কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
বাম জমানায় জঙ্গমহলে জনসাধারণ কমিটির দাপুটে নেতা ছিলেন ছত্রধর মাহাত। তাঁর সঙ্গে মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেণজির একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। সেই সময় জঙ্গলমহলে একাধিক সরকার তথা দেশবিরোধী কাজে তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। শালবনীতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় তাঁর নাম জড়ায়। এছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে একাধিক নাশকতার ঘটনায় তিনি অভিযুক্ত। ২০০৯ সালে তাঁকে সাংবাদিক সেজে গ্রেপ্তার করে পুলিস। ছত্রধরের বিরুদ্ধে প্রথমে দেশদ্রোহিতার ধারা ও ষড়যন্ত্রের ধারা দেওয়া হয়। পরে সরকারের অনুমতি আসার পর ইউএপিএ ধারা যুক্ত করা হয়। ২০১৫ সালে মেদিনীপুর আদালত ছত্রধরের সাজা ঘোষণা করে। তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়। তিনি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন মাওবাদীর শাস্তি ঘোষণা করে আদালত। প্রসঙ্গত, রাজ্যে ইউএপিএ ধারায় কারও শাস্তি ঘোষণার প্রথম কেস ছিল এটি।
২০০৯ সাল থেকে জেলবন্দি ছত্রধর। প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির কাছে করা আবেদনে তিনি জানিয়েছেন, আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর তিনি জেলে রয়েছেন। বাম সরকার অন্যায়ভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলে ঢোকায়। মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। তিনি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। তাঁদের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় মিছিল, মিটিং করেন। সংসারে তিনি একামাত্র রোজগেরে ছিলেন। ধরা পড়ার পর থেকে তাঁর পরিবার অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সংসার চলছে না। তাঁর দিকেই মুখ চেয়ে রয়েছেন পরিবারের সকলে। সেই কারণে তিনি চাইছেন সুস্থ সমাজজীবনে ফিরতে। যাতে আবার রোজগার করে কর্মক্ষম হতে পারেন। তাই তাঁর সাজা মুকুব করা হোক। তাঁর সই করা আবেদনপত্রটি পৌঁছেছে নবান্নে।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কোনও আসামিকে মুক্তি দিতে গেলে নির্দিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। আবেদন তাদের কাছে পাঠাতে হয়। তাতে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, সিপি ও ডিজি থাকেন। জেলে থাকাকালীন সংশ্লিষ্ট আসামির আচার-আচরণ থেকে শুরু করে কোনও অভিযোগ এসেছে কি না এই সংক্রান্ত বিষয় বিচার করা হয়। পাশাপাশি ছাড়া পাওয়ার পর তিনি আবার একই ধরনের অপরাধ ঘটাতে পারেন কি না, তাও বিশ্লেষণ করে দেখা হয়। এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আবেদনকারীকে ছাড়া হবে কি না। সূত্রের খবর, ছত্রধরের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি মেনে চলতে হবে প্রশাসনকে। কারণ ব্যতিক্রমী কিছু হয়ে গেলে তাকে হাতিয়ার করে অন্য আবেদনকারীরা আদালতে চলে যেতে পারেন। তাই ছত্রধরের বিষয়ে অত্যন্ত ভেবেচিন্তে এগতে চাইছেন প্রশাসনিক কর্তারা। যাতে কোথাও কোনও ফাঁক না থাকে। ছত্রধরের আগে অনেক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিই আবেদন করেছেন সরকারের কাছে। কিন্তু তাঁদের আবেদনে সাড়া দেয়নি সরকার। ছত্রধরের ক্ষেত্রে কী হবে, তা পুরোপুরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।