বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহ যোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন ... বিশদ
এদিকে, স্বামী সুস্থ রয়েছেন জেনেও মঙ্গলের স্ত্রী শঙ্করী হেমব্রম স্বাভাবিক হতে পারছেন না। মাঝেমধ্যেই তিনি ভয়ে শিউরে উঠছেন। টিভিতে খবর দেখার পরই শঙ্করীদেবী চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েন। নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য তিনি স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছিলেন না। ওইদিন বিকেল ৪টে নাগাদ মঙ্গলের কাছ থেকে ফোন পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। শঙ্করীদেবী বলেন, স্বামীকে খুবই দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু, হোয়াটসঅ্যাপ কল করা যাচ্ছে না।
মঙ্গলবাবুর আদি বাড়ি গড়বেতা থানার আধারনয়ন মল্লিকপাড়ায়। দীর্ঘদিন তিনি ও তাঁর পরিবার চন্দ্রকোণা শহরে ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন। সম্প্রতি শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বাড়িও করেছেন। সেখানেই শঙ্করীদেবী তিন মেয়েকে নিয়ে থাকেন। মঙ্গল ছুটি পেলে চন্দ্রকোণা শহরে আসেন। ২০০৩ সালে তিনি সিআরপিএফে যোগদান করেন। গত বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মঙ্গল ছুটিতে এসেছিলেন। প্রায় ৪০ দিন কাটিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি জম্বুতে ফেরেন। মঙ্গলবাবু ১১৫ নম্বর ব্যাটালিয়নে কাজ করেন। মঙ্গলবাবু বলেন, কাশ্মীরে যত সিআরপিএফ জওয়ান থাকেন, তাঁদের জম্মু ট্রানজিট ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হয়। সেই মতো আমি রিপোর্ট করি। তারপর ১৪ তারিখে আমাদের শ্রীনগরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিন তিনি ওই কনভয়ের ৮ নম্বর গাড়িতে ছিলেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো ১৫ মিনিট নাগাদ জম্বু-কাশ্মীর জাতীয় সড়কে পুলওয়ামায় একটি বিকট শব্দের পরই আমাদের গাড়ি থেমে যায়। প্রথমটা কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। তারপরই ঝাঁকে ঝাঁকে গুলির শব্দ আসতে থাকে। জানালা দিয়ে উঁকি দিই, কালো ধোঁয়া ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনি। তার কয়েক মিনিট পরেই গাড়ির মধ্যেই মেসেজ পাই কনভয়ের কোনও একটি গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের গাড়ি থেকে ২৫০-৩০০ মিটার দূরে ওই বিস্ফোরণটি হয়। কিন্তু, গাড়ি থেকে কাউকে নামতে দেওয়া হয়নি। আমাদের গাড়িটি যতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল, সেই সময়ের মধ্যে তাই গাড়ির কাচ দিয়ে উঁকি মেরে আগুন আর ধোঁয়া ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি। কিছুক্ষণ এভাবে কাটার পর কমান্ডিং অফিসারের নির্দেশে গাড়িগুলিকে না এগিয়ে আবার আগের জায়গায় নিয়ে চলে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, শব্দ শুনেই আমরা আন্দাজ করেছিলাম, একটা বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে। কিন্তু এত জন সহকর্মী মারা যাবে, ভাবিনি। যাদের সঙ্গে ওইদিন সকালেই কথা হয়েছে, দুপুরে তাদেরই এভাবে হারাতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি। রাতের দিকে পুরো নামের তালিকা পেতেই চমকে উঠি। ওই তালিকায় আমার অন্তরঙ্গ ১১ জন সহকর্মী রয়েছেন।