবাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তারা বিসর্জন দিয়ে ফিরে আসার পর আরও পাঁচটি ঠাকুর নিয়ে যাওয়ার অনুমতি মেলে। যদিও এনিয়ে পুজো কমিটিগুলির কারও কারও ক্ষোভও রয়েছে। কারণ, অনেকেই মনে করেন, যে বিসর্জন রাতেই হয়ে যেতে পারত, পুলিসের ঢিলেমিতে তা সকাল ৯টায় শেষ হয়। যদিও পুজো উদ্যোক্তাদের একাংশ এতে খুশি।
পুজো কমিটির পক্ষে তরুণ কুমার হালদার, দেবর্ষি চৌধুরী বলেন, পুলিস যথেষ্ট তৎপর ছিল। আমরা চাই না ঝামেলা করে কৃষ্ণনগরের নাম খারাপ করতে।
অন্যদিকে, জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে জলঙ্গি নদীতে তলিয়ে গিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম রাহুল বিশ্বাস(১৯)। তাঁর বাড়ি কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানার ঘূর্ণি ঘরামি পাড়ায়। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ওই এলাকার কুমার সংঘের প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়ে নদীতে তলিয়ে যান। পরে এলাকার মৎস্যজীবীরা খোঁজাখুঁজির পর রাহুলের দেহ উদ্ধার করেন।