পরিবারের কারও শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা বৃদ্ধির যোগ। জরুরি কাজকর্ম সর্বপ্রথম করে ফেলার চেষ্টা করুন। ... বিশদ
হোমিওপ্যাথি ঘিরে অনেক মিথ। কারও বিশ্বাস সব সারিয়ে তোলা সম্ভব এই চিকিৎসায়। আবার কেউ ভাবেন, এর মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত কিছু নেই। ডাঃ প্রশান্ত ব্যানার্জি হোমিওপ্যাথিক রিসার্চ ক্লিনিক (পিবিএইচআরসি)-এর বর্তমান ডিরেক্টর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ইশা ব্যানার্জি। তাঁর দাদু ছিলেন ডাঃ প্রশান্ত ব্যানার্জি। প্রথমে দাদু ও পরে বাবা, দু’জনের কাছ থেকেই তিনি পেয়েছেন হাতেকলমে শিক্ষা। তারপর ২৩ বছর বয়স থেকে ইশা প্র্যাকটিস শুরু করেন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সঙ্গে ঐতিহ্য হয়ে জড়িয়ে আছে তাঁর পরিবারের নামটি। সেই কথাটি মনে রেখে পথচলা শুরু করেন ইশা। প্রথমে ডাঃ প্রশান্ত ব্যানার্জি হোমিওপ্যাথিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (পিবিএইচআরএফ)-এর ট্রাস্টি হন ২০১৯ সালে। আর ২০২২-এ ম্যানেজিং ট্রাস্টি। এখন ইশার পরিচালনায় পিবিএইচআরসি-তে দৈনিক ৪০০-৫০০ রোগীর চিকিৎসা করা হয়। এই রোগীদের কাছ থেকে কনসাল্টেশন ফি নেওয়া হয় না। স্বাস্থ্য পরিষেবা যাতে সহজে মানুষের কাছে পৌঁছয়, সেই লক্ষ্যেই কাজ এগতে আগ্রহী ইশা। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সুন্দরবনের সোনাখালিতে পিবিএইচআরসি-র শাখা খুলেছে গত বছর। আরও বেশি মানুষ যাতে হোমিও চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে উপকৃত হন, তার জন্য সবসময় সক্রিয় তিনি। ইতিমধ্যে বর্ধমান, কার্মাটাঁর, দুর্গাপুর, এবং কলকাতাতেও ২০টি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে প্রান্তিক মানুষদের জন্য। এছাড়াও দরিদ্র ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বার্ষিক দিন পালন করা হয় সংস্থার তরফে।
ইশা বলেন, ‘বিষয়টাকে আমরা বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই দেখি। সব কিছু সারিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আমরা কখনও দিই না। কিন্তু হোমিওপ্যাথি ওষুধে রিলিফ হয় অনেকটাই। অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে মিলেই আমরা কাজ করতে পারি। আমরা কোনও রোগীকে বলি না, যে শুধুই হোমিওপ্যাথি খান, প্রয়োজন পড়লেও অ্যালোপ্যাথি খাবেন না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও সেভাবে কাজ করি।’
হোমিওপ্যাথির প্রতি ভরসা কীভাবে অটুট রয়েছে মানুষের? ইশার বক্তব্য, ‘হোমিওপ্যাথির এমন অনেক গুণ আছে যা অ্যালোপ্যাথির নেই। যেমন আমাদের ওষুধে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। বলা ভালো এই ওষুধ আপনার কোনও ক্ষতি অন্তত করবে না। বরং রিলিফ-এর সন্ধান দেবে। অনেক রোগী জানতে চান, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বা এতে কোনও ক্ষতি হবে কি না? সবচেয়ে বড় ক্ষতি যদি কিছু হয়, তাহলে বলার যে এটা হয়তো কোনও কাজই করবে না। তার বেশি কিছু হবে না। সেক্ষেত্রে আপনি রিলিফ পাবেন না। কিন্তু ক্ষতিও হবে না।’
তাঁদের ক্লিনিকে প্রচুর রোগী আসেন। কোনও বিজ্ঞাপন নয়, মানুষের মুখে মুখেই প্রচারের সুবাদে। অনেকরকম মেডিক্যাল কেস রয়েছে যেখানে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাওয়ার উদাহরণ রয়েছে। মহিলাদের পিসিওডি (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ), অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গলব্লাডার ইত্যাদি নানা সমস্যায় অনেক ক্ষেত্রেই যেখানে জটিলতা অস্ত্রোপচার অবধি গড়ায় না, সেখানে হোমিও ওষুধে রোগ নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সম্ভব। ইশা বলছেন, এই যুগের জনে জনে যে সমস্যা হচ্ছে, তা হল ফ্যাটি লিভার। হোমিওপ্যাথিতে এর জন্য খুব ভালো ওষুধ রয়েছে। বাঙালিদের চিরকালীন সমস্যা গ্যাস, বদহজম, গ্যাসট্রাইটিস। এতেও খুব কাজ দেয় হোমিওপ্যাথি।
এই চিকিৎসায় অনেক বেশি সময় লাগে, এই অভিযোগও তো করেন কেউ কেউ? ইশা বলেন, ‘আমার এটা মনে হয় না, কারণ রোগের পরিস্থিতির উপরে বিষয়টা নির্ভর করে। খুব সিরিয়াস কোনও রোগ, অনেক দিন ধরে ভুগছেন, এমন যদি কিছু হয় তাহলে সেটা যেতে সময় তো লাগবেই। মাথাব্যথা, সর্দি কাশি জ্বর ইত্যাদি বরং অনেক দ্রুত সেরে যায় হোমিওপ্যাথি করালে। কোথাও ব্যথা পেলে, অ্যালার্জি থাকলে বাচ্চাদের জন্য হোমিওপ্যাথি খুব ভালো। অনেক বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতেও সাহায্য করে হোমিওপ্যাথি। অ্যালার্জির ক্ষেত্রে দু’তিন মাসে সর্দি কাশি লাগার ধাতটাই অনেক কমে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সময় লাগে কারণ রোগের একেবারে মূল পর্যন্ত পৌঁছে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হয়।’
টানা চিকিৎসার পর রোগ কমে গেল। কিন্তু আবার বছর কয়েক পরে ফিরে এল, এমন কী হয়? ‘রোগের উপরেই সেটা নির্ভর করে। যেমন পাইলস বা অর্শের সমস্যা। এতে অপারেশন করার কথাই বলেন ডাক্তারবাবুরা। কিন্তু তাঁরা এটাও বলেন যে পাইলস ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।’ ইশার কথায়, ‘অর্শের ক্ষেত্রে আবার হোমিওপ্যাথি করালে এই রোগের প্রকোপ অনেকটা কমানো যায়। ওষুধ নিয়মিত খেলে ফিরে আসার সম্ভাবনাও কমে।’
এই চিকিৎসায় আগ্রহ কি পরিবারের কারণেই? ‘আমার দাদু এবং বাবা যখন চিকিৎসা করতেন, আমি সেখানে বসতাম। আট বছর বয়স থেকে দেখেছি তাঁদের চিকিৎসা পদ্ধতি। সেকেন্ডহ্যান্ড জ্ঞান তাই ভালোই পেয়েছি বলা চলে! অভিজ্ঞতালব্ধ চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক কাজে দেয়। দাদু বলতেন, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগ ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেকাংশে কম। সার্জারি করেও অনেক কিছু আবার ফিরে আসে।’
সুন্দরবনে এখন কাজ করছে পিবিএইচআরসি। ইশা জানালেন, সেখানে সেবাই লক্ষ্য। এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ফলে তাঁরও জ্ঞান বাড়ছে। ওখানকার মানুষের গা-হাত পা ব্যথা একটা বড় সমস্যা। আমাদের ওষুধ ভালো কাজ করছে ওই রোগীদের উপরে। আগে ওই এলাকার বাসিন্দারা অনেক বেশি পেনকিলার খেতেন। এখন কিন্তু তাঁদের আর পেনকিলার লাগছে না। আর পেনকিলার খেতে খেতে ওদের বয়সকালে কিডনির সমস্যা হতো। সেটাই কমানোর চেষ্টা করছি আমরা।’