ব্যবসায়িক কাজকর্ম ভালো হবে। ব্যবসার প্রসারযোগও বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষায় সন্তানের বিদেশ গমনের সুযোগ আসতে পারে। গৃহশান্তি ... বিশদ
রক্তে শর্করার মাত্রা একবার বেড়ে গেলেই হল! নিয়ন্ত্রণে আনতে কালঘাম ছুটে যায়। নিয়মমাফিক রুটিন মেনে, ওষুধ খেয়েও অনেক সময় দেখা যায়, সুগার কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এখন উপায়? সমাধান অবশ্যই আছে। শীতকাল আসছে। আর শীতকাল মানেই হরেক রকম শাকসব্জি ও ফলের মেলা বাজারজুড়ে। তেমনই বেশ কয়েকটি দিয়ে শুরু করুন ড্যাশ ডায়েট। ফাইবার ও নাইট্রেট সমৃদ্ধ এই ডায়েট সুগারের রোগীদের জন্য আদর্শ।
ড্যাশ ডায়েট কী?
‘ড্যাশ’-এর পুরো কথা ‘ডায়টারি অ্যাপ্রোচ টু স্টপ হাইপারটেনশন’। এটি মূলত ফাইবার ও নাইট্রেট সমৃদ্ধ। আধ কাপ কাঁচা অথবা সেদ্ধ সব্জি, আধ কাপ টাটকা সব্জির রস, আধ কাপ ড্রাই ফ্রুটস, আধ কাপ টাটকা ফল--- দিনের যে কোনও সময় অন্যান্য খাবারের সঙ্গে এই চারটি জিনিস খাওয়াই হল ড্যাশ ডায়েট। সুগারের জন্য আর্টারি, ব্লাড ভেসেল ও হৃদযন্ত্রের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়। এই ডায়েট ফর্মুলা মেনে চললে, এই সমস্যাগুলি থেকে উপকার পাবেন আপনি। ড্যাশ ডায়েট কোনও পূর্ণ খাদ্যতালিকা নয়। আপনি দৈনন্দিন জীবনে যে খাবার খান, তার পাশাপাশি এই ডায়েট মেনে চলতে পারেন। এর ফলে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ অনেকটা কমে যায়।
ড্যাশ ডায়েটের চার ধাপ
প্রথম ধাপে খেতে হবে কাঁচা বা রান্না করা সব্জি। এক্ষেত্রে শীতকালীন যে কোনও সব্জি খেতে পারেন। যেমন গাজর, বিট, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, বিনস, ক্যাপসিকাম, টম্যাটো। পাশাপাশি রসুন, পেঁয়াজ, আদা এগুলিও খান। যে কোনও প্রাকৃতিকভাবে রঙিন সব্জি উপকারী। সুগারের পেশেন্টদের চোখের সমস্যাতেও ভুগতে হয়। তাঁদের জন্য কাঁচা গাজর খুব উপকারী। কারণ গাজর ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। কুমড়ো ও তার বীজও খেতে পারেন। এটিও মাল্টি মিনারেল ও মাল্টি ভিটামিন সমৃদ্ধ। এছাড়াও লেটুস, সেলারি খাওয়া যায়।
দ্বিতীয় ধাপে সব্জির রস করে খেতে হবে। উচ্ছে, করলা ইত্যাদির রস খাওয়া ভীষণ উপকারী ডায়াবেটিকদের জন্য। এছাড়া গাজর, টম্যাটো, বিটের রস খেতে পারেন। পালং শাক, মেথি শাকের রস খাওয়াও ভালো। যে কোনও মাধ্যমেই মেথি (গুঁড়ো, শাক, গোটা) উপকারী।
তৃতীয় ধাপে খান ড্রাই ফ্রুটস। যেমন বাদাম, আখরোট, আমন্ড। খেজুর, কিশমিশ এগুলি এড়িয়ে চলুন।
চতুর্থ ধাপে ফল খেতে হবে। গোটা ফল চিবিয়ে খাওয়া বেশি উপকারী। কারণ তাতে ফাইবার পাওয়া যায়। স্মুদি বানিয়েও খেতে পারেন। যে কোনও ধরনের বেরি (ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি) সুগারের রোগীদের জন্য আদর্শ। জাম সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শীতকালে আমলকীও সুগারের জন্য খুব সাহায্য করে। ব্রেকফাস্টের টেবিলে ডায়বেটিক পেশেন্ট যদি রোজ একটুকরো আমলকী এবং এক টুকরো কাঁচা হলুদ খান, তাঁর ওজন যেমন কমবে তেমনই লিভার বা কিডনির সমস্যারও সমাধান হবে। ডায়বেটিক রোগীদের ক্রনিক ইনফেকশনের সমস্যা থাকে। তার জন্যও এটা খুব উপকারী। যদি কোনও রোগী অভিযোগ করেন, খেতে পারছেন না, তাহলে আমলকী ও হলুদের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মধু মেশানো যেতেই পারে। এছাড়াও বাতাবিলেবু, কমলালেবু, মুসাম্বিলেবু, ডাঁসা পেয়ারা, আপেল, কলা খেতে পারেন। কমলা, মুসাম্বিতে একটু মিষ্টি আছে ঠিকই, কিন্তু সেটা তেমন ক্ষতি করে না। অল্প করে আঙুর খাওয়াও যায়।
কীভাবে খাবেন?
যে সব্জিগুলি কাঁচা খেতে পারবেন, সেগুলি কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করুন। সম্ভব না হলে সেদ্ধ করে খান। অলিভ অয়েলে সামান্য ভেজে দারচিনি ছিটিয়েও খাওয়া যায়। অনেকে ব্রেকফাস্টে ডিমের মধ্যে সব্জি দিয়েও খেয়ে থাকেন। সেটিও উপকারী। ফল খেতে পারেন দুপুরের খাওয়ার পর। সুগারের রোগীরা খাওয়ার পর অনেক সময় মিষ্টি খেতে চান। চেষ্টা করুন খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে তাঁদের জল দিতে। এই ফাঁকে তাঁদের আপেল ও পেয়ারা দিতে পারেন। এতে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছেটা কমবে।
কোন কোন শাকসব্জি ও ফল এড়িয়ে চলবেন
বেশ কিছু শাকসব্জি ও ফল সুগারের রোগীদের এড়িয়ে চলাই উচিত। লিচু, আখ, চেরি, আনারস, আম এগুলি খাবেন না। আবার আলু, ভুট্টা এগুলিও খুব ক্ষতিকর। মূলত যাঁরা ডায়াবেটিক নন, তাঁরা অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খেলেও শরীরে থাকা ইনসুলিন মেটাবলিজ করতে পারে। সেই জন্য সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের তা হচ্ছে না। এর ফলে মাল্টিঅর্গান ড্যামেজের মতো সমস্যা তাঁদের হয়। আরেকটা কথা মাথায় রাখাও প্রয়োজন। গ্লুকোজ ছাড়া কারও চলবে না। কারণ আমাদের দেহের কোষগুলি কেবল গ্লুকোজই খায়। আমাদের এমন ধরনের খাবার বেছে নিতে হবে, যার ফলে অল্প অল্প করে গ্লুকোজ লেভেল বাড়বে।