দুর্ঘটনা আর আঘাত যোগ আছে; সতর্ক হোন। মানসিক উত্তেজনায় লাগাম দিন, বাক বিতণ্ডা এড়িয়ে চলুন। ... বিশদ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রদত্ত তথ্য অনুসারে— একটানা ১২ মাস স্বাভাবিক মেলামেশার পরেও কোনও দম্পতি সন্তানধারণে অসমর্থ হলে বুঝতে হবে ওই দম্পতি ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্বের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বন্ধ্যত্বের সমস্যার পিছনে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে মূল সমস্যাটা থাকে পুরুষ সঙ্গীর। ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে মহিলা সঙ্গীর এবং ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে উভয়ের সমস্যা থাকতে পারে। মুশকিল হল, আমাদের সমাজে কোনও দম্পতির সন্তান না হলে বারবার অভিযোগের তর্জনী ঘুরে যায় মহিলা সঙ্গীর দিকে। অথচ আধুনিক সময়ে পুরুষ বন্ধ্যত্ব জ্বলন্ত সমস্যা। তাই চোখ উল্টে না থেকে বাস্তবটা স্বীকার করাই পরিণত মানসিকতার লক্ষণ। দেখা যাক কোন কোন সমস্যাগুলি পুরুষ বন্ধ্যত্বকে চিহ্নিত করে—
• একবার এজাকুলেশনে সিমেনে স্পার্মের স্বাভাবিক সংখ্যা প্রায় ১.৫ কোটি থেকে ২ কোটি। অতএব স্বাভাবিকের চাইতে স্পার্মের সংখ্যা কম থাকলে হতে পারে পুরুষ বন্ধ্যত্ব।
• স্পার্মের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে বা সক্রিয় না থাকলে হতে পারে বন্ধ্যত্ব।
কোনও প্রতিবন্ধকতার কারণে স্পার্ম সঠিকভাবে বেরতে না পারলেও পুরুষ বন্ধ্যত্ব প্রকট হতে পারে।
উপরিউক্ত সমস্যাগুলি তৈরি হওয়ার পিছনে দায়ী থাকতে পারে দুর্ঘটনাজনিত আঘাত, দীর্ঘকালীন শারীরিক সমস্যা, অলস ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং অন্যান্য কিছু কারণ।
পুরুষদের বন্ধ্যত্বের ক্ষেত্রে স্পার্মের স্বাস্থ্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্পার্মের স্বাস্থ্য বলতে স্বাভাবিক সংখ্যা এবং সক্রিয়তা বজায় রাখার কথাই বলা হচ্ছে। কারণ সংখ্যা কম থাকলে যেমন বন্ধ্যত্ব আসতে পারে, তেমনই স্পার্ম যদি গতিহীন ও দুর্বল হয় তাহলেও তা নিজে এগিয়ে গিয়ে ওভামকে নিষিক্ত করতে পারবে না।
মেল ইনফার্টিলিটির কারণ—
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গণ্ডগোল (৫ শতাংশ)
হাইপোগোনাডিজম (১০ শতাংশ)
ভেরিকোসিল (১৭ শতাংশ)
সিস্টেমিক ডিজিজ (৩ শতাংশ)
সেক্সুয়াল ফ্যাক্টর (৬ শতাংশ)
ইউরোজেনাইটাল সংক্রমণ (৯ শতাংশ)
আনডিসেন্ডেড টেস্টিকলস (৮ শতাংশ, এক্ষেত্রে টেস্টিকল স্বাভাবিক অবস্থানে নেমে আসে না)
অন্যান্য কারণ (৮ শতাংশ)
ব্যাখ্যাতীত (৩৪ শতাংশ)
কোন কোন কারণে স্পার্ম কাউন্ট কমে—
অসংযমী জীবনযাত্রা: অলস এবং শরীরচর্চাহীন জীবনযাপন বন্ধ্যত্বের বিশেষ কারণ। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অন্যতম অঙ্গ হল এক্সারসাইজ। ফিট থাকতে সপ্তাহে পাঁচদিন ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করতেই হবে। ব্যায়ামের অভ্যেস বাড়ায় সামর্থ্য, রোগপ্রতিরোধ শক্তি, দ্রুত সুস্থ হওয়ার ক্ষমতা এবং করে তোলে সন্তানধারণের উপযোগী।
ধূমপান ও মদ্যপান: রোজ অ্যালকোহল পানের অভ্যেস পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। হ্রাস করতে পারে স্পার্মের উৎপাদন। ধূমপান থেকেও স্পার্মের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যেস ত্যাগ করুন।
স্ট্রেস: ব্যক্তিগত এবং কর্মক্ষেত্রের একটানা উদ্বেগও প্রভাব ফেলতে পারে প্রজনন ক্ষমতায়। কারণ, ক্রনিক স্ট্রেস বেশ কিছু হরমোনের উৎপাদনে বাধা তৈরি করে যা স্পার্ম তৈরিতে সাহায্য করে। অতএব স্ট্রেস সামলাতে নিয়মিত ধ্যান ও যোগা করুন। এছাড়া পড়তে পারেন বই, নাচতে এবং গাইতে পারেন ইচ্ছেমতো। তুলতে পারেন ছবি, করতে পারেন বাগান!
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাদ্য, প্রসেসড ফুড স্পার্ম কাউন্ট কমাতে পারে। তাই সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। শাকসব্জি বেশি করে খান। পাতে রাখুন মরশুমি ফল।
স্থূলত্ব: সন্তানধারণে বাধা তৈরি করতে পারে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলত্বের সমস্যা। কমাতে পারে স্পার্ম কাউন্ট। দৈহিক উচ্চতার তুলনায় ওজন কম থাকলেও হতে পারে সমস্যা। তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন ডায়েট এবং এক্সারসাইজের মাধ্যমে।
অসুরক্ষিত সংসর্গ: একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে অসুরক্ষিত ঘনিষ্ঠ মেলামেশা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ-এ (এসটিডি) আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। মেল ইনফার্টিলিটির পিছনে এসটিডি একটি বড় কারণ।
ড্রাগ: পেশির জোর বাড়াতে অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে অ্যানাবলিক স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকেও আসতে পারে বন্ধ্যত্ব।
কারণ এই ধরনের স্টেরয়েডের নিয়মিত ব্যবহারে টেস্টিকল সংকুচিত হয়ে যায়। সাময়িকভাবে হ্রাস পেতে পারে স্পার্ম উৎপাদন।