বিশেষ কোনও পারিবারিক কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। কাজকর্মের ক্ষেত্রে বিশেষ সুখবর পেতে পারেন। ... বিশদ
১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের মৃত্যুর পর মোগল শিবিরে দাক্ষিণাত্য অঞ্চলে আধিপত্য কায়েমের স্বপ্ন আরও গভীর হয়। কিন্তু শিবাজির পুত্র সম্ভাজির (ভিকি কৌশল) বুরহানপুর আক্রমণ ও কোষাগার লুণ্ঠন মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের (অক্ষয় খান্না) জীবনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে অগুনতি অতর্কিত হামলা থেকে চারটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের যুদ্ধাভিযান এবং শেষ পর্যন্ত সম্ভাজির বীরগতি প্রাপ্তি নিয়ে এই ছবি। প্রতি ক্ষেত্রেই যুদ্ধবিদ্যার ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় ইতিহাসের বিস্মৃত নায়ক সম্ভাজিকে। ভূখণ্ডের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যের চতুর ব্যবহার, গতি ও চমক ছিল মারাঠাদের শক্তি। এর সঙ্গে জাত্যাভিমান রক্ষার অসীম আসক্তিও মজুত ছিল। যুদ্ধযাত্রার সঙ্গে সমান্তরাল ছিল মানবিক আবেগের যাত্রাপথ। তাই সম্ভাজির বন্দিদশায় নির্মম শারীরিক অত্যাচারের থেকেও মর্মভেদী হয়ে ওঠে পরাজয় ও স্বপ্নভঙ্গের গ্লানি।
পরিচালক লক্ষ্মণ উতেকর শিবাজি সাওয়ন্তের লেখা মূল উপন্যাসটির প্রতি বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেছেন। ‘হিন্দি মিডিয়াম’, ‘লুকাছুপি’, ‘মিমি’ প্রভৃতি মধ্যদৈর্ঘ্যের ছবি থেকে আচমকা সরে এসে এই মহাকাব্যিক ইতিহাসের পুনর্নির্মাণে তাঁর সত্যতা রক্ষার দায়বদ্ধতা থেকে শিল্প নির্মাণের পরিণতিবোধ প্রশংসনীয়। ঋষি ভার্মানির সংলাপ বেশ উত্তেজক। ক্লাইম্যাক্সের আগে সঙ্গমেশ্বরের যুদ্ধ দৃশ্যটি উৎকর্ষের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে।
ভিকি কৌশল এখনও পর্যন্ত তাঁর কেরিয়ারের শ্রেষ্ঠ পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন এই ছবিতে। চরিত্রের প্রতি নির্মম নিষ্ঠা, সুললিত অঙ্গ সৌষ্ঠবের সঙ্গে মানানসই সংলাপ প্রক্ষেপণ এবং প্রতিটি আবেগের যথাযথ বিন্যাস দিয়ে স্টারডমের নতুন শৃঙ্গজয় করেছেন তিনি। মহারানি ইসুবাই ভোঁসলের চরিত্রে রশ্মিকা মন্দানা নিজের পরিচিত ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসে লাবণ্য ও নারীশক্তির মিশেলে প্রোটাগনিস্টের চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছেন। সনাতন ভারতীয় নারীর প্রেম ও আনুগত্যের সঙ্গে রাজ পরিবার থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের সার্থক সমন্বয় ঘটেছে তাঁর চরিত্রে। শীতল, ধূর্ত ও হিসেবি ঔরঙ্গজেবের চরিত্রের কর্তৃত্ব তৃষ্ণাকে পরিমিত অথচ গাঢ় অভিব্যক্তি দিয়ে এঁকেছেন অক্ষয় খান্না।
ছবির প্রথমার্ধ সামান্য গতিহীনতায় আক্রান্ত। এআর রহমানের সঙ্গীত কাহিনির মেজাজকে অনুসরণ করেছে ঠিকই, কিন্তু তাঁর নাম মাহাত্ম্যের সঙ্গে মানানসই নয়। ক্লাইম্যাক্সের ভয়াবহতা সব ধরনের দর্শকের জন্য উপযোগী নয়। মারাঠা যোদ্ধাদের নামগুলি স্মৃতিশক্তির ওপর বাড়তি বোঝা। দ্বিতীয়ার্ধে সম্ভাজি যখন এক বীরের মৃত্যু সংবাদ পেলেন, তখন ঠিক কে মারা গেল সেটা ভাবতে বেশ কয়েক মুহূর্ত সময় লেগেছে দর্শকের। সৌরভ গোস্বামীর সিনেমাটোগ্রাফি উপভোগ্য ও পেশাদার। কিন্তু ছবিতে ব্যবহৃত ভিএফএক্স প্রযুক্তির মান ও মণীশ প্রধানের সম্পাদনা আরও ভালো হতে পারত। সুব্রত চক্রবর্তী ও অমিত রায়ের প্রোডাকশন ডিজাইন এবং শীতল ইকবাল শর্মার কস্টিউম পর্যাপ্ত গবেষণার ফসল। প্রীতিশীল সিং ডি’সুজার প্রস্থেটিকও আলাদা উল্লেখের দাবি রাখে।