পারিপার্শ্বিক কোনও ঘটনা চিন্তা বাড়াতে পারে। সাংস্কৃতিক কর্মে যোগদান ও মানসিক তৃপ্তিলাভ। শরীরের খেয়াল রাখুন। ... বিশদ
ইন্টিরিয়র ডিজাইনার অনন্যা রায়ের কথায়, ‘দেওয়ালের সাজ বা ডেকর বদলে দেখুন, বাড়ি একেবারে নতুন লাগবে।’ কেমন সেই নতুনত্ব? চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছবির দেওয়াল: ঘরের এমন দেওয়াল বেছে নিন যা সহজেই সবার চোখে পড়ে। আর সেই দেওয়ালটাই ছবির দেওয়াল করে তুলুন। তবে তার আগে সামান্য একটু প্রস্তুতি প্রয়োজন। প্রথমত দেওয়ালের রং খুব উজ্জ্বল হওয়া চাই। দ্বিতীয়ত ছবির বাছাই এমন হবে যাতে তা দেওয়ালের সঙ্গে কনট্রাস্ট তৈরি করে। সেই মতো ফ্রেমও বাছতে হবে। ফ্রেমে বাঁধানোর সময় ছবির চারপাশে যে বর্ডার রাখা হবে তাতেও ওই একই কনট্রাস্ট রাখা চাই। অর্থাৎ ছবির পটভূমি যদি একটু হাল্কা হয় তাহলে দেওয়ালের রং চড়া থাক, নচেত তা ফুটবে না। একইভাবে দেওয়াল যদি হালকা রঙের হয়, তবে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড গাঢ় হওয়া জরুরি। ছবি নির্বাচন করতে হবে একটা কোনও থিম ভেবে। অর্থাৎ প্রকৃতি বা মানুষ অথবা সৌধ বা বন্যপ্রাণী, পছন্দ অনুযায়ী থিম সাজান। অনেকে আবার জঙ্গল, পাহাড়, ফুল ইত্যাদি দিয়েও থিম বানিয়ে ফেলেন। এরপর আসবে সারিবদ্ধভাবে সাজানোর রীতি। এটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। লম্বা এবং চওড়া ছবি ফ্রেমবন্দি করে একটা প্যাটার্ন তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন দেওয়ালের মাঝখানে খানিকটা অংশই ছবিতে ভরা থাকবে। অতিরিক্ত ছবি লাগলে কিন্তু জবরজং হয়ে যাবে।
মাদুরের সাজ: এই সাজটি দু’রকম ভাবে করা যায়, বললেন অনন্যা। গোটা মাদুরের সাজ আর কাটা মাদুরের সাজ। অর্থাৎ, দেওয়ালের মাপ অনুযায়ী একটা গোটা মাদুরের অংশ নিন। সেটাকে কাঠের ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেওয়ালে লাগান। অথবা মাদুর থেকে কয়েকটা মোটামুটি চওড়া ফালি কেটে নিন। প্রতিটি আলাদা করে ফ্রেমে বাঁধিয়ে নিন। এরপর দেওয়ালের গায়ে তা লাগান খানিকটা ফাঁক রেখে। এক্ষেত্রে দেওয়ালের রং যেন মাদুরের সঙ্গে খাপ খায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এই মাদুর যখন ফ্রেমে বাঁধাবেন তখন তা কাচে মুড়বেন না। বরং চারদিকে কাঠের ফ্রেম রেখে মাদুরের অংশ খালি রাখুন। অনেকে আবার মাদুর বিভিন্ন ছোট বড় আকারে কেটে তা আলাদা করে ফ্রেম করে নেন। তারপর সেগুলো একটা নকশায় সাজিয়ে দেওয়ালে লাগান। তাতেও দেখতে ভালো লাগে।
পাটের সাজ: এখন হোম ডেকর হিসেবে খুবই জনপ্রিয় জুট বা পাট। তা দিয়ে দেওয়াল বিভিন্নভাবে সাজানো সম্ভব। ধরুন, পাটের বিনুনি বুনলেন। তারপর সেগুলো একে ওপরের সঙ্গে জুড়ে তাই দিয়ে বানালেন দেওয়াল সজ্জা, একেবারে অন্যরকম লাগবে আপনার ঘর। অথবা বিনুনিগুলো আলাদা আলাদাভাবে লম্বালম্বি ঝুলিয়ে দিতে পারেন দেওয়ালে। একেবারেই ভিন্ন লুক আসবে। অথবা আপনার বসার ঘরে চেয়ারের পিছন দিকে পাটের প্যানেল করতে পারেন। মাচিয়া বা মোড়া যদি রাখেন বসার ঘরে তাহলে তার পিছনের দেওয়ালে পাটের ফ্রেম ডেকর লাগান।
ওয়াল প্লেট: আজকাল গৃহসজ্জায় ওয়াল প্লেট খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেরামিক, তামা, কাচ নানারকম প্লেট ব্যবহার করা যায় বাড়ির দেওয়াল সাজানোর জন্য। এই বিষয়ে অনন্যা বললেন, বসার ঘরে এই সাজ সবচেয়ে সুন্দর লাগে। সেরামিকের প্লেট হলে তাতে ছবি আঁকানো যায়। প্রিন্টেড প্লেটও পাবেন নানারকম। ফুল, প্রাকৃতিক দৃশ্য, নিস্বর্গ সব ধরনের প্রিন্টই বাজারে পাওয়া যায়। এছাড়া তামার প্লেট লাগাতে পারেন। বিভিন্ন এথনিক নকশায় সাজানো থাকে এই প্লেট। দেওয়ালে লাগালে একটা রাজকীয় চরিত্র ফুটে ওঠে। অনেকগুলো তামার প্লেট না লাগিয়ে একটা বড় প্লেট লাগাতে পারেন। অন্যরকম লাগবে ঘরটা। কাচের প্লেটে গ্লাস পেন্টিং করে নিন। গোটা ঘরের চরিত্রই বদলে যাবে।
রং তুলির রূপ: আপনি কি আঁকতে পারেন? তাহলে ওয়াল পেন্টিং করুন ঘরের দেওয়ালে। অভিনব এবং ভিন্ন ধাঁচে সেজে উঠবে ঘরটা, কেবল আপনারই হাতের ছোঁয়ায়। সিনারি বা ফিগার যা ইচ্ছে আঁকুন। দেওয়ালের মাপ অনুযায়ী একাধিক ছবিও আঁকতে পারেন। অথবা ধরুন আপনার শিশু পুত্র বা কন্যার ঘরে আঁকিবুকি কাটতে চান, তার প্রিয় কার্টুনের চরিত্র দিয়ে ছবিতে গল্প লিখে ফেলুন দেওয়াল জুড়ে। রঙিন আর উজ্জ্বল দেখাবে গোটা ঘর।
ওয়ালপেপার: পছন্দসই ওয়ালপেপার লাগাতে পারেন ঘরের দেওয়ালে। কোনও একটা দেওয়ালে ওয়ালপেপার লাগিয়ে বাকিগুলো রং করে নিতে পারেন। বসার ঘরে সিনারি লাগান অথবা স্ট্রাইপ, জিওমেট্রিক শেপ ইত্যাদিও থাকতে পারে। নয়তো ফুলের নকশাও মানানসই এক্ষেত্রে। আবার রান্নাঘরে ফল, সবজি বা কিচেন থিমের ওয়ালপেপার লাগান। বাচ্চার ঘরে রূপকথার ছবিও রাখতে পারেন। এমন নানা থিমে সাজান ওয়াল পেপারের নকশা। মনে রাখুন ঘরের দেওয়ালের সাজগোজ বাড়ির চেহারা বদলে দিতে পারে। তবে তা যেন রুচিশীল ও ছিমছাম হয়। আর তা পরিষ্কার রাখা জরুরি। নাহলে সাজ যেমনই হোক না কেন, তা খুলবে না।