Bartaman Patrika
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

পাগল হাওয়া
দেবজ্যোতি মিশ্র

কবি, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীতকার... কোনও বিশেষণই তাঁর জন্য যথেষ্ট নয়। তিনি সলিল চৌধুরী। শতাব্দী পেরিয়েও বাঙালি জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে তাঁর গান। জন্মশতবর্ষের সূচনায় ‘গুরুবন্দনা’য় কলম ধরলেন দেবজ্যোতি মিশ্র

দেবজ্যোতি মিশ্র
 ভারতবর্ষের সঙ্গীতের মানচিত্রে রবীন্দ্রনাথ, নাকি বলব বাংলা সঙ্গীতের মানচিত্রে রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর ঠিক পরেই একটা ছেদ, একটা ডিপার্চার, একটা ফুল স্টপ। সলিল চৌধুরী। তার মানে এ তো নয় যে সেই  সময় আর কোনও কম্পোজাররা কাজ করেননি, নিশ্চয়ই করেছেন,কিন্তু সলিল চৌধুরী নিয়ে এলেন সঙ্গীতে একদম নতুন একটা দিক, এক অনন্য স্ট্রাকচার,  ফরম্যাট, অর্থাৎ  আঙ্গিক। সেই আঙ্গিকে এল একটা অনবদ্য পরিবর্তন যা আমরা রবীন্দ্রোত্তর যুগের বা তাঁর সমসাময়িক কোন কম্পোজারের মধ্যে পাইনি। কী ছিল তাঁর সঙ্গীতে? ছিল সারা ভারতবর্ষের সমস্ত প্রদেশের গান। পশ্চিমী সঙ্গীত এবং  অবশ্যই তাঁর নিজস্ব বোধ। ছিল তাঁর সময়কাল, যে সময়কালে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর ঐতিহ্য এবং সেই ঐতিহ্যকে ভেঙে বেরনো, যে কারণে একটা ছেদ, যে কারণে একটা ফুল স্টপ। রবীন্দ্রনাথের উত্তরসূরী হিসেবে সলিল চৌধুরীর গানের স্ট্রাকচার কেন গণ্য হবে? কেন বলা হবে যে এটা একটা আমূল পরিবর্তন? এটা সেই পরিবর্তন  যা তিনি তাঁর পরবর্তী সময়ে বয়ে নিয়ে যাবেন। গণসঙ্গীতের প্রসঙ্গে সলিল চৌধুরী বার বার একটা কথা বলেছেন যে ‘আমরা কাজীদার ঝাঁকের মাছ’। মানে নিজেকে  ‘আমাদের’ বলেছেন। ‘আমি’ কাজীদার ঝাঁকের মাছ বলছেন না। এইটা খুব জরুরি । কাজীদার ঝাঁকের মাছ হয়েও গণসঙ্গীতের স্ট্রাকচারে সলিল চৌধুরীর মধ্যে  আমরা এমন কতগুলো মিউজিক্যাল প্রোগ্রেশন পেলাম  যা কিন্তু ঠিক তাঁর আগে কখনও ছিল না। অর্থাৎ কাজী নজরুল ইসলামের যা গণসঙ্গীত বা রবীন্দ্রনাথের যা জাগরণের সঙ্গীত , তাতে এই জিনিস পাওয়া যায়নি। এখানে আমরা পেলাম ইউরোপীয়ান রেনেসাঁ , পেলাম বেঠোফেনের ফিফথ সিম্ফনি, যা জারিত করছে সলিল চৌধুরীকে, প্রত্যক্ষভাবে নয়, একটা ইন্সপিরেশন হিসেবে। একটা হারমনিক প্রোগেশন পেলাম যা  সুরের মধ্যেই একটা মেলোডি, অর্থাৎ মোনোলিনিয়র  সুরের মধ্যেই সেই প্রোগ্রেশন থাকছে,  শুধু গাইলে পরেই সেই হারমনিটা তৈরি হয়,বোঝা যায় যে এটি সব রকমের গানের মধ্যে থেকে, সে তাঁর সমকালীন গণসঙ্গীত হোক বা তার আগেও যারা কম্পোজ করেছেন, একেবারে যদি জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র থেকে ধরি, প্রত্যেকের গানের থেকে একেবারে আলাদা। চারের দশকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ  এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসছে সেখানে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ শুধু ভাষা নয় তাঁর প্রতিবাদের স্বর, প্রতিবাদের সঙ্গীত কিরকম হয়ে উঠবে, তা তৈরি করলেন। শব্দের বাইরে সঙ্গীতের নিজস্ব যে স্বর তার উচ্চারণ তৈরি হল। যাকে আমরা আবার দেখতে পেলাম আমাদের ঠিক এই সময়ে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে। এই মুহূর্তে সারা পৃথিবী জুড়ে যে যুদ্ধ, আমাদের দেশে যে যুদ্ধগুলো চলছে সেই সমস্ত রকম যুদ্ধ। ধর্মের যুদ্ধ, সংস্কৃতির যুদ্ধ। সংস্কৃতির যুদ্ধ কথাটা হয়তো ঠিক হল না, আমি সেই যুদ্ধের কথা বলতে চাইছি যে যুদ্ধ মানুষ কে সংস্কৃতি বিচ্যুত করে। আমাদের চারিদিকে এই যে নীতি বোধের অভাব যা আমাদের ভেঙে দিচ্ছে,আমাদের মধ্যে  বিভেদ তৈরি করছে সেই বিভেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখতে পাচ্ছি আবার ‘পথে এবার নামো সাথী’ ‘ঢেউ উঠছে কারা টুটছে’ কিংবা ‘প্রতিবাদের ভাষা’ , বা ‘হেই সামালো ধান হো’ আবার সমস্বরে গাওয়া হচ্ছে। চাষির শস্যের জন্য যে ব্যথা, তার যে স্ট্রাগল এবং প্রতিবাদ সেখানে দাঁড়িয়ে ‘হেই সামালো ধান হো’ সফল একটা গান। সেই ব্যথা, সেই কষ্ট কোথাও মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে এই ঘটমান মুহূর্তের সঙ্গে। আমাদের আর জি করের ঘটনা নিয়ে সারা পশ্চিমবঙ্গের শহর কলকাতা ছাড়াও গ্রামে মফস্বলে  আধা শহরে , সর্বত্র যা হয়েছে তার নব্বই শতাংশ গান সলিল চৌধুরীর গান । সুতরাং মনে হয় সলিল চৌধুরীর গানের শক্তি অসীম এবং কালোত্তীর্ণ  হয়েছে । চারের  দশকে বা পাঁচের দশকের প্রথম দিকে লেখা  কোনও গান  যখন শতাব্দী পেরিয়ে আজও তরুণ তরুণী গেয়ে ওঠে, প্রতিবাদের মুহূর্তে তাদের কন্ঠ যখন আজ ও  সলিল চৌধুরীর  আলোর পথযাত্রী বা আমার প্রতিবাদের ভাষার শরণ নেয় , আমার মনে হয় এটাই প্রকৃত গণসঙ্গীত। এ গানের কথা তো শুধু লিরিক মাত্র নয় এই কথা শিল্পীর জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ। তাই  এটা আমার কাছে ভীষণ বড় একটা ব্যাপার বলেই মনে হয়।
সুরকার ও গীতিকার সলিল চৌধুরী—এ কথা বললেই সঙ্গীতকার সলিল চৌধুরী যেন কোথাও ম্লান হয়ে যান। আসলে সলিল চৌধুরী একজন কবি এবং গীতিকার। সব কবিই গীতি ভাষ্য লিখতে পারেন না অর্থাৎ সঙ্গীতে কিংবা সুরে কথা বসিয়ে তাকে গীতের উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন না, তাই একজন কবি ও গীতিকার সলিল চৌধুরী তাঁর প্রতিটি গানে থাকেন। সঙ্গীতকার না হলে এই যে গানের আগে অনবদ্য সব  প্রিলিউড ইন্টারল্যুড, অর্থাৎ গানের আগে যে সুর, যেখানে কথা নেই বা গানের অন্তর্বর্তী অংশে যেখানে কথা নেই, সেখানের গল্পে তো ফাঁক পড়ে যায়, সলিল চৌধুরী গানের সেই অংশটুকুও পরম যত্নে তৈরি করতেন। কি অনবদ্য! কি অনন্ত প্রাণ সেই সব সুরে! তার গানের গা বেয়ে যেসব সুরের নদী বয়ে যায়, যাকে পশ্চিমী সঙ্গীতের ধারণায় বলে অবলিগেটো, হারমনি, কাউন্টার পয়েন্ট সেসব ছাড়া সলিল চৌধুরী হয় নাকি! তাই ভারতবর্ষের সঙ্গীতের ধারায় সলিল চৌধুরী অনেকগুলো নামের পাশে বসে যেতে পারে না । তিনি অনন্য, কারণ তিনি অন্যতম সঙ্গীতকার। তাঁর সহযাত্রী আরও যাঁরা সঙ্গীতকার, তাঁদের থেকে তিনি আলাদা কোথায় সেটা আমাদের বুঝে নিতে হবে। বিস্ময়কর শচীনদেব বর্মণ,  মদনমোহন, হিমাংশু দত্ত বা সুধীন দাশগুপ্ত বা আরও যাঁরা ছিলেন তাঁদের থেকে কোথায় তফাৎ গীতিকার, সুরকার ও কবি সলিল চৌধুরীর।
শতবর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নানান কথা মাথায় উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। অনেক অনেক  ভাবনা আমার। সেই সতেরো বছর বয়স থেকে মুগ্ধ বিস্মিত হয়ে বোঝবার চেষ্টা করেছি সলিল চৌধুরীর গানের মাহাত্ম্য। এই মাহাত্ম্য বুঝতে গেলে যে বিদ্বজন হতে হয়, বিদগ্ধ মানুষ হতে হয়, তা নয়। যে কোনও সাধারণ মানুষের মনেও সলিল চৌধুরীর গান মায়া বুনে দিয়ে যেত। সলিল চৌধুরীর গানের ভেতরে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে তার আলো। এমনকী যে গানে বিষাদ ধরা দেয়, মেঘ ছায়া ধরা দেয়, তাও আকুল অপেক্ষায় থাকে অন্ধকার টানেলের শেষে অদূরেই আলো দেখবে বলে, তিনি আলোর সহযাত্রী, আলোর পথযাত্রী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আলোর উপাসক। সলিল চৌধুরী তাঁর সুযোগ্য ভাবশিষ্য। আমরা প্রায়ই শুনে থাকি  রবীন্দ্রনাথ যখন মারা গিয়েছেন, তখন সলিল চৌধুরী অশৌচ পালন করেছিলেন। আমাকে সলিলদা বলতেন ‘জানিস রবীন্দ্রনাথ না থাকলে আমরা কেউই কিছু হতাম না। তিনি না থাকলে বাঙালি জগতের সংস্কৃতি,  যে সংস্কৃতি একটা সময় ভারতবর্ষকে মগ্ন করেছিল চিন্তাশীল ব্যক্তিদের, সঙ্গীতকারদের, অন্তত সেই বাংলা সংস্কৃতি তো হতোই না। সংস্কৃতির জায়গাটাই তৈরি হতো না। এটা সলিলদা বার বার বলতেন। আমাদের ধরে নিতে হবে এই জায়গাটা ঠিক কি। রবীন্দ্রোত্তর যুগের আলোর উপাসক  হয়েও তাঁর আলোর যাত্রাপথটা ছিল ভিন্ন। একটা ছেদ, একটা ডিপার্চার । একটা ফুল স্টপ দিয়ে শুরু হয় এই যাত্রা। পিতার হাত ধরে দাঁড়িয়ে পুত্র বলছেন—আমি তোমার পুত্র। আমি তোমার আশীর্বাদ নিয়ে ভিন্ন পথে যাচ্ছি। কারণ আমার পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ লেগেছে, মড়ক লেগেছে , বিশ্বযুদ্ধে ছারখার হয়ে গেছে আমার এই পৃথিবী। আমার পৃথিবীতে এত আলো নেই এখন। এখানেই উত্তরাধিকার আর এখানেই ছেদ। কিন্তু বার বার করে রবীন্দ্রনাথের কাছে তিনি তাঁর ঋণ স্বীকার করেছেন।
বিষয় আর আঙ্গিক—সলিল চৌধুরীর গানে এই জায়গাটা নিয়ে বলতে গেলে সবচেয়ে বড় যে জায়গাটা আসে সেটা হল গণসঙ্গীতের সুরে এমন কিছু মিউজিয়াল স্ট্রাকচার তৈরি করতে পেরেছিলেন যা চারের দশক থেকে শুরু করে ২০২৪ এ রাস্তায় আমাদের এই সময়ের বিপ্লবেও তাঁর গানগুলো গনগনে আগুনের মতো হয়ে রয়েছে। যা শুনলে মনে হয় এই তো গতকাল সবে আগুনে আঁচ দেওয়া হয়েছে। এর কোনও কোনও গান যে অশীতিপর, কারুর বয়স সত্তর বা তার ওপারে তা মনে হয় না। তার মানে চারের দশকের নৌ বিদ্রোহের পটভূমির গান “ঢেউ উঠছে কারা টুটছে” বা পথে এবার নামো সাথী বা কৃষক আন্দোলনের হেই সামালো ধান হো, আজও একইরকমভাবে প্রাসঙ্গিক। কিন্তু ওই সময়েই আরও যারা সঙ্গীতকার ছিলেন যারা গণনাট্যে এসেছিলেন বিপ্লবে শামিল হবেন বলে, তাদের কাছে বিপ্লবের বিষয়টা মুখ্য ছিল ,কিন্তু গান গুলো রয়ে গেল সলিল চৌধুরীর। এটা এক বিস্ময় আর এই বিস্ময়  আবিষ্কার করা যায়না। এটা সেই শিল্পী , কবি  সেই  সঙ্গীতকারই জানেন যে তাঁর নিজস্ব ফর্মের  মধ্যে  কিরকম ভাবে তিনি অনেক বড়  সময়কে ধরতে পারবেন যা, কালোত্তীর্ণ হবে। আসলে তিনি নিজেও বোধহয় পুরোটা জানেন না। এ সৃষ্টি ‘হয়ে ওঠে’। আর এই হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটা আমরা শুধু দেখতে পারি মাত্র, বিস্মিত হতে পারি । এটা বলা যায়না । এটা সলিল চৌধুরীর গানের বিশেষ করে  তাঁর গণনাট্যের গানের একটা সাংঘাতিক  জায়গা।
আজ যখন বসে ভাবি, দেখি যে স্মৃতির কত দাগ রয়ে গেছে সমস্ত চেতনা জুড়ে। আটের দশকের সেই সময়টা, যখন সলিলদার ছায়াসঙ্গী হয়ে দিন কেটেছে। সারাদিন,  সকাল থেকে সন্ধে পার করে শুধু গান, শুধু সুর। সলিলদার মুখ থেকে কত গল্প শুনেছি, কত স্মৃতি সঞ্চয় করেছি, সেগুলোই যেন আজ আমার জীবনের মূলধন। সলিল দা বলতেন গরফার সেই বাড়ির কথা ,গীতা মুখার্জি কি অপূর্ব গাইতেন!  সেখানে অভিজিৎদা, প্রবীরদা, অনলদা—সবাই মিলে আড্ডা, গান। সেখানেই তৈরি হয়েছিল “পথে এবার নামো সাথী,” “ধিতাং ধিতাং বোল”-এর মতো গান। এসব গান ছিল যেন আন্দোলনের মশাল। কোরাসের প্রয়োগে, হারমোনির বৈচিত্র্যে সলিলদা এমন কিছু করতেন, যা আগে কেউ কখনও শোনেনি।
শুনতে যেমন লাগে আসলে সবটাশএত সহজ ছিল না অবশ্য। মিটিং-এর জন্য গান, কৃষকদের জন্য গান—সবই সিঙ্গল রিড হারমোনিয়ামে তৈরি হয়েছে। মফস্বলের মাঠে, গ্রাম-গঞ্জের সমাবেশে গান গাইতে গাইতে কখন যেন বোঝার আগে গানই হয়ে উঠল আন্দোলনের ভাষা ।
একবারের কথা মনে পড়ে, সলিলদা বলেছিলেন যাদবপুরে কলেজের এক অনুষ্ঠান হবে, সলিলদার দল গাইবে, তারপরে পঙ্কজ মল্লিকের গান। তিনি সরাসরি বলেছিলেন, “তোমাদের ওই হইচই গানের পরে আমার গান টিঁকবে না। আমি বরং আগে গেয়ে নিই।”  এ কথা শুনলে বোঝা যায়, ওঁদের গানের প্রভাব কতটা গভীর ছিল।
সলিলদার গল্পগুলো আরও গভীর। কোদালিয়ার স্মৃতি। বিদ্যাধরী নদীর নোনাজলে ভেসে যাওয়া জমি। ভূমিহীন কৃষকদের আর্তনাদ। সেখান থেকেই তাঁর গান। “বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা”—এই গান তো সেখানেই জন্ম নিয়েছিল। রংপুর ছাত্র সম্মেলনে দশবার গাইতে হয়েছিল। তিনি বলতেন, এই গান তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
তবে এসবের মাঝে শহরের এলিটরা সবসময় এই গানকে ছোট করে দেখেছে। তারা সন্দেহ ছিল যে কীর্তন ভেঙে আদৌ বলিষ্ঠ গান করা যায় কি না। কিন্তু কৃষকের, শ্রমিকের কাছে এই গান ক্রমশ তাদের ভাষা হয়ে উঠছিল। তাদের তাগিদ সলিলদাকে দিয়ে আরও গান তৈরি করিয়ে নিত।  
 স্মৃতি ঘুরে ফিরে আসে। সন্দেশখালির কৃষক সম্মেলন।তখনও গান তৈরি হয়নি। ভাটিয়ালি সুরে চারটে লাইন লিখে গাইতে হয়েছিল। তৎক্ষণাৎ লেখা সেই গান থেকে শুরু হয়েছিল যে যাত্রা, তা কখনো থামেনি।
আজ যখন ভাবি, মনে হয়, গান তখন শুধু সুর ছিল না। গান ছিল অস্ত্র, গান ছিল প্রতিবাদের ভাষা। কিন্তু এই পথও সহজ ছিল না। কত গান হারিয়ে গেছে। “জনান্তিক” আর “সংকেত” নাটকের পান্ডুলিপি আজ আর পাওয়া যায় না। এসব ভেবে সলিলদার মুখে এক অদ্ভুত বিষণ্নতা দেখতাম।
তাঁর হারিয়ে যাওয়া গানগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতো ছিল। আজ বুঝতে অসুবিধে হয় না,যে কোনো মৌলিক সৃষ্টির সঙ্গে যে আবেগ জড়িয়ে থাকে, সেই সৃষ্টি হারিয়ে গেলে কতখানি যন্ত্রণা হয়।
“প্রান্তরের গান আমার, মেঠো সুরের গান আমার
হারিয়ে গেল কোন বেলায়, আকাশে আগুন জ্বালায়।”
এই গান যেন সলিলদার অন্তরের  আবেগের ভাষা। একটা গোটা সময়, একটা আন্দোলন, একজন মানুষ—সবকিছু মিলেমিশে গড়ে তুলেছিল তাঁর গান। আর সেই গান আজও বয়ে  চলেছি আমাদের স্মৃতির পাতায়।
ছবি সৌজন্যে : সুব্রত ভট্টাচার্য
 
24th  November, 2024
রাজা হবুচন্দ্রের বংশধর

যদি বলি, এটি আমারই পূর্বজদের নিয়ে লেখা একটা ছড়া, আমার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার? তখন তা শুধু রসে-বশে গল্পের খোরাকই নয়, একপ্রকার আত্ম-পরিচয়ের স্মারকও হয়ে ওঠে নাকি? এ ছড়া তো মাত্র গত শতকের কথা। ইতিহাসের আরও গভীরে আর্যপূর্ব যুগের লোককাহিনীতে যদি নিজের পূর্বজদের সন্ধান পাওয়া যায়, তবে কেমন হবে? তখন কী আমাদের দু’দেশের সমবর্তী সংস্কৃতি, কল্পনা, এবং ঐতিহ্যকে আর রাজনৈতিক সীমারেখায় আটকে রাখা যাবে?
বিশদ

09th  February, 2025
কম্বলদাদু,  হনুজেঠু ও  লেপসাহেব

আমাদের  পাশের বাড়িতে থাকতেন অমরদাদু। শীত পড়লেই তিন-তিনটে নানা রঙের কম্বল নিয়ে বাড়ির ছাতে গিয়ে কম্বলমুড়ি দিয়ে বসে পড়তেন  দাদু। পাড়ার সবাই দাদুকে ‘কম্বলদাদু’ নামে একডাকে চিনতেন।
বিশদ

02nd  February, 2025
সাধারণতন্ত্র  ৭৫

একমাস আগে, ২৫ জুন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ২২ জুলাই পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সামনে বসে থাকা বিরোধীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনারা এতকাল আমাকে আক্রমণ করে বলতেন আমি নাকি ডিক্টেটর। স্বৈরাচারী। অথচ আমি মোটেই স্বৈরাচারী ছিলাম না।’ একটু থেমে তাকালেন  সকলের দিকে।
বিশদ

26th  January, 2025
মেহফিল-এ ডোভার লেন
সায়নদীপ ঘোষ

পাঁচের দশকের একদম শুরুর দিকের কথা। সিংহি পার্কের বিজয়া সম্মিলনি। নাটক, আধুনিক গান আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত মিলিয়ে তিনদিনের জমজমাট অনুষ্ঠান। দেখা গেল, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি পাড়ার মানুষদের আগ্রহ সবথেকে বেশি। সই দেখে পাড়ার যুবকরা ঠিক করলেন, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বার্ষিক অনুষ্ঠান করতে হবে। বিশদ

19th  January, 2025
‘না’ বলার সুযোগ ছিল না
পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

আটের দশকের কথা। ডোভার লেনে বাজাবেন উস্তাদ জাকির হুসেন। কিন্তু কোনও কারণে আসতে পারেননি উনি। এদিকে অনুষ্ঠানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। তিন ঘণ্টা আগে বাড়িতে হাজির উদ্যোক্তারা। ‘না’ বলার কোনও সুযোগ ছিল না। গাড়ি করে নিয়ে গেলেন। বিশদ

19th  January, 2025
দার্জিলিংয়ে স্বামীজি

স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য চারবার দার্জিলিং গিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। আতিথ্য নিয়েছিলেন মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বলেন ভিলা’য়, বর্ধমানরাজের প্রাসাদ ‘চন্দ্রকুঠী’তে। সেই ‘বলেন ভিলা’ আজ নিশ্চিহ্ন। কেমন আছে ‘চন্দ্রকুঠী’? খোঁজ নিলেন অনিরুদ্ধ সরকার  
বিশদ

12th  January, 2025
শীতের সার্কাস
কৌশিক মজুমদার

আমাদের দক্ষিণবঙ্গে শীত আসে দেরিতে, যায় তাড়াতাড়ি। জয়নগর থেকে মোয়া আসা শুরু হয়েছে। স্বর্ণচূড় ধানের খই দিয়ে তৈরি, উপরে একফালি বাদামি কিশমিশ। রোদের রং সোনা হয়েছে। সকালের রোদ বাড়তে বাড়তে পা ছুঁলেই মিষ্টি এক উত্তাপ। বিশদ

05th  January, 2025
বছর শেষে কোন পথে দেশ
সমৃদ্ধ দত্ত

‘তালা খুলে দাও!’ প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে বললেন অরুণ নেহরু। ১৯৮৬ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ। শাহবানু মামলা নিয়ে হিন্দুরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। খোদ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থাগুলি তেমনই রিপোর্ট দিচ্ছে। রাজীব গান্ধী উদ্বিগ্ন। তিনি বুঝতে পারছেন, ক্রমেই রাজনীতির মধ্যে হিন্দুত্ব প্রবেশ করছে। বিশদ

29th  December, 2024
আকাশ ছোঁয়ার শতবর্ষ

কলকাতা বিমানবন্দরের ১০০ বছর! গড়ের মাঠের এয়ারফিল্ড থেকে দমদমার মাঠে বিমানবন্দর গড়ে ওঠার কাহিনি রূপকথার মতো। সেই অজানা ইতিহাসের খোঁজে অনিরুদ্ধ সরকার
বিশদ

22nd  December, 2024
অজানা আতঙ্ক ডিজিটাল অ্যারেস্ট
সৌম্য নিয়োগী

পুলিস নেই, হাতকড়া নেই, গারদ নেই... স্রেফ ইন্টারনেট যুক্ত কম্পিউটার বা ট্যাবলেট নিদেনপক্ষে একটা স্মার্টফোন থাকলেই ব্যস— ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট থুড়ি ডিজিটাল বিশদ

15th  December, 2024
আজমিরের দরবারে
সমৃদ্ধ দত্ত

 

আজমির দরগায় কি মহাদেবের মন্দির ছিল? আচমকা এমন এক প্রশ্ন ঘিরে তোলপাড় দেশ। যুক্তি, পাল্টা যুক্তির মধ্যেই ইতিহাসের পাতায় চোখ বোলাল ‘বর্তমান’ বিশদ

08th  December, 2024
উমা থেকে দুর্গা

বিভূতিভূষণের সেই দুর্গা বইয়ের পাতা থেকে উঠে এল সত্যজিতের ছবিতে। সারা জীবনে একটি ছবিতে অভিনয় করে ইতিহাস হয়ে আছেন। কিন্তু নতুন প্রজন্ম মনে রাখেনি তাঁকে। ১৮ নভেম্বর নিঃশব্দে চলে গেলেন তিনি। ‘পথের পাঁচালী’-র দুর্গা, উমা দাশগুপ্তকে নিয়ে লিখেছেন সুখেন বিশ্বাস।
বিশদ

01st  December, 2024
হারানো বইয়ের খোঁজে

সন্দীপদা, মানে ‘কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্রের’ স্থাপক এবং লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রাহক সন্দীপ দত্ত চলে গেছেন প্রায় দেড় বছর হল। বছর চারেক আগে খোলামেলা এক আড্ডায় সন্দীপদা বলেছিলেন, “৭২এ স্কটিশে বাংলা অনার্স পড়ার সময় আমি মাঝেমাঝেই ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে যেতাম। মে মাসের একটা ঘটনা। … দেখলাম বহু পত্রিকা একজায়গায় জড়ো করা আছে।
বিশদ

17th  November, 2024
ট্রাম্পের আমেরিকা
মৃণালকান্তি দাস

‘ইফ হি উইনস’, এই শিরোনামেই টাইম ম্যাগাজিন গত মে মাসে সংখ্যা প্রকাশ করেছিল। সেই সংখ্যায় সাংবাদিক এরিক কোর্টেলেসা জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বহুযোজন এগিয়ে গিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশদ

10th  November, 2024
একনজরে
রাজ্যে কৃষিকাজে সেচের জন্য যে পাম্প চলে, সেখানে যাতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায়, তার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি স্কুলগুলিতে মিড ডে মিলের ক্ষেত্রে রান্নার কাজে এলপিজির বদলে যাতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার হয়, চেষ্টা চলছে তারও। ...

কোন সিন্ডিকেটের জন্য চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করল জেলা প্রশাসন। খাদ্যদপ্তর বিভিন্ন রাইসমিলের পাশাপাশি গোডাউনেও অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুচরো বিক্রেতাদের ...

৫৫ বলে ৫২। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের নিরিখে মন্দের ভালো। টানা ব্যর্থতার পর অবশেষে রানে ফেরার ইঙ্গিত মিলল বিরাট কোহলির ব্যাটে। বুধবার মোতেরায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় একদিনের ...

১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী হিংসা। তৎকালীন সময়ে দিল্লির সরস্বতী বিহারে এক বাবা ও ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ ওঠে সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে। ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

বিশ্ব রেডিও দিবস
১৬০১: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমুদ্র পথে ভারত আগমন
১৮৩২: লন্ডনে প্রথম কলেরার প্রাদুর্ভাব
১৮৭৯: স্বাধীনতা সংগ্রামী ও কবি সরোজিনী নাইডুর জন্ম
১৮৮২: কলকাতায় প্রথম পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়
১৯৩১: ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে নয়াদিল্লিতে স্থানান্তর হয়
১৯৪৫: অভিনেতা বিনোদ মেহরার জন্ম
১৯৬০: ফ্রান্সের সফল পরমাণু পরীক্ষা
১৯৬৯: পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের প্রথম বাঙালি গভর্নর ও ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান
১৯৭৪ – উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী ওস্তাদ আমির খাঁর মৃত্যু
১৯৮৫: টেনিস খেলোয়াড় সোমদেব দেববর্মনের জন্ম 
২০১৫: কেশব রেড্ডি, ভারতীয় চিকিৎসক ও লেখক



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৮৫.৮৮ টাকা ৮৭.৬২ টাকা
পাউন্ড ১০৬.০৭ টাকা ১০৯.৮১ টাকা
ইউরো ৮৮.১৬ টাকা ৯১.৫৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৮৫,৩০০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৮৫,৭০০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৮১,৪৫০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৯৪,৮৫০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৯৪,৯৫০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

১ ফাল্গুন, ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। প্রতিপদ ৩৫/২০ রাত্রি ৮/২২। মঘা নক্ষত্র ৩৭/১৩ রাত্রি ৯/৭। সূর্যোদয় ৬/১৩/৪৫, সূর্যাস্ত ৫/২৮/১১। অমৃতযোগ রাত্রি ১/৭ গতে ৩/৪১ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ দিবা ৭/৪৩ মধ্যে পুনঃ ১০/৪৩ গতে ১২/৫৮ মধ্যে। বারবেলা ২/৩৯ গতে অস্তাবধি। কালরাত্রি ১১/৫১ গতে ১/২৬ মধ্যে। 
৩০ মাঘ, ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। প্রতিপদ রাত্রি ৭/৫২। মঘা নক্ষত্র রাত্রি ৯/০। সূর্যোদয় ৬/১৬, সূর্যাস্ত ৫/২৭। অমৃতযোগ রাত্রি ১/০ গতে ৩/২৮ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ দিবা ৭/২৯ মধ্যে ও ১০/৩৬ গতে ১২/৫৭ মধ্যে। কালবেলা ২/৪০ গতে ৫/২৭ মধ্যে। কালরাত্রি ১১/৫২ গতে ১/২৮ মধ্যে। 
১৪ শাবান।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
শিয়ালদহের ফুল বাজারে আগুন, ঘটনাস্থলে দমকলের ৭টি ইঞ্জিন

11:06:00 PM

ওয়াশিংটনে শুরু হয়েছে মোদি এবং মাস্কের বৈঠক

10:43:00 PM

বীরভূমের হেতমপুরে একটি বাড়িতে আগুন
বীরভূমের দুবরাজপুরের হেতমপুর পঞ্চায়েতের চিৎগ্রামে একটি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড। জানা গিয়েছে, ...বিশদ

10:22:00 PM

এসআই অমিতাভ মালিক হত্যা মামলা: দার্জিলিং আদালতে আত্মসমর্পণ বিমল গুরুংয়ের
রাজ্য পুলিসের এসআই অমিতাভ মালিক হত্যা মামলায় আজ, বৃহস্পতিবার দার্জিলিং ...বিশদ

10:17:00 PM

উত্তরপ্রদেশের আরালি ঘাটে চলছে আরতি

10:04:00 PM

ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজের মধ্যে শুরু হয়েছে বৈঠক

09:47:00 PM