কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
২০১৮ সালের শেষের দিকে ‘লিমকা বুক অব রেকর্ডসে’ তিনি আবেদন জানান। এরপর পদ্ধতি মেনে তিনি নানা কাজের ভিডিও পাঠান। তাঁকে আরও কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হয়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি জানতে পারেন, লিমকা বুকে ঠাঁই পেয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ আগেই স্বীকৃতি পেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কী কী পুরস্কার পেয়েছেন তা জানাতে হয়েছে। তারজন্য তাঁকে যথাযথ প্রমাণও জমা করতে হয়েছে।
লিমকা বুক হাতে নিয়ে সুবীরবাবু বলেন, লিমকা বুকে স্থান পেয়ে ভালো লাগছে। তবে আমার আক্ষেপ, নতুন প্রজন্ম এই শিল্পকর্ম করতে চাইছে না। তারা মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। এখন এই শিল্প হারিয়ে যাওয়ার মুখে রয়েছে। তাই কৃষ্ণনগরে যদি একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতো, তবে বাইরের কিছু ছেলেমেয়েও আসতে পারত। সেটাও হল না। একটা মিউজিয়াম হলেও ভালো হতো। সেখানে পুরোনো কাজ দেখে কেউ কেউ উৎসাহিত হতো। কিন্তু সেটাও এখন অবধি হয়নি।
ঘূর্ণির মৃৎশিল্পীরা বংশ পরম্পরায় প্রতিমা গড়ে বিখ্যাত হয়েছেন। শোনা যায়, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বাংলাদেশের নাটোর থেকে মৃৎশিল্পীদের আনিয়ে ছিলেন। তারপর ২৫০ বছর ধরে একটু একটু শিল্পীদের শাখা-প্রশাখা নদীয়া ছাড়িয়ে সারারাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকী কলকাতা কুমোরটুলির মৃৎশিল্পের শিকড় সেই রাজশাহির জেলার নাটোর থেকে উৎসারিত বলে মনে করা হয়। বেশকিছু বইয়ে নদীয়ায় মৃৎশিল্পের উদ্ভব এবং বিকাশে রাজবাড়ির বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ আছে। যদিও এনিয়ে মতপার্থক্য আছে। কেউ কেউ বলেন, কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীরা কুম্ভকার। প্রথমদিকে তাঁরা ছিলেন কুমোর এবং দেবদেবীর প্রতিমা নির্মাতা। পরবর্তী সময়ে কৃষ্ণনগরের মিশনারি ও ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পের বিকাশ ঘটে। নদীয়া রাজপরিবারের বিভিন্ন পুজো উৎসবে তৎকালীন মৃৎশিল্পীরা নানা মূর্তি তৈরি করতেন। এনিয়ে ভিন্নমত থাকলেও কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীদের আন্তর্জাতিক সম্মান পাওয়া শুরু ১৮৫১ সালে। লন্ডনের এক প্রদর্শনীতে ঘূর্ণির শ্রীরাম পালের মৃৎশিল্প স্থান পায়। প্রথম সুযোগেই বিশ্ব জয় হয়। তারপর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
প্রসঙ্গত, কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির শিল্পের বিশেষত্ব হল তার সূক্ষতা। সেই মূর্তি মনে হবে জীবন্ত। এতটাই সূক্ষ শিল্প যে, একটা তিন ইঞ্চির পুতুলের হাতের শিরা বা চোখের মণিও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। কামার, কুমোর, ছুতোর কিংবা সাঁওতাল নারী-পুরুষের মূর্তি অবলীলায় গড়া হয়। যা দেখে জীবন্ত মনে হতো। শিল্পের গৌরবময় ইতিহাসে নিজেদের নাম একসময় উজ্জ্বল করেছেন কার্তিক পাল, বীরেন পাল, গণেশ পাল, মুক্তি পাল, শম্ভু পালরা। তারমধ্যে বীরেনবাবু ছেলে সুবীর পাল। সুবীরবাবু মাটির কাজের সঙ্গে পাথর, ব্রোঞ্জ প্রভৃতির উপর কাজ করেন। তবে তিনি মাটির কাজের জন্য তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন।