হঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ
সত্যি কি ভালোবাসার সঙ্গে মিতে পাতিয়ে এগিয়েছে এই দেশ? নাকি মনুষত্বের নিরিখে পিছিয়ে যাচ্ছে? পিছিয়ে যাওয়া যাক ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে। যখন দিল্লির মসনদে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর। সেই ১৬০০ থেকে ইতিহাসের হাত ধরে এগিয়ে আসা। সফর শেষে এসে একটাই উপলব্ধি— এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়।
পূর্বরঙ্গ নাট্যদলের সাম্প্রতিক প্রযোজনা— এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়। ১৯ এপ্রিল মঞ্চস্থ হওয়ার আগে শেষ মহড়ায় সাক্ষী হওয়া। নাট্যকার মলয় রায়ের মতে, ‘এটি কাব্য নাটক। নাটকের প্রয়োজনে অডিও-ভিস্যুয়াল ব্যবহার করা হয়েছে। দেশভাগ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, সাম্প্রতিক দাঙ্গা— প্রতিটির ক্লিপিংসকে যথোপযুক্ত ভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোই এক একটি চরিত্র হয়ে গেছে। ব্যবহার করেছি বিভিন্ন কবি, গীতিকারদের গান, কবিতা।’
নাটকের শুরু ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে। তখন জাহাঙ্গীর দিল্লির মসনদে। ব্রিটিশ হাত জোর করে অনুমতি চাইছে এদেশে বাণিজ্য করার। দৃশ্য বদল, সময় বদল। এবারে ব্রিটিশের সামনে নতজানু শেষ দিল্লিশ্বর, বাহাদুর শাহ জাফর। তিনি নাতিদের জীবন ভিক্ষা চাইছেন। তারপর! তারপর ভারতবর্ষের বুকে ব্রিটিশের প্রভুত্ব আর অত্যাচারের অধ্যায়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ভারতবাসী প্রতিবাদে সরব হতে শুরু করে। অবশেষে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর দেশ পেল স্বাধীনতা।
আমাদের এই দেশ ভালোবাসার দেশ। হুন, পাঠান, মোগল থেকে ব্রিটিশ যারাই এদেশে এসেছে, প্রত্যেককে ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিতে চেয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সেই ভালবাসাটাকেই চাপা দিয়ে সেই মাটিতেই পুঁতে দিয়ে যায় চারটি বিষের চারা। দেশভাগ, সাম্প্রদায়িকতা, দারিদ্র এবং রাজনৈতিক হিংসা। সেই বিষের চারা আজ মহীরুহ হয়ে গোটা দেশকে ঢেকে দিয়েছে।
‘এখনও দেখুন দেশভাগের দ্গদগে ঘা শুকোয়নি। দারিদ্রকে অতিক্রম করা গেল না। সাম্প্রদায়িকতার হাত ধরে দাঙ্গা, খুন, ধর্ষণ, বেড়েই চলেছে। আর এর সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক হিংসা, স্বার্থপরতা,’ জানালেন মলয়।
জাহাঙ্গীর থেকে বাহদুর শাহ, স্বাধীনতা, দেশভাগ হয়ে আজকের পাঞ্জাব, গুজরাট, গোধরা থেকে নন্দীগ্রাম, জঙ্গলমহল, মারিচঝাপি, মাওবাদী— টুকরো টুকরো কোলাজে সাজানো ফুটন্ত, উত্তপ্ত, ভারতবর্ষ নিয়ে ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়’।
সমগ্র নাটকটিকে এক গতিময় ছন্দময়তায় ধরে রাখার দায়িত্বটি সামলাচ্ছেন রোকেয়া। তিনি কখনও কথক, কখনও আবার চরিত্র। আবার কখনও আমার ভেতরের আমি।
নতুন দিনের নতুন ভারতবর্ষ গঠনের স্বপ্নে বিভোর এক নতুন আশার আলোয় যখন উদ্ভাসিত তাঁর চোখ, তখন সত্যি ভাবতে ইচ্ছে করে, এই দেশে আর দলাদলি নেই। সাম্প্রদায়িকতা নেই। আক্রান্ত হবার ভয় নেই। এক নতুন ভালবাসার দেশের স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে চায় পূর্বরঙ্গর এই নতুন প্রযোজনা।
মূল ভাবনা, নাটক, ভিডিও সহ সামগ্রিক পরিকল্পনায় মলয় রায়। নির্দেশনা, অভিনয়ে ও পোশাক পরিকল্পনায় রোকেয়া রায়। আবহ তীর্থেন্দু দত্ত, রূপসজ্জায় অমিত দাস, আলো শশাঙ্ক মণ্ডলের এবং মঞ্চ মদন হালদারের। ভিডিওগ্রাফি শুভদীপ চট্টোপাধ্যায়। অভিনয়ে সুনেত্রী, শম্পা, শৌভিক, উপদেশ, জ্যোতি, শুভ্রদীপ, তৃষ্ণা, প্রভাত, সঞ্জয়, অন্তরা, দেবীপ্রসাদ, জয়তী, জয়া, শ্রুতি, অনন্যা, দেবস্মিতা ও সৌরদীপ।
মঞ্চস্থ হবে আগামী ১৯ এপ্রিল, শুক্রবার, শিশির মঞ্চে, সন্ধে ৬-৩০এ।
অজয় মুখোপাধ্যায়