ব্যবসায়িক কাজকর্ম ভালো হবে। ব্যবসার প্রসারযোগও বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষায় সন্তানের বিদেশ গমনের সুযোগ আসতে পারে। গৃহশান্তি ... বিশদ
মাইক্রোসফ্ট বা গুগলের মতো একাধিক বড় সংস্থা কর্মী ছাঁটাই করছে। অনেকেই বলেন, মানুষের কাজ এখন মেশিন করে দিচ্ছে। তাই কর্মী ছাঁটাই অবশ্যম্ভাবী। এই ধারণাও পুরোপুরি ঠিক নয়। একটি দিকে চাকরির সুযোগ কমলে, অন্য দিকে তা খুলে যায়। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়েই বলা যেতে পারে, ডাক পিওনের চাকরির সুযোগ কমেছে। তবে, পাল্লা দিয়ে বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে অনলাইন ডেলিভারি সংস্থার কর্মীদের কাজ। সেটা খাবার ডেলিভারি হতে পারে বা অন্যান্য জিনিস। খোঁজ নিয়ে দেখলে জানা যাবে সংস্থাগুলি একদিকে যেমন কর্মী ছাঁটাই করছে, অন্য বিভাগে আবার নতুন নিয়োগও করছে। কোন ধরনের চাকরির জন্য কী কী পড়তে হবে সেটা জানা জরুরি। চাকরি পেতে গেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কী নিয়ে পড়ব, সেই ধ্যান-ধারণাও পরিষ্কার থাকতে হবে।
আগে সেরা মানের শিক্ষা নিতে আইআইটিগুলির পিছনে ছুটত মেধাবী পড়ুয়ারা। তবে এখন আইআইটিতে সুযোগ না পেলে বা ব্যয়বহুল প্রতিষ্ঠানে পড়ার সামর্থ্য না থাকলেও সমস্যা নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বয়ম পোর্টাল রয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি পোর্টালের মাধ্যমে সেরা শিক্ষকদের লেকচার শোনা সম্ভব। অনেক ইন্টার-অ্যাক্টিভ সেশনও হয়। তাই এক্ষেত্রে বিষয় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এখন ব্যবসা পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর। শুধু তাই নয়, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংবাদ মাধ্যম— এককথায় বলতে গেলে, সমস্ত ক্ষেত্রই প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তি ছাড়া এগুলি এখন প্রায় অচল। আর প্রযুক্তির উদ্ভাবন উন্নয়ন এবং তার রূপায়ণে প্রয়োজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের। যে কোনও ব্যবসাতেই ইদানীং ডেটা বা তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেই কারণেই ডেটা সায়েন্স বা ডেটা অ্যানালিটিক্সের মতো কোর্সের চাহিদা বাড়ছে। কম খরচে বেশি উৎপাদনের জন্য রয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিক্স বা অটোমেশনের চাহিদা। সেই সেই ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা থাকা ইঞ্জিনিয়াররা এখন চাহিদার শীর্ষে। পাল্লা দিয়ে প্রয়োজন বাড়ছে সাইবার সিকিউরিটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো বিশেষ দক্ষতার।
ভারত দ্রুত উন্নতি করছে। আশা করা হচ্ছে, ২০৩২ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে আমাদের দেশ। আর ২০৪৭ সালের মধ্যে উঠে আসবে দ্বিতীয় স্থানে। দেশে নেটওয়ার্কিং প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। ফলে সস্তা হচ্ছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট। এর উপর ভিত্তি করে শিল্প এবং ব্যবসার উন্নতির পথও খুলে যাচ্ছে।
একটা সময় চীন, এমনকী ভেনেজুয়েলা বা বাংলাদেশের মতো ছোট দেশও সস্তা শ্রম এবং উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর উৎপাদনের মাধ্যমে নিজেদেরকে সারা বিশ্বের বাজার হিসেবে তুলে ধরেছে। অবশেষে ভারতও সে পথে হাঁটছে।
ভারতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রজেক্ট শুরু হয়েছে সেই লক্ষ্যেই। তবে তাতে গতি আনবে পিএলআই বা প্রোডাকশন লিঙ্কড ইন্সেন্টিভ স্কিম। এর অধীনে ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিয়েছে কেন্দ্র। তার জন্য আমদানি কমে রপ্তানি ব্যবহার বেড়েছে। সেই করের অর্থে আরও উন্নত পরিকাঠামো তৈরি করছে কেন্দ্র। আগামী দিনে অটোমোবাইল এবং গার্মেন্টস শিল্প এই স্কিমের আওতায় আসছে।
বিদ্যুৎ তথা রিনিউয়েবল এনার্জিতেও কাজের সুযোগ বাড়ছে। আর এতে নেতৃত্বের স্থানেই থাকতে চলেছে ভারত। আগামী কয়েক বছরে প্রায় ২৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে এক্ষেত্রে। ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়বে। গ্রিন হাইড্রোজেন ফুয়েলের পাশাপাশি বিদ্যুৎ নির্ভর যান বা ইলেক্ট্রিক ভেহিকেলগুলির সংখ্যাও বাড়ছে। এই ক্ষেত্রে অন্তত আট লক্ষ অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজন হতে চলেছে। সরকারি ভর্তুকিতে সেমিকন্ডাক্টর তথা চিপ তৈরির শিল্পে জোয়ার আসতে চলেছে। সেখানেও প্রয়োজন হবে অন্তত ২ লক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের। একটি তথ্য এখানে দেওয়া যেতে পারে। কয়েক বছর আগেও অন্তত তিন-চার লক্ষ কোটি টাকার মোবাইল ফোন আমদানি করত ভারত। এখন এ দেশ থেকে দু’-তিন লক্ষ কোটি টাকার মোবাইল ফোন রপ্তানি হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে ১৬ লক্ষ কোটি টাকার ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হতে চলেছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়লে এই বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্রের সুযোগ নেওয়া সম্ভব হবে না। বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মানেই বিপুল খরচ, সে ধারণাও একেবারেই ঠিক নয়। সরকার ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার মধ্যে মূল খরচ বেঁধে দিয়েছে। প্রতি সেমেস্টারে ৪৪ হাজার টাকা করে দিতে হয়। তবে ষাট শতাংশ নম্বর রয়েছে এবং পরিবারের বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার মধ্যে এমন পড়ুয়াদের জন্য রয়েছে রাজ্য সরকারের বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপ। তার জন্য ৫০০০ টাকা করে, মোট দু’লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বৃত্তি মিলতে পারে সরকারের কাছ থেকে।
এছাড়াও রয়েছে রাজ্য সরকারের স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড। নম্বর নির্বিশেষে এই কার্ডের সুযোগ নিতে পারেন যে কোনও ছাত্র।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে