বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
পরিস্থিতি বুঝে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস মহাজোটের কাছে লোকসভা নির্বাচনে ছ’টি আসন দাবি করে সিপিআই। কিন্তু সেই দাবি খারিজ করে দেয় আরজেডি। বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে মহাজোট চাইলেও সিপিআইকে ছ’টি আসন ছাড়তে রাজি নয় তারা। ঘনিষ্ঠ মহলে তেজস্বী জানিয়েছেন, বিহারে বিরোধী মহাজোটের চালিকাশক্তি আরজেডিই। তেজস্বীর দলের সাফ কথা, একা লড়ে সিপিআই কোনও পার্থক্য গড়তে পারবে না। আরজেডি বুঝতে পারছে, বিরোধী ভোটে ভাগ বসাতে তৎপর হয়েছে সিপিআই। বিহারে হারানো জমি ফিরে পাওয়ার আশায় চনমনে হয়ে উঠছে সিপিআই। ফলে ভোটের আগেই বামেদের সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হয়েছে আরজেডির। ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গেলেও, সিপিআই এবং আরজেডির নির্বাচনী আঁতাতের বিষয়টি এখনও ধোঁয়াশায় ঢাকা। স্বাভাবিকভাবেই গত শুক্রবার সিপিআই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যে ১৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, তাতে নাম নেই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি কানহাইয়া কুমারের। বিহারের রাজ্য শাখার তরফে কানহাইয়ার নাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হলেও, এখনও তা অনুমোদিত হয়নি। দলের তরফে জানানো হয়েছে, বিহারে আরজেডির সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়ার আলোচনা চলছে। সেই আলোচনার পরে কানহাইয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অথচ,বেগুসরাই কেন্দ্রে কানহাইয়া প্রার্থী হলে সিপিআইয়ের জয় একরকম নিশ্চিতই। সিপিআই সূত্রের খবর, কানহাইয়া গত চার পাঁচ মাসে বেগুসরাই কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে ঘুরেছেন। জনসভায় ভিড়ও হয়েছে চোখে পড়ার মতো। চেরিয়াবারিয়ারপুর, বাছওয়ারা, তেঘরা, মাতিহানি, সাহেবপুর কামাল, বেগুসরাই এবং বাখরি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত এই লোকসভা কেন্দ্রটি। সিপিআই এই কেন্দ্র থেকে মাত্র দু’বার জিতেছে, ১৯৬৭ এবং ১৯৯১-তে। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে বরাবর থেকেছে। বিহারে নীতিশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ’র প্রভাব বাড়ার পর থেকে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস এবং বামেদের রাশ ক্রমে আলগা হয়েছে। বেগুসরাইয়ের বিহাত গ্রামের উচ্চবর্ণ ভূমিহার কানহাইয়া স্বাভাবিকভাবেই এই কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার দাবিদার। এই কেন্দ্রে ভূমিহারদের সাড়ে তিন লক্ষের বেশি ভোট আছে। মুসলিম ভোট আড়াই লক্ষ। ধানুক-কুর্মীদের দু’লাখ, যাদবদের ১.৭৫ লাখ, কুশওয়াহাদের প্রায় এক লাখ। ২০০৯-এর নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সংযুক্ত জনতা দলের প্রার্থী ডা. মোনাজির হাসান। ২০১৪ সালে আরজেডির তনভির হাসানকে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য এই কেন্দ্রের দখল নেয় বিজেপি। প্রায় ৫৮,০০০ ভোটে এই আসনে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী ভোলা সিংহ। গত বছর অক্টোবরে যাঁর মৃত্যুতে আসনটি এখন শূন্য। লোকসভা নির্বাচনে জোটের প্রাথমিক সমীকরণের হিসেবে এই কেন্দ্রটিতে আরজেডি প্রার্থীর দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু বিজেপি বিরোধী মুখ হিসেবে কানহাইয়াকেই চেয়েছিলেন আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ। তাতেই জলে ঢেলে দিয়েছেন লালু-পুত্র তেজস্বী। জাতপাতের রাজনীতির বিহারে ‘ভূমিহার’ কানহাইয়াকে গুরুত্ব দিতে নারাজ‘যাদব’ নেতা তেজস্বী। কেন? আরজেডি-র সূত্রের খবর, কানহাইয়ার বিরুদ্ধে যেহেতু দেশদ্রোহিতার মামলা আছে, তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলে অস্বস্তি আছে। তাছাড়া তেজস্বীর ব্যাপারে কখনও কোনও ভাল কথা বলেননি কানহাইয়া। আরজেডি নেতারা বলছেন, ভোটে দাঁড়ালে অনগ্রসর শ্রেণীর সমর্থন পাবেন না কানহাইয়া। আর সিপিআই নেতারা বলছেন, জোট যদি না হয়, তাহলে কানহাইয়া আরজেডির মুসলিম ভোট কাটবেন। বামেরা যদি মহাজোটে যোগ না দেয়,তাহলে আরজেডি প্রার্থী হতে পারেন তনভির হাসান। সে ক্ষেত্রে ত্রিমুখী লড়াই হবে। অন্যদিকে, বিজেপির প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের নাম বেগুসরাই কেন্দ্রের জন্য আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রাক্তন সাংবাদিক অভিরঞ্জন কুমার এবং বিজেপি নেতা রজনীশের নামও আলোচনায় রয়েছে।
রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কানহাইয়ার জনপ্রিয়তাকে কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছেন তেজস্বী। আপাতত বিজেপি-বিরোধী জোটের কথা বললেও রাজ্যের নেতৃত্ব নিজের হাতেই রাখতে চান তিনি। সেই কারণে কানহাইয়াকে বিহার থেকে উঠতে দিতে চান না তেজস্বী। পাশাপাশি কানহাইয়া ভূমিহার সম্প্রদায়ের লোক। উচ্চ বর্ণের নেতা হিসেবে বিজেপি-বিরোধী শিবিরে দ্রুত উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। তাতেই প্রমাদ গুনছে আরজেডি নেতৃত্ব।