ব্যবসায়িক কাজকর্ম ভালো হবে। ব্যবসার প্রসারযোগও বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষায় সন্তানের বিদেশ গমনের সুযোগ আসতে পারে। গৃহশান্তি ... বিশদ
মোগল ইতিহাসের অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে জাহাঙ্গির আর নূরজাহানের কাহিনি। বিলাসী সম্রাট জাহাঙ্গীর প্রথম জীবনে আকবরের হারেমের নর্তকী আনারকলিকে ভালোবেসে নির্বাসিত হয়েছিলেন লাহোরে। ইতিহাস বলছে, সেখানেই মির্জা গিয়াস বেগের কন্যা মেহেরুন্নিসার প্রেমে পড়েন যুবরাজ সেলিম। আকবর সেই প্রেমকে মান্যতা দেননি। আকবরের নির্দেশে মেহেরের সঙ্গে জায়গিরদার আলি কুলি খানের বিয়ে হয়। সেলিম ভুলতে পারেননি মেহেরকে। ফলে সিংহাসনে আরোহণের পরেই ভাই কুতুবউদ্দিনকে দিয়ে মেহেরুন্নিসার স্বামী আলি কুলি খান ওরফে শের আফগানকে হত্যা করে মেহেরুন্নিসা ও তাঁর মেয়ে লাডলি বেগমকে নিয়ে আসেন নিজের হারেমে। হাজারো শর্ত ও বাধাবিপত্তির পর নিকাহ হয় জাহাঙ্গির আর মেহেরের। সম্রাট জাহাঙ্গীর মেহেরুন্নিসার নতুন নামকরণ করেন ‘নূরজাহান’ অর্থাৎ ‘জগতের আলো’।
পিতা আকবরের সঙ্গে থাকতে থাকতে সম্রাট জাহাঙ্গিরেরও শিকার এবং হাতির লড়াইয়ে আসক্তি তৈরি হয়। আর দেখাদেখি নূরজাহানেরও হাতির লড়াইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। নূরজাহান জাহাঙ্গিরের সঙ্গে যেমন হাতির লড়াই দেখতে বসতেন, তেমনই শিকারেও যোগ দিতেন। কিন্তু প্রথমদিকে তিনি শিকার করতে পারতেন না। ভয় পেতেন। কীভাবে তিনি ভয় কাটিয়ে একজন দক্ষ শিকারি হয়ে উঠলেন, আজ সেই গল্প।
একদিন শিকারে বের হয়েছেন জাহাঙ্গির আর নূরজাহান। সঙ্গে মোগল রক্ষীবাহিনী। জাহাঙ্গির দিনের বেশিরভাগ সময়ই নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন। আর দুপুরে নাক ডেকে ঘুমাতেন। তিনি আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘গোটা দুই কাবাব আর নূরজাহানকে পেলেই আমার চলে যাবে।’ এই কথার অন্যথা শিকারেও হতো না।
যথারীতি শিকারে গিয়েও অভ্যেশবশত দুপুরে ঘুমিয়ে পড়লেন জাহাঙ্গির। তাঁর প্রথম স্ত্রী মানবাইও সেবার শিকারে সঙ্গী হয়েছিলেন। রক্ষীবাহিনী একটি বিশাল বাঘ পাকড়াও করে বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছিল। হঠাৎ হল কী বাঘ বেড়া ভেঙে এগিয়ে এল জাহাঙ্গিরের তাঁবুর দিকে। জাহাঙ্গির তখন নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। বাঘের গর্জনে রানি মানবাই সঙ্গে সঙ্গে উঠলেন ও জাহাঙ্গিরের পাশে পড়ে থাকা বন্দুক তুলে গুলি ছুড়লেন। রাজপুত রানির লক্ষ্য স্থির, গুলি একেবারে বাঘের কপালে। বাঘ এক গুলিতেই কুপোকাত।
জাহাঙ্গির গুলির শব্দে ধড়ফড় করে উঠে দেখলেন মানবাইয়ের হাতে বন্দুক আর দূরে নূরজাহান ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে। জাহাঙ্গির ওঠার পর নূরজাহান কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলেন জাহাঙ্গিরকে। জাহাঙ্গির মানবাইয়ের প্রচুর তারিফ করলেন। তাঁর সামনে মানবাইয়ের তারিফ নূরজাহান ভালোভাবে নিলেন না।
রাজপুত ও মোগল সেনাবাহিনীতে সম্রাট পত্নীদের ও অভিজাত মহিলাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। বিশেষ করে তির ও বন্দুক ছোড়া শেখানো হতো। এই ঘটনার পর নূরজাহান তালিম নেওয়া শুরু করলেন। জাহাঙ্গির একটি হাতির দাঁতের কারুকার্য করা বন্দুক উপহার দিলেন নূরজাহানকে।
দেখতে দেখতে দু’বছর অতিক্রান্ত। আবার দলবল নিয়ে শিকারে বের হয়েছেন বাদশাহ। এবারেও সঙ্গী হয়েছেন নূরজাহান। একইভাবে জঙ্গলে বাঘ ঘেরার কাজ শুরু হল। এবার চারটি বিরাট আকারের বাঘকে ঘিরল রক্ষীরা। আর নূরজাহান ছ’টি গুলি ছুড়ে চারটি বাঘকে হত্যা করলেন। জাহাঙ্গির নূরজাহানের এই অব্যর্থ লক্ষ্য দেখে অবাক হলেন। পরে এক লক্ষ টাকার হীরের ব্রেসলেট উপহার দিলেন নূরজাহানকে।