সপরিবারে নিকট ভ্রমণের পরিকল্পনা। সহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে শত্রুতা করতে পারে। নতুন কোনও কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মক্ষেত্রে বদলির ... বিশদ
ইতিহাসে চোখ
‘প্যারামেডিক্যাল স্টাফ’ কথাটা সেকেলে। এখন বলা হয় ‘অ্যালায়েড হেলথ সায়েন্স প্রফেশনালস’। অর্থাত্ স্বাস্থ্য পরিষেবার পার্শ্বচরিত্র! স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের ধারণা শুধু ডাক্তার আর নার্সই পরিষেবা দেন! অথচ বাস্তবটা হল, একটি হাসপাতালে চিকিত্সক এবং নার্সের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যায় থাকেন অ্যালায়েড হেলথ সায়েন্সেস প্রফেশনাল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেক বেশি উন্নত ও বিস্তৃত হয়েছে। যোগ হয়েছে নানা ধরনের রোগ নির্ণায়ক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। উদাহরণ হিসেবে এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিনের কথা বলা যায়। এই ধরনের মেশিন চালানো, রক্ষণাবেক্ষণ এবং রিপোর্ট তৈরি করার জন্যও দরকার উপযুক্তভাবে প্রশিক্ষিত কর্মী।
মোট কথা চিকিত্সা বিজ্ঞানের যত উন্নতি হচ্ছে, দ্রুত অসুখ নির্ণয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে ততই প্রশিক্ষিত সহায়ক কর্মীর প্রয়োজনও বড় বেশি করে বোধ হচ্ছে। বর্তমানে রোগীবান্ধব উপযুক্ত মানের পরিষেবা দিতে হলে অ্যালায়েড হেলথ সায়েন্স প্রফেশনালস-এর মতো সহায়ক শ্রেণির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। হঠাত্ করে কোনও হাসপাতালে রোগীর চাপ প্রবল হলে তখন পরিস্থিতি সামলানো মাত্র কয়েকজন চিকিত্সক ও নার্সের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। এমন বিরূপ পরিস্থিতি অনায়াসে অনুকূলে নিয়ে আসতে পারেন অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনালরা। প্রয়োজন বুঝে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া, অক্সিমিটার দিয়ে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বোঝা, রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে সামলে দেওয়ার কাজটি তাঁরাই করেন। চিকিত্সকদের অবদানের কথা না ভুলেও বলা যায়, অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনালরা ছিলেন বলেই কোভিডের মতো এমন ভয়াবহ অধ্যায় জয় করতে পেরেছিল বহু পরিবার!
কলকাতায় উন্মেষ!
কলকাতা সহ দেশের অন্যান্য শহরে বিভিন্ন প্যারামেডিক্যাল বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স দীর্ঘদিন ধরে চালু ছিল। তবে আধুনিক চিকিত্সা শাস্ত্রের উপযোগী উন্নততর প্রশিক্ষণের সূত্রপাত ২০০৭ সালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে। ২০০৬ সালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে কার্ডিওথোরাসিক বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়। সেই সময় চিকিত্সক এবং রোগীকে সাহায্য করার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব ছিল। তাই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তিনটি বিএসসি প্রোগ্রাম শুরু করা হল— ১) বিএসসি পারফিউশন টেকনোলজি। ২) বিএসসি ক্রিটিক্যাল কেয়ার টেকনোলজি। ৩) বিএসসি অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজি। প্রশিক্ষিত কর্মীরা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে, অপারেশন থিয়েটারে অতিপ্রয়োজনীয় কাজগুলি হাতে কলমে শিখে নিলেন সুনিপুণভাবে।
প্রথম ব্যাচ বেরনোর তিন থেকে চার বছর বাদেই চালু হল এমএসসি কোর্স। এরপর রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানেও সেইসময় বিএসসি ক্রিটিক্যাল কেয়ার সায়েন্স এবং বিএসসি ওটি টেকনোলজি নিয়ে কোর্স শুরু হয়েছিল।
পরবর্তীকালে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজেও শুরু হয় একাধিক বিষয়ে বিএসসি এবং এমএসসি প্রোগ্রাম। আলাদা করে স্কুল অব প্যারামেডিক্যাল সায়েন্সেস নামে বিভাগও শুরু হয়।
প্রভূত কাজের সুযোগ
বর্তমানে বেসরকারি ক্ষেত্রে তো বটেই তার সঙ্গে সরকারি নানা হাসপাতালে অসংখ্য পোস্ট রয়েছে যেখানে অ্যালায়েড হেলথ সায়েন্সেস-এর প্রশিক্ষণ নেওয়া ছাত্রছাত্রীরা কর্মরত। এমনকী এখনও উপযুক্ত প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবে বহু পদ খালি থেকে যাচ্ছে! রেডিওগ্রাফি টেকনোলজি, মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি, ডায়ালিসিস টেকনোলজি, অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজি, ডেন্টাল টেকনোলজি, ইসিজি টেকনোলজি, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদি এমন বিভিন্ন কোর্স করার পরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি, ক্লিনিকে অনায়াসে কাজ পাওয়া যায়। মোট কথা এই সমস্ত বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও হাতে কলমে অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা যাঁরা উচ্চতর শিক্ষা নিতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমএসসি, পিএইচডি ও গবেষণামূলক নানা কাজকর্মের সুযোগ আছে।
শিক্ষকতা
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অ্যালায়েড হেলথ সায়েন্সেস কোর্স পড়ানোর জন্য প্রয়োজন উপযুক্তভাবে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের। ফলে নিঃসন্দেহ বলা যায়, অ্যালায়েড হেলথ সায়েন্স-এ এমএসসি, পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করলেই বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ অথবা প্যারামেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে কাজ করা সম্ভব।
কোর্স করার সুবিধা
বড় কঠিন সময়ের মধ্যে যুব সমাজ এগিয়ে চলেছে। চারদিকে একটাই হাহাকার— চাকরি কোথায়! সেখানে অ্যালায়েড হেলথ সার্ভিসেস-এর প্রফেশনাল কোর্স করতে পারলেই সরকারি অথবা বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রায় সুনিশ্চিত। সুযোগ রয়েছে বিদেশে কাজ করার।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
দ্বাদশ শ্রেণিতে বায়োসায়েন্স বা ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, জীববিদ্যা নিয়ে পাশ করলে অ্যালায়েড হেলথ সায়েন্সেস-এর বিএসসি অথবা ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়।
ভর্তির পরীক্ষা
জয়েন্ট এন্ট্রান্স, নিট ও অন্যান্য স্বীকৃত পরীক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ভর্তি হওয়া যায়।
রোজগার
প্রশিক্ষিত কর্মীরা তাঁদের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা অনুসারে যথেষ্ট এবং সম্মানজনক উপার্জন করতে পারেন।
কোর্স পড়ার খরচ
তিন বছর পড়ার পর এক বছর ইন্টার্নশিপ বা হাতেকলমে শিক্ষা বাধ্যতামূলক। সরকারি হাসপাতালে খরচ খুব বেশি না হলেও বেসরকারি হাসপাতালে খরচ একটু বেশি।